ডেমরায় হচ্ছে কারখানা, উৎপাদিত হবে বহুমুখী পাটপণ্য
৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৯:৩৯
।। জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: টেকসই, পচনশীল ও পরিবেশবান্ধব পাটপণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় পাটপণ্যের উৎপাদন কম। এ কারণে বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীর ডেমরায় স্থাপন করা হবে পাটপণ্য উৎপাদনের কারখানা। মসৃণ কাপড়সহ বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদিত হবে এই কারখানায়। দেশ-বিদেশে গৃহস্থালী ও দাফতরিক কাজে ব্যবহারের উপযোগী এসব পণ্য রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করে দারিদ্র্য কমানো এবং টেকসই উন্নয়নের বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সরকারকে সহায়তা করবে এই কারখানা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, কারখানা স্থাপনে ‘বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন ফ্যাক্টরি স্থাপন, ডেমরা, ঢাকা’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ১৮৩ কোটি টাকা। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০১৮ সালের ১ মার্চ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় কিছু শর্ত সাপেক্ষে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিশ্বের বৃহত্তম প্রাকৃতিক তন্তু হলো পাট। প্রকৃতির আশীর্বাদপুষ্ট বাংলাদেশে প্রচুর পাট উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। পাট মূলত বহুমুখী ও পুনঃব্যবহারের উপযোগী, টেকসই, দূষণমুক্ত, পচনশীল, নিরাপদ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত এবং পরিবেশবান্ধব তন্তু। এসব কারণে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাজারে বহুমুখী পাটপণ্যের চাহিদা দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। ফলে পাটজাত পণ্য রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
এর আগে, ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় বিজেএমসিকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ২০১৬ সালের ২১ জুলাই অনুষ্ঠিত বিজেএমসির অধীন জুট মিলে বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনের জন্য পৃথক ইউনিট স্থাপন বিষয়ে আলোচনা সভায় প্রস্তাবিত প্রকল্পটি প্রণয়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
মন্ত্রণালয় জানায়, উদ্যোগী মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার ডেমরায় অবস্থিত করিম জুট মিলের অব্যবহৃত জায়গায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নীতিগত অনুমোদন দেন। বর্তমানে প্রকল্পটিতে উৎপাদিত মসৃণ কাপড় দ্বারা বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন ও রফতানি করা হবে, পাশাপাশি বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি পাটপণ্য প্রস্তুতকারীরাও প্রকল্পে উৎপাদিত কাপড় দিয়ে বিভিন্ন নকশার দৈনন্দিন ব্যবহারের উপযোগী পাটপণ্য তৈরি করতে পারবে। এসব পণ্য দেশের বাজারে বিক্রির পাশাপাশি বিদেশেও রফতানি করা যাবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির আওতায় বছরে ১ হাজার ৮৯০ টন পাটের মসৃণ সুতা ও ১ হাজার ৮৫০ টন পাটের মসৃণ কাপড়সহ বছরে বিভিন্ন আকার ও নকশার লাখ পিস পাটের ব্যাগ ও অন্যান্য বহুমুখী পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য ডেমরায় বিজেএমসি’র করিম জুট মিলের অব্যবহৃত জায়গায় বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন কারখানা স্থাপন করে পরিবেশবান্ধব বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন করা সম্ভব। এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, দারিদ্র্য বিমোচনসহ আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও মিলের খালি জায়গার সদ্ব্যবহার করা সম্ভব হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পাট খাতে কর্মরত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তরাও উপকৃত হবেন এবং এ খাতের প্রসার হবে।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর