Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নতুন মুদ্রানীতিতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে প্রাধান্য


২৭ জানুয়ারি ২০১৯ ২২:৫২

।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে গুরুত্ব দিয়ে চূড়ান্ত করা হয়েছে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মেয়াদের নতুন মুদ্রানীতি। এতে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে, যার প্রবৃদ্ধি সর্বশেষ মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রার সমান বা কাছাকাছি নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। এছাড়াও নতুন মুদ্রানীতিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহত রাখা, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার বিষয়েও থাকছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। অন্যদিকে, মূল্যস্ফীতি সহনীয় রেখে একক ব্যক্তিকে বড় বড় ঋণ দেওয়ার পরিবর্তে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই) খাত এবং নারী উদ্যেক্তাদের জন্য ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৩০ জানুয়ারি চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি ’১৯ – জুন ’১৯) নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হচ্ছে। ওই দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির অনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যালয়ে এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের নতুন মুদ্রানীতিতে খুব বেশি পরিবর্তন আসছে না। সর্বশেষ যে মুদ্রানীতি (জুলাই ’১৮- ডিসেম্বর ’১৮) যে অবস্থায় ছিল, নতুন মুদ্রানীতিও অনেকটাই তাই থাকছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, এবারের মুদ্রানীতিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধির বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ ধরা হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনি বছর হওয়ায় এবং আরও বিভিন্ন কারণে সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়নি। এবারও বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আগের মতোই লক্ষ্যমাত্রাই নির্ধারণ করা হচ্ছে। আশা করছি, এবার বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

বিজ্ঞাপন

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, এবারের মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতির দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এটাও সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। এছাড়াও বেসরকারি খাতে একই ব্যক্তিকে বড় বড় ঋণ দেওয়ার পরিবর্তে এসএমই খাত, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও নারী উদ্যেক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এই নীতির ফলে সবার কাছে উন্নয়নের সুফল পৌঁছানো সম্ভব হবে এবং সবাই দেশের উন্নয়নে অংশ নিতে পারবেন।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ যেন অব্যাহত থাকে এবং প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে যেন কোনো সমস্যা না হয়, সে বিষয়টিতেও নজর দেওয়া হবে মুদ্রানীতিতে। পাশাপাশি মুদ্রানীতিতে এমন কিছু থাকবে, যেন খেলাপি ঋণ কমিয়ে সহনীয় মাত্রায় রাখা যায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, নতুন মুদ্রানীতির মাধ্যমে ব্যাংকের তারল্য প্রবাহ বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ থাকছে। বিশেষ করে ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা থাকবে। একইসঙ্গে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর বিষয়েও নতুন মুদ্রানীতিতে জোর দেওয়া হয়েছে। দেশে দীর্ঘ সময় ধরে বিনিয়োগে মন্দা কাটাতে এবারের মুদ্রানীতিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্থে তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো লক্ষ্য অনুযায়ী বিনিয়োগ করতে পারেনি। ফলে অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর কৌশল থাকছে।

সূত্র জানায়, সর্বশেষ ঘোষিত মুদ্রানীতিতে (জুলাই ’১৮ থেকে ডিসেম্বর ’১৮) বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ওই মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। কিন্তু এই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত হয়েছে মাত্র ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। এটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১ দশমিক ৪২ শতাংশ কম। এতে করে একদিকে ব্যাংকের আমানতের সংগ্রহ প্রবাহ কমছে, বিপরীতে বেড়েছে খেলাপি ঋণ। ফলে কমে যাচ্ছে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা। ফলে বেড়ে যাচ্ছে বিনিয়োগ ব্যয়ও। এছাড়াও রাজস্ব আদায়েও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে বেড়ে যাচ্ছে সরকারের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ। নতুন মুদ্রানীতিতে এ বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার ধারণা, এবারের মুদ্রানীতি আগের (জুলাই ’১৮ থেকে ডিসেম্বর ’১৮) মুদ্রানীতির মতোই থাকবে। নতুন বছরের মুদ্রানীতিতে খুব একটা পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না। তবে মূল কথা হলো— সর্বশেষ মুদ্রানীতিও বাস্তবায়ন হয়নি। বিশেষ করে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি মুদ্রানীতিতে যা ছিল, তার চেয়ে অনেক কম রয়ে গেছে।

মির্জ্জা আজিজুল বলেন, ব্যাংকের সুদের হার কিছুটা কমেলেও তা এক অঙ্কে আসেনি। এই ক্ষেত্রে সর্বশেষ মুদ্রানীতি কেন বাস্তবায়ন করা হয়নি, তা বিশ্লেষণ করে নতুন মুদ্রানীতিতে তার প্রতিফল থাকতে হবে। বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে কী করা যেতে পারে, তা করা উচিত। আমি আশা করি, নতুন মুদ্রানীতিতে সেই দিকনির্দেশনা থাকবে।

সাবেক এই অর্থ উপদেষ্টা বলেন, খেলাপি ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করছে। দেখা যাক কী হয়। তবে আমি মনে করি, মূলত গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যে মুদ্রানীতি ছিল, নতুন মুদ্রানীতিও প্রায়  একইরকম থাকবে।

নতুন মুদ্রানীতিতে কোনো পরিবর্তন প্রয়োজন রয়েছে কি না— এমন প্রশ্নের  জবাবে মির্জ্জা আজিজ বলেন, পরিবর্তনটা মুদ্রানীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত না, তবে মুদ্রানীতিতে পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। যেমন— ব্যাংকের খেলাপি ঋণ উদ্ধার। এটা উদ্ধার করতে না পারলে ব্যাংকগুলোর আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যায়, ঋণ দেওয়ার প্রবৃদ্ধি কমে যায়। কাজেই খেলাপি ঋণ মুদ্রানীতির বিষয় না হলেও মুদ্রানীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।

তিনি বলেন, বেসরকারি খাতের ঋণের সঙ্গে বিনিয়োগের সর্ম্পক আছে, বিনিয়োগের সঙ্গে জিডিপি প্রবৃদ্ধির সর্ম্পক আছে। আবার মুদ্রানীতির সঙ্গে প্রবৃদ্ধি সম্পর্কিত। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে মুদ্রানীতির ওপর মূল্যস্ফীতি খুব একটা প্রভাব ফেলে না। বিশেষ করে আমরা আমদানি-নির্ভর দেশ হওয়ায় মূলত বিশ্ববাজারে বিভিন্ন পণ্যের মূল্য কী রকম দাঁড়াচ্ছে এবং এক্সচেঞ্জ রেট কী হচ্ছে, সেটার ওপর আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতিটা নির্ভর করে।

উল্লেখ্য, দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভারসাম্য রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বছরে দুই বার মুদ্রানীতি ঘোষণা করে। ছয় মাস অন্তর এই মুদ্রানীতির একটি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে, অর্থাৎ জুলাই মাসে এবং অন্যটি জানুয়ারি মাসে প্রণয়ন করা হয়।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর