শিগগিরই অভিজিৎ হত্যা মামলার চার্জশিট
১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৪৬
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায় হত্যায় জড়িত ছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের ১২ সদস্য। এর মধ্যে একজন পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছে। আরও চার জনের সঠিক ঠিকানা-পরিচয় পাওয়া যায়নি। ফলে এই পাঁচ জনকে বাদ দিয়ে আনসার আল ইসলামের বাকি সাত জনকে অভিযুক্ত করে অভিজিৎ হত্যা মামলার চার্জশিট তৈরি করছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। তবে এর মধ্যেও একজনের নাম-ঠিকানা নিয়ে এখনও পুলিশ নিঃসন্দেহ নয়। তার সঠিক নাম-ঠিকানা না পেলে ছয় জনকে অভিযুক্ত করেই আগামী সপ্তাহে চার্জশিট দেবে মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এই ইউনিটটি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে সিটিটিসি উপকমিশনার মহিবুল ইসলাম সারাবাংলাকে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, মামলার তদন্ত কাজ শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে।
সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, অভিজিৎ হত্যায় জড়িতদের আটক করার পর তারা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের জবানবন্দি থেকে ওই হত্যাকাণ্ডে ১২ জনের জড়িত থাকার তথ্য বেরিয়ে আসে। এরা হলো— আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান মেজর (অব.) সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া, শরিফুল ওরফে মুকুল রানা, আরাফাত হোসেন, সেলিম ওরফে হাদী-২, শফিউল ইসলাম ফারাবী, আকরাম হোসেন, হাসান, সায়মন, সোহেল, আলি, অন্তু ও অনিক।
উপকমিশনার মহিবুল ইসলাম জানান, এই ১২ জনের মধ্যে সেলিম ওরফে হাদী-২, আলি, অন্ত ও অনিকের সঠিক নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি। ফলে চার্জশিট থেকে তাদের বাদ দিতে হচ্ছে। এছাড়া শরিফুল পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যাওয়ায় চার্জশিট থেকে তাকেও অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হবে।
এ হিসাবে যে সাত জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট তৈরি করা হচ্ছে, তারা হলো— মেজর (অব.) সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া, আরাফাত রহমান, মোজাম্মেল হোসেন সায়মন, আকরাম হোসেন ওরফে আবির, হাসান, আবু সিদ্দিক সোহেল ও শফিউর রহমান ফারাবি। এর মধ্যে আবার হাসানের নাম-ঠিকানা যাচাই করা হচ্ছে। নাম-ঠিকানা সঠিক হলে তাকেসহ সাত জনের নামে চার্জশিট দেওয়া হবে। আর নাম-ঠিকানা না মিললে ছয় জনের নামেই আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে।
অভিযুক্ত সিটিটিসি জানিয়েছে, অভিযুক্তদের মধ্যে মেজর জিয়া ও আকরাম হোসেন ওরফে আবিরকে পলাতক আসামি হিসেবে দেখানোর কথা রয়েছে চার্জশিটে। বাকি পাঁচ জন কারাগারে রয়েছে।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপকমিশনার বলেন, সিটিটিসির হাতে গ্রেফতার হওয়া মোজাম্মলে হোসেন সায়মন, আবু সিদ্দিক সোহেল, আরাফাত রহমান ও শফিউর রহমান ফারাবির মধ্যে আদালতে ফারাবি ছাড়া অন্য সবাই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
অভিজিৎ হত্যা মামলায় সিটিটিসির হাতে গ্রেফতার চার জন ছাড়াও র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল আরও সাত জন। এরা হলো— সাদেক আলী মিঠু, তৌহিদুর রহমান গামা, আমিনুল মল্লিক, জুলহাস বিশ্বাস, জাফরান হাসান, আবুল বাশার ও ইয়াহিয়া। তবে তারা কোথায় কিভাবে রয়েছে, তা জানেন না বলে জানান মহিবুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রয়ারি বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে খুন হন অভিজিৎ রায়। এ ঘটনায় অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, প্রথম দুই বছরের তদন্তে এই হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এরপর ধীরে ধীরে হত্যা রহস্যের জট খুলতে থাকে। তদন্তে বেরিয়ে আসে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের জড়িত থাকার তথ্য।
আদালতে আসামিদের দেওয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, মেজর (অব.) জিয়ার নেতৃত্ব ও উপস্থিতিতে অভিজিত রায়কে কুপিয়ে হত্যা করে আরাফাত ও সেলিম। সমকামী অধিকারকর্মী জুলহাস মান্নানকে হত্যার আগে তার বাসা রেকি করার কাজেও জড়িত ছিল আরাফাত। যদিও আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আরাফাত নিজেকে বাঁচানোর জন্য বলে, অভিজিতকে হত্যার সময় ঘটনাস্থলের পাশে ছিল। এসময় কুপিয়েছে অন্তু ও আলী নামে দুই জঙ্গি।
সিটিটিসি কর্মকর্তারা জানান, আরাফাত নিজেও কুপিয়েছে অভিজিৎকে। তবে এখন বাঁচার জন্য মিথ্যা বলছে। এছাড়া অন্তু ও আলি নামে যে দু’জনের সাংগঠনিক নাম বলেছে, তাদের আসল নাম-ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সিটিটিসির কর্মকর্তারা আরও জানান, এই হত্যা মামলার চার্জশিটে ফারাবীকে হত্যার প্ররোচনাকারী হিসেবে দেখানো হচ্ছে। কারণ হত্যার আগে থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানিমূলক বিভিন্ন লেখা লিখেছিলে ফারাবী। এছাড়া অভিজিৎকে হত্যার আগে সংগঠনটির ‘ইনটেল’ শাখার (গোয়েন্দা শাখা) সদস্য সায়মনের নেতৃত্বে আবু সিদ্দিক সোহেল ও আকরাম হোসেন ওরফে আরিফ অনুসরণ করেছে। অভিজিৎ কখন, কোথায় যাচ্ছেন সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি করত তারা।
সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, ২৬ ফেব্রয়ারি বইমেলায় স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে অভিজিতকে কোপানোর আগে সায়মন ও সোহেলকে দেখা গেছে। সোহেলকে বসে অপেক্ষা করতে ও সায়মনকে বাইসাইকেল চালিয়ে আসতে দেখেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন-
অভিজিৎ হত্যায় আরও এক জঙ্গি গ্রেফতার
ব্লগার অভিজিৎ হত্যা মামলায় প্রতিবেদন ৫ নভেম্বর
অভিজিৎ হত্যার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন ‘মেজর জিয়া’
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর