কার্যকর মানবাধিকার কমিশন দেখতে চায় জাতিসংঘ
৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ২১:১২
।। এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে কার্যকর জাতীয় মানবাধিকার কমিশন দেখতে চায় জাতিসংঘ। পাশাপাশি কার্যকরভাবে কাজ করার জন্য সংস্থাটির আইনি সংস্কার ও ক্ষমতা বাড়াতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একাধিক সূত্র জানায়, আইনি কাঠামোর দুর্বলতার কারণে সংস্থাটি কাজ করতে পারছে না। লোকবল সংকটের পাশাপাশি রয়েছে আর্থিক সংকট। সংস্থাটির স্বাধীনভাবে অর্থ খরচের ক্ষমতা নেই। সরকারি লোকদের বিরুদ্ধে অনুমোদন ছাড়া তদন্ত করার ক্ষমতা নেই। অনেক স্পর্শকাতর বিষয়েই কমিশন চাইলেও ক্ষমতা না থাকার কারণে কিছুই করতে পারছে না। বিষয়গুলো একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে আবারও বিষয়গুলো জানানোর জন্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কমিশনকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। কমিশনকে শক্তিশালী করতে হলে কিছু আইনি সংস্কার প্রয়োজন।’
কাজী রিয়াজুল হক আরও বলেন, ‘আইনের কোন কোন জায়গায় সংস্কার প্রয়োজন, তা উল্লেখ করে আমরা আগের সরকারকে লিখেছিলাম। এর মধ্যে আবার নতুন সরকার গঠন করা হয়েছে। আমরা এই সরকারকে এই সংস্কারের বিষয়ে আবারও লিখব।’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবার প্রকৃত অর্থেই শক্তিশালী হবে, এমন আশা প্রকাশ করে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘কমিশনকে শক্তিশালী করতে সরকারের পক্ষ থেকে কথা দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের ইশতেহারেও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরও শক্তিশালী-কার্যকর করার কথা বলা হয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলব। ’
এই বিষয়ে রিয়াজুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলব, ইশতেহারে আপনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা বাস্তবায়ন করলে আপনার ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে অগ্রগতি হয়েছে, সেই সঙ্গে মানবাধিকার (সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস) পরিস্থিতির আরও অগ্রগতি হলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে আরও উজ্জ্বল হবে।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশে জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো সারাবাংলাকে বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এই লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম লক্ষ্য ১৬ অর্জন করতে হবে। এই ১৬ নম্বর লক্ষ্যটি হচ্ছে সুশাসন বিষয়ে। সুশাসন নিশ্চিত না হলে টেকসই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব না।’
আরও পড়ুন: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯৩২ দফতরিকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের নির্দেশ
মিয়া সেপ্পো সারাবাংলাকে আরও বলেন, ‘সুশাসন নিশ্চিতের অনেক বিষয়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, মানবাধিকার ইস্যু। এ জন্য নিরপেক্ষ ও যথার্থ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠন করতে হবে।’
মানবাধিকার বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকের সঙ্গে আলাপ হয়েছে জানিয়ে মিয়া সেপ্পো সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই বিষয়ে সরকারকে সহযোগিতার জন্য জাতিসংঘ প্রস্তুত রয়েছে।’
জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দুই ধরনের সমস্যা রয়েছে। একদিকে সংস্থাটির আইনে দুর্বলতা রয়েছে, অন্যদিকে কাজ করার জন্য এই সংস্থাটিকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। বিশেষ করে সংস্থাটিকে তদন্ত ও প্রসিকিউশনের ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। সাধারণত তদন্ত ও প্রসিকিউশনের ক্ষমতা ছাড়া এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করতে পারে না।’
ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্বের গুণাবলিতে ঘাটতি রয়েছে। যে কারণে প্রায়ই দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারে না। যতটুকু আইনি সামর্থ্য রয়েছে, সেটুকুও প্রয়োগ করতে পারে না। যেমন, সুবর্ণচরের ঘটনায় সংস্থাটি বিতর্কিত ভূমিকা সৃষ্টি করেছে।’
সরকারের উচিত এই সংস্থার আইনগুলো যথাযথ সংস্কার করা মন্তব্য করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এই সংস্থাটির দুই দিক থেকেই উন্নয়নের বা ইতিবাচক পবির্তন করার প্রয়োজন রয়েছে। কমিশনের যে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্টভাবে কাজ করার সামর্থ্য রয়েছে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। ’ ন্যায় বিচারের স্বার্থে সংস্থাটিকে শক্তিশালী করা ও যথার্থ ক্ষমতা দেওয়া সরকারের উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সারাবাংলা/জেআইএল/এমএনএইচ