Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছিনতাইয়ের কৌশল গল্পকেও হার মানায়


২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৯:০৮

।। জামশেদ নাজিম, অতিথি প্রতিবেদক ।।

ঢাকা: বেশ কয়েকদিন আগের কথা। লামিয়া (ছদ্মনাম) সন্ধ্যার পর মিরপুর থানার সামনের রাস্তা দিয়ে রিকশায় যাচ্ছিলেন। পথের মাঝে তিন যুবক রিকশার গতিরোধ করে। তারা লামিয়াকে বলে, ‘আমরা একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজ করছি। দুস্থ ও গরীব মেয়েদের দৈনিক হাজিরা হিসাবে আমরা ৩০০ টাকা করে দিচ্ছি। আপু, আপনাদের বাসায় কাজের মেয়ে আছে না, তাহলে তার জন্য আপনি নিয়ে যান, প্লিজ।’ কিছুটা অপ্রস্তুত লামিয়া রিকশা থেকে নামেন, জানতে চান বিস্তারিত। এরই মধ্যে আরও দুজন যুবক ঘটনাস্থলে এসে জানায় আমরা দুজন ৬০০ টাকা নিয়ে আসলাম ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাদের।

বিজ্ঞাপন

এ দৃশ্য দেখে লামিয়ার গতিরোধকারীরা বলল, ‘আপু তাহলে আপনিও যান তাড়াতাড়ি।’ লামিয়াকে এসব কথা বলার সময় কথা বলার সময় যারা টাকা নিয়ে এসেছে বলে দাবি করেছে তারা হঠাৎ কথার ধরণ পাল্টায়। এক নতুন কৌশল অবলম্বন করে লামিয়াকে বললো, ‘আপু আপনার গলায়, কানে, হাতে স্বর্ণের অলংকার। আপনি এগুলো আপনার ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে তার পরে যান, তা না হলে ওরা আবার ভাববে আপনি অনেক বড়লোক তখন টাকা নাও দিতে পারে।’ কথাগুলো শুনে আকস্মিকতায় লামিয়া কিছুটা হঠচকিত হলেন। লোভে পড়লেন লামিয়া। নিজের গলার, হাতের, কানের স্বর্ণালকারগুলো খুলে ভ্যানিটি ব্যাগে রাখলেন। মুহূর্তের মধ্যেই একজন এসে ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়, বাকিরা তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে পালায়। লামিয়া জ্ঞান হারান।

তারপর থানা পুলিশের দ্বারস্থ হয়ে এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ঢাকা মাহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. শাহাজানের নেতৃত্বে গ্রেফতার করা হয় ওই ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য দলনেতা গৌতম রাজবংশী, মো. আব্দুস সালাম, সুব্রত কুমার ঘোষ, সুব্রত কুমার দত্ত, মাসুদ রানা, ও মো. মহিন।

বিজ্ঞাপন

যেভাবে ছিনতাইকারী হয় গৌতম ও শুভ: গৌতম প্রাথমিক শিক্ষা শেষে বাবার সঙ্গে সন্দেশ বিক্রি শুরু করে। বেশ ভালোই ছিল ব্যবসা। মিরপুরের ভাড়া বাসায় বসবাস করে আর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ সন্দেশ বিক্রি করতো। ছয় বছর আগে কারওয়ান বাজারে স্থায়ীভাবে ব্যবসা শুরু করে। এসময় মাঝেমধ্যে তার বড় ভাই আশিকের কাছ থেকে অল্প সন্দেশ নিয়ে বিক্রি করতো। দিন শেষে হাজার হাজার টাকা নিয়ে ঘরে ফিরতো।

আশিকের উপার্জন দেখে চিন্তায় পড়েন গৌতম। এভাবেই কেটে যায় অনেক মাস তারপর একদিন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় আশিক। জানতে পারে তার বেশি টাকার উপার্জনের রহস্য। গৌতম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আশিক তার কাছ থেকে সন্দেশ নিতো তাতে ওষুধ মেশানো থাকতো। ওই সন্দেশ খেয়ে পথচারীরা অজ্ঞান হয়ে পড়লে আশিক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পালিয়ে যেতো। বড় ভাই আশিকের এই পথে যাত্রা শুরু করে গৌতম। গত পাঁচ বছর ধরে ছিনতাই করে। এ পর্যন্ত তিনবার গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত গৌতম ১৪ সদস্যর ছিনতাই চক্রের দলনেতা ছিল। গৌতমের দলের অন্যতম সদস্য শুভ। কারওয়ান বাজরের ব্যাবসার সূত্রধরে গৌতমের সঙ্গে পরিচয়। ছিনতাই করার জন্য তাকে গৌতম আর্থিক লোভ দেখায়।

শুভর তথ্য অনুসারে চারবছর আগে মিরপুরের মুক্তবাংলা মার্কেটের সামনে গ্রাম থেকে আশা এক মহিলাকে টার্গেট করে ছিনতাই করে। প্রথম ছিনতাইয়ের টাকার পরিমাণ ছিলো ৪ হাজার টাকা ও একটি ছাতা। প্রথম দিন ভাগে পায় ৫০০ টাকা। পরের দিনই ছিনতাই করে ৩২ হাজার টাকা। ভাগে পায় ৬ হাজার টাকা, যেখান থেকে ২ হাজার টাকা বাবা-মাকেও দেয়।

শুভ জানায়, গত চার বছরে প্রতিদিন গড়ে দুটি করে ছিনতাই করে আসছিলো। তবে মাঝেমধ্যে বড় ছিনতাই করতে সক্ষম হলে দুই-তিনদিন বিশ্রাম নিত। শুভ এবারই প্রথম গ্রেফতার হয় ডিবির কাছে। ছিনতাই সম্পর্কে শুভ বলে, জেল থেকে এসে আর ছিনতাই করবে না। তবে যদি সাধারণ জনগণ লোভে না পড়েন তাহলে কেউ ছিনতাইয়ের কবলে পড়বে না। কারণ হিসেবে বলে প্রতিটি ছিনতাইয়ের কবলে পড়া মানুষগুলো লোভের ফাঁদে ফেলা হয়। পরে তারা ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. শাহজাহান বলেন, গ্রেফতাররা মূলত সবাই উঠতি বয়সি এবং মাদকাসক্ত। এরা সারারাত বাইরে ঘোরাফেরা করে এবং তাদের পরিকল্পনা মাফিক সুবিধাজনক স্থানে ডাকাতি বা ছিনতাই করে। দিনের বেলায় নিজেদের বাসা অথবা একজন আরেকজনের বাসায় ঘুমায়। ছিনতাইকারীরা কখনো মোটরসাইকেল, কখনো প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাসে করে পথচারী বা রাস্তায় অপেক্ষমাণ ব্যক্তির কাছ থেকে মূল্যবান সামগ্রী, ভ্যানিটি ব্যাগ, গলার চেইন, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।

সারাবাংলা/জেএন/এমআই

ছিনতাই

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর