ছড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা: আতঙ্কে স্থানীয়রা
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৭:০০
।। ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।
কক্সবাজার: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা এখন আর নির্ধারিত ক্যাম্পেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। তারা স্থানীয় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নানা কৌশলে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। তাদের কেউ দালালের মাধ্যমে, কেউ ক্যাম্পের বাইরে অবস্থানরত আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে, কেউ গাড়ি চালকদের মাধ্যমে সড়ক বা নৌপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। ক্যাম্প ছেড়ে স্থানীয়দের মাঝে তাদের মিশে যাওয়াকে বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দেখছে স্থানীয় জনগণ। আর প্রশাসন বলছে, রোহিঙ্গারা যেন ক্যাম্প ছেড়ে যেতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর নজরদারি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এক বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ায় ভাষা, আচার-আচরণের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা নিজেদের স্থানীয়দের মতো করে তৈরি করে নিচ্ছে। আর এই বিষয়টিকেই পুঁজি করে তারা ক্যাম্প ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে। প্রশাসনের কাছে তাদের দাবি, রোহিঙ্গারা যেন কোনোভাবেই স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে যেতে না পারে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, পুলিশের ৭টি চেকপোস্ট ছাড়াও বিজিবি ও র্যাবের চেকপোস্ট রয়েছে। আর পুলিশ গত ১৭ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৫৯ হাজার রোহিঙ্গাকে আটকের পর ক্যাম্পে ফেরত পাঠিয়েছে। আর ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের পালাতে সহযোগিতা করার অভিযোগে ৫ শতাধিক দালালকে আটক করা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকলেও ক্যাম্পের চারপাশে সীমানা বা কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় রোহিঙ্গদের ছড়িয়ে পড়া রোধ করা যাচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ কায়সার জানান, ‘মানবিক কারণে সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। ক্যাম্পের মধ্যে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। কিন্তু তারা ওখানে না থেকে শহরের দিকে চলে আসার চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ায় নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয়রা। রোহিঙ্গারা মাদকপাচার, ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে সমাজের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। তাই তাদের নির্দিষ্ট জায়গায় রাখতে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।’
প্রায় একই অভিমত সংস্কৃতিকর্মী মরিয়ম আক্তার নুপুরেরও। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তারা আমাদের সমাজের সঙ্গে মিশে যাওয়ায় বাঙালি সংস্কৃতির ক্ষতি হচ্ছে। তাই দ্রুত রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে বের হওয়া বন্ধ করতে হবে।’
এই সংস্কৃতিকর্মী আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশ এমনিতে চাপের মধ্যে আছে। তার মধ্যে রোহিঙ্গারা আমাদের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই যেভাবেই হোক, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য কাঁটাতার দিয়ে হলেও তাদের এক জায়গায় রাখতে হবে।’
রোহিঙ্গারা দালালের সহায়তা নিয়ে কিংবা ক্যাম্পের বাইরে থাকা আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে অভিযোগ করে উখিয়ার বালুখালী পালংখালী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য নুরুল আবছার বলেন, ‘দালালসহ বিভিন্ন চক্রের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন গাড়ির চালকেরা টাকার বিনিময়ে নানা কৌশলে তাদের বিভিন্ন স্পটে নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া নৌপথে মালয়েশিয়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার করা হচ্ছে। এ কারণে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করা দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।’
উখিয়া চেক পোস্টের দায়িত্বরত পুলিশ অফিসার মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের ক্যাম্প ছেড়ে নানা কৌশলে পালাতে গিয়ে পুলিশের হাতে প্রায় প্রতিদিনই আটক হচ্ছে রোহিঙ্গারা। তাদের পুনরায় ক্যাম্পে পাঠানো হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কক্সবাজারের আশ্রয়শিবির থেকে পালিয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের খুঁজে বের করা দিন দিন কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে জোরদার রয়েছে প্রশাসন।’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় স্থলে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া না হলেও রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রোহিঙ্গারা যেন আশ্রয়ক্যাম্প ছেড়ে পালাতে না পারে, সেজন্য ৭টি চেকপোস্টে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা।’
উল্লেখ্য, মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয়ভাবে হত্যা-নির্যাতন শুরু হলে, প্রাণে বাঁচাতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এই পর্যন্ত কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা। এই রোঙ্গিদাদের ৩২টি ক্যাম্পে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/এমএনএইচ/টিএস
কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন মিয়ানমার রাখাইন রোহিঙ্গা