মানুষের মতো নদ-নদীও পাবে আইনি অধিকার
৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ২২:৪১
।। আব্দুল জাব্বার খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: মানুষের মতো এবার নদ-নদীও পাবে আইনি অধিকার। অবৈধ নদী দখলদারদের কবল থেকে রক্ষা করতে তুরাগ নদীকে ‘লিগ্যাল পারসন’ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। তুরাগ নদী রক্ষায় একটি মামলার রায়ে বুধবার (৩০ জানুয়ারি) বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ ঐতিহাসিক এ ঘোষণা দেন।
উল্লেখ্য, এদিন রায় পড়া শেষ হয়নি। বাকি অংশ বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে।
এই রায়ের মাধ্যমে জীবন্ত সত্তা হিসেবে মানুষ যেমন সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করে, আদালতের এই আদেশের মধ্যে দিয়ে নদীর ক্ষেত্রেও তেমন কিছু মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হলো।
ঘোষিত রায়ের অংশে আদালত বলেছেন, আইনের চোখে ব্যক্তি দুই ধরনের, ন্যাচারাল পারসন ও লিগ্যাল পারসন। একজন মানুষ ‘নেচারাল পারসন’ হিসেবে যেসব আইনি সুবিধা ভোগ করেন, জীবন্ত সত্তা না হলেও ‘লিগ্যাল পারসন’-এর ক্ষেত্রে বেশ কিছু আইনি অধিকার প্রযোজ্য হয়।
রায়ে আরও বলা হয়, অবৈধ দখলদারদের হাতে প্রতিনিয়তই কম-বেশি নদী দখল হচ্ছে। অবৈধ স্থাপনা তৈরি করায় সংকোচিত হয়ে পড়ছে নদী। এসব বিষয় বিবেচনা করে তুরাগ নদীকে লিগ্যাল পারসন হিসেবে ঘোষণা করা হলো।
আদালত বলেন, নাব্যতা ও বেদখলের হাত থেকে নদী রক্ষা করা না গেলে বাংলাদেশ তথা মানবজাতি সংকটে পড়তে বাধ্য।
এই প্রসঙ্গে মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘তুরাগ নদী নিয়ে বিচারিক তদন্তে যে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মিলে প্রায় ৩৬টি অবৈধ দখলের চিত্র বিভিন্ন রিপোর্টে এসেছিল। এই ব্যাপারেই আমাদের শুনানিটা শুরু হয়েছিল। আমরা বলেছিলাম, তুরাগ নদীর তীর থেকে এ সমস্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা প্রয়োজন। এটি দীর্ঘদিন শুনানি হয়েছে। আদালত আজ রায় দেওয়া শুরু করেছেন। ’ তিনি আরও বলেন, ‘রায়ে ইতোমধ্যেই আদালত আমাদের যুক্তিতর্কগুলো উপস্থাপন করে একটি জায়গায় বলেছেন, সেটা হলো আমাদের পাশের দেশ ভারতে নদীকে লিগ্যাল পারসন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের এখানেও কিন্তু বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এই দাবি উঠেছে।’
এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘আদালত দেশের নদীগুলোকে জীবন্ত সত্তা ও লিগ্যাল পারসন হিসেবে ঘোষণা করছেন। এর মধ্য দিয়ে মানুষের মতো নদীরও মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হলো।’ তিনি বলেন, ‘এছাড়া দেশের নদ-নদীগুলো রক্ষার ব্যাপারে বারবার যেন আমাদের মামলা করতে না হয়, সেজন্য একটি রায়ের মাধ্যমে সমস্ত নদীরক্ষার একটা ডিকটেশন দেওয়া হবে বলেও আদারত জানিয়েছেন। ফলে যে রায় হচ্ছে, সেই রায়ের মাধ্যমেই সমস্ত নদী সংরক্ষণের জন্য একটা জেনারেল ডিরেকশন তারা দেবেন, যেন ভবিষ্যতে প্রত্যেকটা নদী রক্ষার জন্য আলাদা মামলা করতে না হয়। ’
মনজিল মোরসেদ আরও বলেন, ‘আদালত রায়ে প্রথমে নদীর গুরুত্বটা ব্যাখ্যা করেছেন। সেই গুরুত্বটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আমাদের দেশের অস্তিত্ব, মানুষের অস্তিত্বের গুরুত্ব বিবেচনা করেই নদী যেন কেউ দখল করতে না পারে, যেন নদীপ্রবাহ সঠিক থাকে সে বিষয়ে একটা ম্যাসেজ দিতে যাচ্ছেন আদালত। যেন ভবিষ্যতে আর যেন নদী দখলের মত সাহস তারা না করে।’
উল্লেখ্য, ‘তুরাগকে মৃত্যু ঘোষণা সময়ের ব্যাপার’ শিরোনামে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ডেইলি স্টার-এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে উম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশ রিট আবেদন করে। এরপর এ রিটের শুনানি নিয়ে আদালত কয়েক দফা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশসহ রুল জারি করেন। ওই রুলের দীর্ঘ শুনানি শেষে আজ থেকে ঘোষণা শুরু করেন আদালত।
সারাবাংলা/এজেডকে/এমএনএইচ