নরেন্দ্র মোদিকে মিষ্টি পাঠালেন শেখ হাসিনা
৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৭:৫৭
।। এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বাংলাদেশ ও ভারতের পঞ্চম যৌথ কনসালটেটিভ কমিশনের বৈঠকে ঢাকার পক্ষে নেতৃত্ব দিতে বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে নয়াদিল্লি সফরে গেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। ঢাকার কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, শান্তি ও প্রগতি আরও দৃঢ় করতে ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে যাবে বাংলাদেশ। সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বার্তাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পৌঁছে দেবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে পাঠানো বিশেষ মিষ্টিও মোদির কাছে পৌঁছে দেবেন আবদুল মোমেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। এছাড়াও বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা করার জন্যে ভারতের পররাষ্টমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গেও বৈঠকে বসবেন তিনি।
আরও পড়ুন- দিল্লি সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লুকোচুরি!
কূটনীতিকরা বলছেন, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনয় বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের খুব ভালো সময় যাচ্ছে— এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কয়েকমাস পর ভারতের লোকসভা নির্বাচন। সাধারণত এমন সময়ে কূটনীতিকরা সফরে যান না। তাই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফর থেকে নতুন কোনো বার্তা আসতে পারে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নয়াদিল্লির কার্যকর সমর্থন চাইবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়াও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভারতের বেসরকারি বিনিয়োগ আরও বাড়ানোর কথাও তুলতে পারেন তিনি।
ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, আসন্ন পঞ্চম যৌথ কনসালটেটিভ কমিশনের বৈঠকের প্রস্তুতি নিতে এরই মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে ভারতের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি বিষয়ের আলোচনা এই সফরে না তোলার জন্য কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়েছেন। পানি নিয়ে গঠিত দুই দেশের কমিটির পরবর্তী বৈঠকে তিস্তা নিয়ে আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। কেননা, সামনে ভারতের লোকসভা নির্বাচন। এই সময়ে তিস্তা নিয়ে আলোচনা ভারতের সরকারকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলতে পারে।
এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। যতদিন এই ইস্যুতে সুরাহা না হচ্ছে, ততদিন আলোচনা চালিয়ে যাব। আসন্ন নয়াদিল্লি সফরেও তিস্তা নিয়ে আলোচনা করব।
ঢাকার কূটনীতিকরা আরও বলছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন সফরে ঢাকার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা, বাণিজ্য, যোগাযোগ, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা খাতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অগ্রাধিকার বিষয় হিসেবে অর্থনৈতিক কূটনীতির আওতায় ভারতের বেসরকারি খাতের আরও বিনিয়োগ চাইবে ঢাকা।
ভারতের বিনিয়োগকারীদের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দ, আরও ৬ থেকে ১০টি সীমান্ত হাট চালু, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর উন্নয়নে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার, বেনাপোল স্থলবন্দর উন্নয়নসহ একাধিক দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে বৈঠকে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলাপ করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরে ঢাকা-নয়াদিল্লির মধ্যে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই), রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও ভারতের প্রসার ভারতী এবং দুই দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে এই সফরে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সমঝোতা স্মারক সই হওয়া বিষয়ে বলেন, ‘কিছু সমঝোতা স্মারক সই করা হতে পারে। ফিরে আসি, তখন পুরোপুরি জানতে পারবেন।’
নয়াদিল্লি সফরে যৌথ কনসালটেটিভ কমিশনের বৈঠক ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী, দেশটির বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা গুলাম নবী আজাদ, ভারতের উন্নয়নমন্ত্রী হারদ্বিপ সিঙ পুরি, ভারতের সাবেক কূটনীতিক অশোক মুখার্জিসহ আরও অনেকের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সফর শেষে শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দেশে ফেরার কথা রয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর।
উল্লেখ্য, এর আগে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের সর্বশেষ যৌথ কনসালটেটিভ কমিশনের বৈঠক ২০১৭ সালের অক্টোবরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়।
সারাবাংলা/জেআইএল/এসবি আরএফ
এ কে আবদুল মোমেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন