রোহিঙ্গা ইস্যুতে এবার কঠোর অবস্থানে ঢাকা
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২৩:১৩
।। এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে এবার কঠোর অবস্থান নিচ্ছে ঢাকা। রাখাইনের বাস্তুচ্যুত এই জনগোষ্ঠীর নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করে তাদের সম্মতিতে, নিরাপদে এবং সম্মানের সাথে মিয়ানমারে ফেরৎ পাঠাতে শক্তিশালী কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশেষ নজর দিয়েছেন। এই সংকট সমাধানে কীভাবে এগুতে হবে তার দিক-নির্দেশনা দিয়ে মন্ত্রী নিজেই ব্যক্তিগতভাবে কূটনৈতিক মহলে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করছেন।
তৎপরতার অংশ হিসেবে এরইমধ্যে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত এবং চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন ঢাকার কূটনীতিকরা এবং এই যোগাযোগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। চলতি সপ্তাহে এই ইস্যুতে সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রপতির ঢাকায় আসতে পারেন বলে জানা গেছে।
সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত এবং সংকট সমাধানে মিয়ানমারের রাখাইনে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গঠনের প্রস্তাব অনেক আগেই দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী, নিরাপদ অঞ্চলের দেখভাল করতে পারে আসিয়ান। প্রয়োজনে ভারত, চীন এবং রাশিয়াও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
ঢাকার কূটনীতিকরা জানাচ্ছেন, রাখাইনে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গঠনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ বাস্তবায়নে শক্তিশালী কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। মিয়ানমারের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো এবং আসিয়ানকে এই পরামর্শ বাস্তবায়নে কাজে লাগানো হচ্ছে। এরই মধ্যে আসিয়ান রাখাইন অঞ্চল পরিদর্শনের ঘোষণা দিয়েছে। সর্বশেষ আসিয়ান সম্মেলনে মিয়ানমারকে এই সংকট সমাধানে চাপ দেওয়া হয়। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত এবং চীনের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ঢাকা। ইতিবাচক বার্তাও পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ মিয়ানমার ঘেঁষা সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। যার ফলে চলতি সপ্তাহের ১০ ফেব্রুয়ারি ২৮ জন রোহিঙ্গা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক, তারা বাংলাদেশে থাকবে কেন? তাদের অবশ্যই ফিরে যেতে হবে। ফিরে যাওয়ার জন্য যা প্রয়োজন, তাই করবো। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অবশ্যই তাদের সম্মতি নিয়ে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে করতে হবে। রোহিঙ্গা সংকট জিইয়ে থাকলে শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, গোটা বিশ্বে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এই সংকট থেকে যে কোনো সময় চরমপন্থার জন্ম হতে পারে। বিষয়টি বিশ্ববাসীর বুঝতে হবে।
গত শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) নয়াদিল্লি সফর থেকে ঢাকায় ফিরেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে রাখাইনে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গঠন বিষয়ে ভারতকে নতুন প্রস্তাব দিয়ে নয়াদিল্লির কাছে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের কাছে এই বিষয়ে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই প্রস্তাবে ভারত ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ঢুকতে না পেরে ফিরে গেছেন মিয়ানমারের ২৮ নাগরিক
সারাবাংলা/জেআইএল/এটি