সবচেয়ে বড় পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পে
১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১১:১২
।। ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
কক্সবাজার: বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশনব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। যেটি বিশ্বের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট। এই প্ল্যান্ট দৈনিক দেড় লাখ মানুষের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সক্ষম।
বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় এই প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছে দাতব্য সংগঠন অক্সফাম এবং জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা, ইউএনএইচসিআর। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ মন্ত্রী ড. মোহাম্মদ এনামুর রহমান গত ২৯ জানুয়ারি এই প্ল্যান্টের উদ্বোধন করেন।
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩০ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছেন। যেখানে-সেখানে পয়ঃবর্জ্য ফেললে পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা থাকছে। তাই পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্য বর্জ্য যত্র-তত্র না ফেলে একটি নির্দিষ্ট-স্থানে বৈজ্ঞানিক উপায়ে পরিশোধন করা। এতে করে রক্ষা পাবে পরিবেশ, দূষিত হবে না বাতাস, ছড়াবেনা রোগ বালাই এবং নিরাপদ থাকবে স্যানিটেশন ব্যবস্থা।
অক্সফামের ওয়াটার ও স্যানিটেশন প্রকৌশলী সালাইউদ্দিন আহমেদ জানান, পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব কমানোর জন্য নিরাপদ স্যানিটেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, এই পরিবেশবান্ধব প্ল্যান্টটি শরণার্থীদের সুস্থ রাখবে, প্রতিদিন গড়ে চল্লিশ কিউবিক মিটার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা যাবে এখানে। এটি আসলেই একটি বিরাট প্রক্রিয়া। এর স্থায়িত্বকাল বিশ বছর। এখানকার স্থানীয় সম্প্রদায়ও এর উপকারভোগী হবে যখন এই জরুরি অবস্থা শেষ হয়ে যাবে।
পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্টের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশবিদরা বলছেন, জরুরি অবস্থায় বর্জ্য নিষ্কাশনের সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি হচ্ছে ট্যাঙ্ক ব্যবহার করার মাধ্যমে বর্জ্যগুলো ল্যাট্রিন থেকে তুলে আনা এবং দূরে নিয়ে ফেলে দেয়া। এতে পরিবেশের ক্ষতি হয়। কিন্তু এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। এই প্ল্যান্টটি তৈরি করা হয়েছে আবৃত পুকুর এবং জলাভূমি তৈরির মাধ্যমে যা কিনা মানুষ এবং পরিবেশের জন্য খুবই নিরাপদ। এতে রয়েছে একাধিক পরিশোধন ধাপ যা কিনা স্থানীয় পানির উৎসকে দূষিত করবে না। এতে আরও রয়েছে একটি উচ্চমাত্রার পলিথিন লাইনার। তাছাড়াও আবৃত থাকার কারণে এই ইউনিট থেকে কোনো দুর্গন্ধ বাইরে আসবে না।
ইউএনএইচসিআর’এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি স্টিভ করলিস বলেন, এই প্ল্যান্টের মূল উদ্দেশ্য হল ক্যাম্প এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করা। যার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা থাকবে। রোগ ছড়াবে না।
করলিস আরও বলেন, এছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ শরণার্থী স্থানগুলোতে বর্জ্যের সঠিক অপসারণের পাশাপাশি জৈব বর্জ্যগুলোকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। যা জ্বালানি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সারাবাংলা/এনএইচ