প্রার্থীর তালিকায় থেকেও মনোনয়ন পেলেন না খুলনার লিপি
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২১:২০
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য সরকার দলীয় প্রার্থীর তালিকায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পাননি খুলনার শিরিনা নাহার লিপি। তার পরিবর্তে টাঙ্গাইল থেকে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমতা হেনা লাভলীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। দলটির দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ জানান, সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা থেকে শিরিনা নাহার লিপিকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, গত শুক্রবার (৮ ফেব্রুয়ারি) আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের এক সভায় সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ৪১ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। এসময় হাতে লেখা প্রার্থীদের একটি তালিকাও সরবরাহ করা হয় গণমাধ্যমে। চূড়ান্ত সেই তালিকাতে ছিলেন যুব মহিলা লীগের সহসভাপতি শিরিনা নাহার লিপি। শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বাকি দুই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ।
এদিকে, সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্যদের মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সই করা যে তালিকা প্রকাশ করা হয়, তাতে শিরিনা নাহার লিপির নাম ছিল না। তালিকায় নতুন নাম হিসেবে টাঙ্গাইল থেকে মমতা হেনা লাভলীর নাম যুক্ত হয়। এই একটি পরিবর্তন ছাড়া আগের তালিকায় স্থান পাওয়া বাকি সবাই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংরক্ষিত মহিলা আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, গণমাধ্যমে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর যে তালিকা প্রাথমিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে, সেটি চূড়ান্ত কোনো তালিকা ছিল না। দলীয় সভাপতির সই করা তালিকাটিই চূড়ান্ত। সেই তালিকা অনুযায়ীই সবাই মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে যে চিঠি দিয়েছি, সেই তালিকায় কোনো পরিবর্তন হয়নি। আনুষ্ঠানিক তালিকা অনুযায়ীই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আগে সম্ভাব্য প্রার্থীদের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা কাউকে বলিনি যে আমরা তাকে মনোনয়ন দিলাম বা বাদ দিলাম। তাই কাউকে বাদ দিয়ে কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সই করা যে চিঠি নির্বাচন কমিশনে পৌঁছানো হয়েছে, সেই চিঠি অনুযায়ীই মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে।
এর আগে, খুলনা থেকে প্রার্থী হিসেবে লিপির নাম ঘোষণার পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও খুলনার স্থানীয়দের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বলা হয়, শিরিনা নাহার লিপির স্বামী কামরুল ইসলাম সজল বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত এবং তিনি যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার আইনজীবী ছিলেন।
এ বিষয়ে সারাবাংলার পক্ষ থেকে শিরিনা নাহার লিপির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রথম তালিকায় আমার নাম ঘোষণা করা হলেও মূল তালিকায় আমার নাম ছিল না। তাই মনোনয়নপত্রও দাখিল করিনি। দল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার ওপর আমি শ্রদ্ধাশীল। নেত্রী যাকে ভালো মনে করেছেন, তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এ নিয়ে আমার কোনো ধরনের আক্ষেপ বা ক্ষোভ নেই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে লিপি বলেন, সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমি বলতে চাই, এসব সমালোচনা আমি আমলে নিচ্ছি না। কারণ আওয়ামী লীগের রাজনীতির আবহতেই আমার বেড়ে ওঠা। আমার বাবা, মামা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। বাবা বঙ্গবন্ধুর সময়ে সংসদ সদস্য ছিলেন, মা খুলনা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। আমি নিজেও ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। পরে সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতিও নির্বাচিত হই। আওয়ামী লীগই আমার রাজনীতির একমাত্র পরিচয়। আমি সংসদ সদস্য হতে পারলাম কি না কিংবা কোনো পদ-পদবী পেলাম কি না, তা দিয়ে আমার রাজনীতি নির্ধারিত হবে না।
স্বামীর রাজনৈতিক পরিচয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার স্বামী একজন আইনজীবী হিসেবে তার কর্মক্ষেত্রে বিএনপি প্যানেলের রাজনীতি করেন, এটা সত্য। তবে আমি এটাকে আমার বাদ পড়ার কোনো কারণ হিসেবে দেখছি না। এটা সম্পূর্ণ দলীয় একটি সিদ্ধান্ত এবং আবারও বলছি, আমি এই সিদ্ধান্তের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল।
উল্লেখ্য, গত ৩ ফেব্রুয়ারি সংরক্ষিত নারী আসনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৪ মার্চ একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সারাবাংলা/এনআর/এমএমএইচ/এসবি/টিআর