হিলিতে সৌর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত গ্রামীণ জনপদ
২৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৯:৫১
।। সোহেল রানা, লোকাল করেসপন্ডেন্ট ।।
হিলি, দিনাজপুর: দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোও এখন আলোকিত। বছর তিনেক আগেও এসব এলাকায় বিদ্যুতের আলোর দেখা পাওয়া ছিল কষ্টকল্পনা। সেই পরিস্থিতি এখন বদলে গেছে সোলার প্যানেলের উপস্থিতিতে। গ্রামের রাস্তাঘাট ও ছোট-বড় বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ সবখানেই এখন জ্বলছে সৌর বিদ্যুতের বাতি।
হরিহরপুর বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, আগে আমার দোকানে বিদ্যুতের সংযোগ ছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ চলে গেলে বিপাকে পড়তে হতো। সোলার আসার পর সেই অবস্থা বদলে গেছে। এখন কখন বিদ্যুৎ আসে, কখন যায় বুঝতেই পারি না। ফলে দোকানে কেনাবেচাও বেড়েছে।
কাদিপুর গ্রামের আনিসুর রহমান বলেন, আগে রাস্তাঘাটগুলো অন্ধকার ছিল। ফলে দুর্ঘটনাসহ অপরাধের আশঙ্কাও কাজ করত সবসময়। এখন আর তেমন পরিস্থিতি নেই। রাস্তাঘাটে চলাফেরা করলে মনে হয় যেন দিনের বেলাতেই ঘুরে বেড়াচ্ছি।
সাধুরিয়া গ্রামের রমেশ চন্দ্র বলেন, আগে তো রাস্তাঘাটে চলতে চোর-ডাকাতের ভয় কাজ করত। এখন আর করে না। কারণ সরকার এখন সোলার বাতি দিয়েছে। দিন নাই, রাত নাই এখন সবসময় আলো জ্বলে।
আলীহাট ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি গোলাম মওলা জানান, এ বছর ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে হরিহরপুর বাজার, মনসাপুর বাজার, সাধুরিয়া বাজার, জাংগই বাজার, বাওনা বাজারসহ ইউনিয়নের প্রতিটি স্থানে সরকারি উদ্যোগে স্ট্রিট লাইট বসানো হয়ছে। ফলে এখন এসব এলাকার চিত্র পাল্টে গেছে। আগে সন্ধ্যা হলেই মানুষকে ঘরে ফিরতে হতো। এখন গভীর রাত পর্যন্তও বাজারে মানুষের সমাগম চোখে পড়ার মতো। সোলার থাকায় বিদ্যুৎ গেলেও কোনো সমস্যা হয় না।
আলীহাট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গোলাম রসূল বাবু জানান, আমার এলাকায় রাস্তার পাশে ও গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে আলো পৌঁছানো হচ্ছে। এছাড়াও মাদ্রাসা ও মসজিদগুলোতে একটি করে সোলার প্যানেল দেওয়া হয়েছে, যেন এসব প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুতের সাশ্রয় হয়। ফলে এখন রাতের আঁধারেও মানুষ নিরাপদে চলাচল করছে। রাস্তাগুলো আলোকিত হওয়ায় অপরাধ কমে এসেছে। রাত নামলেই আলোয় আলোকিত হচ্ছে গ্রামীণ জনপদ।
হাকিমপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদফতরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির আওতায় সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে সড়ক বাকি জ্বালানোর ব্যবস্থা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের যে লক্ষ্য নিয়েছেন, তারই আওতায় সারাদেশে গ্রামেগঞ্জে সৌর বিদ্যুতের প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০১৬ সাল থেকে এ উপজেলার বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সোলার স্থাপন এবং রাস্তায় স্ট্রিট লাইট বসানোর কাজ শুরু হয়।
তিনি আরও বলেন, গত অর্থবছর পর্যন্ত ২ কোটি ৪৩ হাজার ৮২৭ টাকা ব্যয়ে এ উপজেলায় ২৬৯টি সোলার ও স্ট্রিট লাইট বসানো হয়েছে। সৌর বিদ্যুতের কারণে একদিকে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হচ্ছে, অন্যদিকে গ্রামের মানুষ অন্ধকার থেকে আলোয় এসেছে।
সারাবাংলা/টিআর