শিরায় ‘বিষপ্রয়োগে আত্মহত্যা’: স্ত্রীসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা
১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৭:৩২
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে শিরায় বিষপ্রয়োগ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। মামলায় তার স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতু, তার বাবা-মা-বোন এবং দুই বন্ধুসহ ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) আকাশের মা জোবেদা খানম বাদী হয়ে নগরীর চান্দগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছেন বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন ওই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জোবাইর সৈয়দ।
এর আগে গত (বৃহস্পতিবার) রাতে নগরীর নন্দনকাননে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও চান্দগাঁও থানা যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে এক আত্মীয়ের বাসা থেকে মিতুকে আটক করে। শুক্রবার বিকেলে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে মিতুকে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ পরিদর্শক জোবাইর সৈয়দ।
আদালত মিতুকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন নগর পুলিশের সহকারি কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী মো. শাহাবুদ্দিন।
দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় দায়ের হওয়া মামলায় আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- মিতু’র বাবা আনিসুল হক চৌধুরী, মা মোছাম্মৎ শামীমা শেলী ও বোন সানজিলা হক চৌধুরী, মিতু’র কথিত বন্ধু ডা. মাহবুবুল আলম এবং আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনায় বসবাসরত ভারতীয় নাগরিক প্যাটেল।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে- আসামিরা মানসিক যন্ত্রণা ও উত্তেজনা সৃষ্টির মাধ্যমে আকাশকে আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মৃত্যুমুখে পতিত করে।
এতে অভিযোগ করা হয়েছে, আকাশের সঙ্গে বিয়ের আগে মিতুর সম্পর্ক ছিল ডা. মাহবুবুল আলমের সঙ্গে। বিয়ের পর আমেরিকায় গিয়ে সম্পর্কে জড়ান প্যাটেলের সঙ্গে।
স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) ভোরে নগরীর চান্দগাঁও থানা এলাকায় নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেন চিকিৎসক আকাশ। আকাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবেদনবিদ (অ্যানেসথেশিস্ট) বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
৩২ বছর বয়সী আকাশ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বাংলাবাজার বরকল এলাকার মৃত আবদুস সবুরের ছেলে। নগরীর চান্দগাঁও থানার চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার ২ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাড়িতে তাদের পরিবারের বসবাস।
শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মিজানুর রহমান জানান, ২০১৬ সালে প্রেম করে বিয়ে করেন আকাশ ও মিতু। বিয়ের পরপরই মিতু অমেরিকা চলে যান। তখন থেকে বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ নিয়ে দুজনের মধ্যে বিরোধ চলছিল। গত ১৩ জানুয়ারি মিতু দেশের আসার পর তা আরও বেড়ে যায়।
‘বুধবার রাতে এ নিয়ে তাদের হাতাহাতি হয়। সেদিন রাতেই মিতুর বাবা এসে আকাশদের বাসা থেকে মেয়েকে নিয়ে যান। ভোরের দিকে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করেন আকাশ।’
মোস্তফা মোরশেদ আকাশের ফেসবুক পেজে বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে দেওয়া দু’টি স্ট্যাটাস আছে। সেখানে তিনি জানান, ২০০৯ সালে তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর সঙ্গে পরিচয়ের পর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৬ সালে তারা বিয়ে করেন। স্ট্যাটাসের একপর্যায়ে তিনি স্ত্রীকে ‘চিটার’ হিসেবে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগও করেন।
শেষ স্ট্যাটাসে মোস্তফা মোরশেদ আকাশ স্ত্রীর সঙ্গে একটি ছবি দেন এবং লিখেন, ভালো থেকো আমার ভালোবাসা তোমার প্রেমিকদের নিয়ে।
সারাবাংলা/আরডি/এমএইচ