মাদরাসা ঘুরে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া নারী চান সংসদে যেতে
২০ জানুয়ারি ২০১৯ ২২:১৬
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: যেখানে কখনো ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারিত হয়নি, জাতীয় সঙ্গীত যেখানে অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ, ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে শিক্ষা নেওয়া যারা মেনে নিতে পারেন না, সেই কওমি মাদসারায় জয় বাংলা ও মুক্তিযুদ্ধের গল্পের ফেরি করে বেড়ান দুঃসাহসী এক নারী। শুধু কওমি মাদরাসা নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মাদরাসায়ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিয়ে হাজির হন তিনি।
নাম তার জিনাত সোহানা চৌধুরী। পেশায় আইনজীবী হলেও ‘জয় বাংলা স্লোগান’ এবং মুক্তিযুদ্ধের গল্প ফেরি করে বেড়ান তিনি। নারীত্বের বাধাকে জয় করে সেখানকার ছাত্র-ছাত্রীদের শোনান বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের গল্প। ‘আমার সোনার বাংলা’ গান আর জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে মাদরাসা প্রাঙ্গণ। সেই নারী এবার যেতে চান সংসদে। তার কার্যক্রমকে ছড়িয়ে দিতে চান সারাদেশে।
জিনাত সোহানা চৌধুরী সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। ফরমে তিনি মাদরাসায়-মাদরাসায় ঘুরে মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী ফেরি করার কার্যক্রমের বর্ণনা দিয়েছেন সবিস্তারে।
জিনাত সোহানা চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশ থেকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল করার। প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘোষণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি মাদরাসাগুলোর শিক্ষার্থীদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিয়ে তাদের মূলধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার কাজে হাত দিই। গত তিনবছর ধরে আমি শুধু চট্টগ্রাম শহর নয়, গ্রামগঞ্জের মাদরাসাগুলোতে গিয়েছি। আমি মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের ধারায় নিয়ে আসার কাজ করে যাচ্ছি।’
সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়নের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন নারী হয়েও আমি মাদরাসায় যাচ্ছি। অনেকে যেখানে সাহস করেনি, আমি যাচ্ছি। আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার তৃণমূলের একজন কর্মী। যে কোনো রাজনৈতিক কর্মীর প্রত্যাশা থাকে, সংসদে গিয়ে মানুষের কথা বলার। আমিও মানুষের কথা বলার জন্য সংসদে যেতে চাই। পাশাপাশি মাদরাসায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে কাজ করছি, সেটা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই।’
ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা জিনাত সোহানা চৌধুরী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক। ‘সুচিন্তা বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের চট্টগ্রাম বিভাগের সমন্বয়কের দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। সেই সংগঠনের হয়েই বিভিন্ন মাদরাসায় কর্মসূচি পালন করেন তিনি।
বলা হয়ে থাকে, ধর্মভীরু জনগোষ্ঠীর বসবাস চট্টগ্রামে। সেই ধর্মভীরু জনপদের প্রত্যন্ত রাঙ্গুনিয়া উপজেলা থেকে জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত সাতকানিয়া উপজেলার বিভিন্ন মাদ্রাসায় গিয়েও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েছেন জিনাত সোহানা। সমস্বরে গেয়েছেন জাতীয় সঙ্গীত। প্রতি মাসে অন্তঃত একটি মাদরাসায় বড় আকারে কর্মসূচি পালন করেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
জিনাত সোহানা বলেন, ‘জঙ্গিবাদ দিয়ে শুরু করি, মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের বিপ্লবী স্লোগান জয় বাংলা এবং জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে শেষ করি। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। প্রথমদিকে শিক্ষকদের কাছ থেকে আপত্তি আসত। তাদের বুঝিয়ে রাজি করে আমি প্রোগ্রাম করে চলে আসি। আমার সঙ্গে পুলিশ, শিক্ষক, লেখক-সাহিত্যিকরাও মাদরাসায় যান।’
‘মানুষ হত্যা করে কেউ জান্নাতে যেতে পারে না- এই বক্তব্যটা আমি তুলে ধরি। জঙ্গিবাদকে না, বলানোর শপথ করাই। বেহেশতের পাসপোর্ট, জান্নাতের টিকেট দেওয়ার কথা বলে যারা ধর্মভীরু সরল মানুষকে বিভ্রান্ত করে তাদের বিরুদ্ধে সচেতন করছি। সুন্নিয়তে বিশ্বাসী এবং কওমী মাদ্রাসা- সবখানেই আমি যাচ্ছি।’
চট্টগ্রাম জেলা আদালতে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী জিনাত সোহানা চৌধুরীর বাড়ি রাউজান উপজেলায়।
সদ্যসমাপ্ত একাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার বিভিন্ন সংসদীয় আসনে গিয়ে ‘ডিজিটাল প্রচারণা’ চালিয়েও আলোচনায় এসেছিলেন তিনি। সন্ধ্যার পর জনবহুল বিভিন্ন স্পটে গিয়ে ডিজিটাল পর্দায় আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে জামায়াত-শিবিরের সহিংসতার চিত্র তিনি তুলে ধরেছেন।
‘আমি গতানুগতিক ধারার বাইরে রাজনীতি করতে চাই। আমি তারুণ্যের শক্তি নিয়ে রাজনীতির ময়দানে আছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে কর্মকাণ্ড সবসময় চালিয়ে যাব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওপর সারাদেশের মানুষের অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস। তিনি মন্ত্রিসভায়ও যেভাবে তরুণদের সামনে এনেছেন, ভবিষ্যতেও তারুণ্যের শক্তিকে তিনি অবশ্যই সামনে রাখবেন বলে আমার বিশ্বাস।’ বলেন জিনাত সোহানা চৌধুরী।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই