Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডিএনসিসি উপ-নির্বাচনে সরকারবিরোধীদের আগ্রহে ভাটা


১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২২:৪০

।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উপ-নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সরকারবিরোধী দলগুলোর আগ্রহে ভাটা পড়েছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য এই উপ-নির্বাচনে ইসিতে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে মাত্র তিনটি দল অংশ নিয়েছে।  বাকি ৩৬টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না।  এছাড়া ২৬ জন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও দাখিল করেছেন মাত্র ৬ জন।  সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, অধিকাংশ রাজনৈতিক দলেরই এই নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই।  সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘কারচুপি’র অভিযোগ তুলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বাম জোট ও নিবন্ধিত ধর্মভিত্তিক দলগুলো এই নির্বাচন অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।  তাদের মতে, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।  তাই অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও জোট এই উপ-নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আরও পড়ুন: ডিএনসিসি উপ-নির্বাচন: মেয়র-কাউন্সিলর পদে জাপার ফরম বিতরণ

এছাড়া, ডিএনসিসির মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে সরকারি দলের বাইরে থেকে প্রার্থী হয়ে কতটা সুবিধা করা যাবে, তা নিয়ে সংশয় থাকায় বিরোধী রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে চাচ্ছে না।  অন্যদিকে, মেয়র পদে জামানত ও ভোটারের সিডি কেনা বাবদ ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা জমা দিতে হচ্ছে। অনেকটা অফেরতযোগ্য এই টাকা দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া অনেক সাধারণ প্রার্থীর পক্ষে সম্ভব নয়।  আবার মেয়র পদে নির্বাচিত হলেও মেয়াদ হবে মাত্র একবছর।  এইসব কারণে ডিএনসিসি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ কম তাদের।

বিজ্ঞাপন

ডিএনসিসি মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র সংগহ করলেও দাখিল করেননি গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারি জোনায়েদ সাকি। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবাদ স্বরূপ এই নির্বাচন বয়কট করছি। এই নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও সরকার ষড়যন্ত্র করেছে।’

সাকি বলেন, ‘ডিএনসিসি নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে।  সে হিসাবে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে আমরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলাম।  তখন এই নির্বাচনকে ঠেকিয়ে দেওয়া হলো।  নির্বাচন কমিশন রিট মীমাংসা করার কোনো উদ্যোগই নেয়নি।  এখন তাদের সুবিধামতো সময়ে রিট মীমাংসা করে নির্বাচনের নামে তামাশা করছে।  তাই সাজানো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না।’

 আরও পড়ুন: ডিএনসিসি উপ-নির্বাচনে বিশেষ দায়িত্ব পেলেন আ.লীগের ৫ নেতা

এদিকে মনোনয়নপত্র দাখিল না করা ইসলামী আন্দোলনের শেখ মোহাম্মদ ফজলে বারী মাসউদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনমুখী দল।  সব সময় নির্বাচনে যেতে চাই।  কিন্তু নির্বাচন তো হতে হবে।  না হলে সেই নির্বাচনে যাওয়ার কোনো মানে হয় না।’

ফজলে বারী মাসউদ বলেন, ‘আমাদের দল নিজেদের অর্থ খরচ করে জাতীয় নির্বাচন করে। কিন্তু নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হওয়ায় একটি প্রহসনমূলক নির্বাচনে অংশ নিয়ে দেশের শত শত কোটি টাকা ব্যয় করার কোনো প্রয়োজন নেই।  মেয়র পদে এই উপ-নির্বাচনেও সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে কাকে মেয়র করবে।’

এদিকে, ইসি সূত্র জানায়, ডিএনসিসির উপ-নির্বাচনে মেয়র পদে ২৬ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।  এরমধ্যে ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি তফসিল ঘোষণার পর ১৯ জন এবং চলতি বছরের  ২২ জানুয়ারি পুনঃতফসিল ঘোষণার পর আরও ৭ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।  এরমধ্যে মাত্র ৬ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।  তারা হলেন—আওয়ামী লীগ থেকে মো. আতিকুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি থেকে সংগীতশিল্পী শাফিন আহমেদ, ড. ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি) থেকে শাহিন খান, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) থেকে ববি হাজ্জাজ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আনিসুর রহমান দেওয়ান ও স্বতন্ত্র থেকে নর্থ সাউথ প্রপার্টিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহিম।

এরআগে, ২০১৮ প্রথম তফসিলের পর মেসয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারী ১৯ জন হলেন—সেলিম উদ্দিন (স্বতন্ত্র), মোহাম্মদ শাফিন আহমেদ (এনডিএম) এইচবিএম ইকবাল (আওয়ামী লীগ), মোহাম্মদ ফজলে বারী মাসউদ (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ), স্বাধীন আক্তার আইরিন (স্বতন্ত্র), শাকিল ওয়াহেদ (স্বতন্ত্র), মো. মাসুম বিল্লাহ (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি) রবিন কুমার পাল (ডিজিটাল আওয়ামী লীগ), গাজী ইয়াকুব ইসলামী (ঐক্যজোট, কামরুল ইসলাম (বিএনএফ), আবুল কালাম আজাদ (জাতীয় বিপ্লবী পার্টি), আনিসুজ্জামান খোকন (স্বতন্ত্র), মোহাম্মদ ওসমান গনি (আওয়ামী লীগ), মুরসালিন হায়দার (স্বতন্ত্র), ফারুক আহমেদ (স্বতন্ত্র), এইচ এম গোলাম রেজা (স্বতন্ত্র), খালেদা খানম রুনু (বাংলাদেশ সত্যব্রত আন্দোলন), জোনায়েদে সাকি (স্বতন্ত্র), জিল্লুর রহমান চৌধুরী (স্বতন্ত্র), আনিসুর রহমান ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ও আতিকুল ইসলাম (আওয়ামী লীগ)।  এর মধ্যে মাত্র ২ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।  তারা হলেন, মো. আতিকুল ইসলাম (আওয়ামী লীগ) ও জাতীয় পার্টি থেকে মোহাম্মদ শাফিন আহমেদ। তবে, শাফিন আহমেদ গত বছর এনডিএম থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। এবার জাতীয় পার্টি থেকে সংগ্রহ করেন।

আরও পড়ুন:  ডিএনসিসি নির্বাচনে বাধা নেই

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।  কিন্তু নির্বাচনের আড়াই বছর পর ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেয়র আনিসুর হক লন্ডনে মারা যান।  পরে ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি ইসি ডিএনসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে।  ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের কথা ছিল।  কিন্তু ১৭ জানুয়ারি এই নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিতের আদেশ দেন বিচারপতি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। এই বছরের গত ১৬ জানুয়ারি স্থগিতের আদেশ খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।  এরপর গত ২২ জানুয়ারি ইসি নতুন তফসিল ঘোষণা করে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ডিএনসিসি মেয়র ও দুই সিটির ১৮ টি করে ৩৬টি ওয়ার্ডে সাধারণ নির্বাচন।

সারাবাংলা/জিএস/ এমএনএইচ

ডিএনসিসি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর