রিজার্ভ চুরি: ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা
২৮ জানুয়ারি ২০১৯ ১২:১২
।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার রিজার্ভ চুরির ঘটনায় অবশেষে মামলা করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই মামলা দায়ের করা হবে। তবে কাদের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হবে তা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে, আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ও রিজার্ভ চুরির ঘটনায় নিয়োগ করা আইনজীবিরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
রোববার (২৮ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের জরুরী সভায় রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সভায় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কে মামলা দায়ের করার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পেয়ে রোববার রাতে তিন সদস্যর একটি প্রতিনিধি দল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ঢাকা ছেড়েছেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম সোমবার সকালে সারাবাংলাকে বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মামলার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মামলা করতে রোববার রাতেই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, মামলাটি কাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হবে তা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে ‘ল’ কোম্পানি রয়েছে তারাই সিদ্ধান্ত নেবে মামলাটি কাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হবে। নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভের বিরুদ্ধে নাকি অন্য কারো বিরুদ্ধে মামলা করা হবে এই সিদ্ধান্ত নেবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ল’ ফার্ম। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলা কাদের বিরুদ্ধে করবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। মূলত আইনজীবির পরামর্শ নিয়েই মামলা দায়ের করা হবে।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে নেয় হ্যাকাররা। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তিন বছর পূর্ণ হতে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এই অর্থ চুরি করা হয়। চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২ কোটি ডলার এবং বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার প্রথমে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় অবস্থিত রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন’র (আরসিবিসি) একটি শাখায় পাঠানো হয়। পরবর্তীতে এই অর্থ আরসিবিসি থেকে চলে যায় ফিলিপাইনের জুয়ার আসরে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হওয়ার ১০ মাসের মধ্যে ৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার ফেরত আনা হয়। এর মধ্যে রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার আগেই ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কা থেকে ২ কোটি ডলার ফেরত আনা হয়। একই বছরের ১২ নভেম্বর ফিলিপাইন থেকে আরো ১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার ফেরত আনা হয়েছে। পরবর্তী ২ বছরের বেশি সময়ে আর কোনো টাকা উদ্ধার করা যায়নি। ফলে ফিলিপাইনে থাকা অবশিষ্ট ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার (৫৫৭ কোটি টাকা) এখনো ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। কবে আনা যাবে কিংবা আদৌ আনা যাবে কিনা তা নিয়েও নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছে না। আর এই অর্থ ফেরত আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন মামলা করতে যাচ্ছে। কিন্তু কাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে গত তিন বছরে তা চূড়ান্ত করতে পারেনি। ফলে এখনো এক ধরনের অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সরকারের তদন্ত কমিটির প্রধান ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার প্রতিবেদনে পরিষ্কারভাবে ফিলিপাইনের আরসিবিকে দায়ী করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিবেদনে আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছে। অথচ কেউ কেউ নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলেছেন। এটা ভুল বরং তাদের সহায়তায় আন্তর্জাতিক আদালতে আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করলে আমরা জিতবো এবং চুরির পুরো টাকা ফেরত পাওয়া সম্ভব। তিনি আরো বলেন, রিজার্ভ চুরির বিষয়ে আরসিবিসি যে জড়িত তা ফিলিপাইন সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করলো অবশ্যই আমরা জিতবো এবং টাকা ফেরত পাব। তিনি বলেন, মামলা করার ক্ষেত্রে যাতে আমরা ভুল না করি। যাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা দরকার। তাদের বিরুদ্ধেই করতে হবে।’
সারাবাংলা/জিএস/জেএএম