‘সাহসী ও দক্ষ নারীশক্তি গড়ে তুলতে সংসদে ভূমিকা রাখতে চাই’
৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২৩:৩৭
।। নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছেন অপরাজিতা হক। তার বাবা টাঙ্গাইল-২ আসনের সাবেক সংসদ খন্দকার আসাদুজ্জামান যিনি ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের প্রথম অর্থ সচিব ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সময় তিনি কেবিনেট মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্বও পালন করেন। এছাড়া ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন খন্দকার আসাদুজ্জামান।
শুক্রবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে ৪১ জন মনোনীত প্রর্থীর নাম ঘোষণা করেন। মনোনীয়ত প্রার্থী তালিকায় দশম জাতীয় সংসদের মাত্র দুইজন ঠাঁই পেয়েছেন। এছাড়া সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্য থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো নেত্রীর ঠাঁই হয়নি।
শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে মোবাইল ফোনে অপরাজিতা হক সারাবাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সংরক্ষতি সংসদ সদস্য হিসেবে রাজনৈতিক ও পারিবারিক জীবনের কথা তুলে ধরেন।
জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য হিসাবে সরকারি দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অপরাজিতা হক জানান, ‘অবশ্যই অনেক সম্মানিত বোধ করছি। নেত্রী আমাকে এত বড় একটা সম্মান দিয়েছেন। আমার জন্য অনেক বড় একটা সুযোগ করে দিলেন, দেশ এবং দশের জন্য কিছু করার। সবচেয়ে বড় কথা হলো, নারীর ক্ষমতায়নে আমি যদি কোনো ভূমিকা রাখতে পারি, এটা আমার জন্য একটা অনেক বড় ক্ষেত্র তৈরি করে দিলেন।’
শপথ গ্রহণের পর একাদশ জাতীয় সংসদে নারী সমাজের প্রতিনিধি হিসাবে কী কী ক্ষেত্রে জনমত গঠনে জোরালো ভূমিকা রাখতে চান সে বিষয়ে অপরাজিতা হক বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হবে সাহসী নারী তৈরি করা। নারীরা আজকাল, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, স্বনির্ভর-পরনির্ভর অনেকেই নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আমাদেরকে এই জিনিসটা প্রতিহত করার জন্য যা যা করা দরকার, বিশেষ করে নারীকে দক্ষ স্বনির্ভর করে তুলে অর্থনৈতিক মুক্তি এবং সামাজিক নিরাপত্তা আনার ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে। যাতে নারীরা নির্যাতন থেকে নিজেকে নিজেই প্রতিহত করতে পারে, এটাই হবে মূল লক্ষ্য। যাতে আমরা একটা দক্ষ নারীশক্তি তৈরি করতে পারি।’
‘প্রশাসনের সঙ্গে নারীকে নিজেও সাহসী হতে হবে এবং নারী নির্যাতন প্রতিহত করতে। আমাদের লক্ষ্য হবে, সাহসী নারী তৈরি করার ক্ষেত্রে সংসদে জোরালো ভূমিকা রাখা।’
একটি রাজনৈতিক পরিবার থেকে বেড়ে ওঠার গল্প তুলে ধরে অপরাজিতা হক বলেন, ‘আমার বাবা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক হিসাবে ১৯৭১ সালে ২৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব থাকাকালীন চাকরির মায়া ত্যাগ করে নিজ এলাকা টাঙ্গাইল চলে যান এবং মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করেন। ২৫ শে মার্চ গভীর রাতে যখন ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা ছড়িয়ে পড়ে। তিনি টাঙ্গাইলের অস্ত্রাগার খুলে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অস্ত্র বিতরণ করেন এবং সশস্ত্র প্রতিরোধ করে তোলার নেতৃত্ব দেন। সেসময় ঢাকা-টাঙ্গাইলের নাদিয়াপাড়া এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ইনফ্যাক্ট প্রতিহত করে। পরবর্তীতে আমার পিতা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট হয়ে মুজিবনগর সরকারে যোগদান করেন এবং অর্থ সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।’
‘তারপর থেকে আমাদের জীবন, এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই আমরা বড় হতে থাকি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আমার বাবাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ওনি ওইসময় নয় মাস জেলে ছিলেন এবং আমাদের পরিবার এরপর থেকে নানা নির্যাতনের শিকার হয়। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আমার বাবা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি পরপর তিনবার সংসদ সদস্য ছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত। আমরা সবসময় নিজেদের তৈরি করেছি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসাবে এবং নিজের জীবন উৎসর্গ করার জন্য সব সময় তৈরি ছিলাম’ বলেন অপরাজিতা হক।
আপনাকে ধন্যবাদ, সারাবাংলাকেও ধন্যবাদ।
সারাবাংলা/এনআর/এমআই