Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিশু হাসপাতালে শৃঙ্খলা ফেরাতে নেই কোনো উদ্যোগ!


১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৮:০০

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।। 

ঢাকা: ঢাকা শিশু হাসপাতাল নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ— নোংরা পরিবেশ ও উৎকট গন্ধের কারণে টয়লেট ব্যবহার করা যায় না। ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে বিড়াল ঘুরে বেড়ায়। স্যাঁতস্যাঁতে দেয়াল। এছাড়া রাত যত গভীর হয়, তত বাড়তে থাকে গাঁজার গন্ধও। হাসপাতালটিতে কর্মরত তরুণ চিকিৎসকরা এসব বিশৃঙ্খলার কথা একাধিকবার জানালেও কর্তৃপক্ষ বিষয়টিতে কর্ণপাতই করেনি। তবে, এসব অভিযোগ স্বীকার করে কর্তৃপক্ষ বলছে, কিছু টেকনিক্যাল কারণে শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

শিশুদের জন্য দেশের একমাত্র বিশেষায়িত এই হাসপাতালে পুরো দেশ থেকেই সন্তানকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য প্রতিদিনই অভিভাবকরা আসছেন। কিন্তু হাসপাতালটিতে আসার পরই তারা পড়ছেন নতুন নতুন বিপাকে। অনেক অভিভাবককেই অসুস্থ শিশুসন্তানকে নিয়ে থাকতে হয় হাসপাতালের বাইরে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টেন্ডার ছাড়াই হাসপাতালের উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। কিছুদিন আগে হাসপাতালের বিভিন্ন তলার মেঝেতে টাইলস লাগানো হলেও সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক জায়গাতেই টাইলস উঠে গেছে। চিকিৎসকদের অভিযোগ, নিম্নমানের টাইলস লাগানোর কারণেই বছর না ঘুরতেই এগুলো উঠে যাচ্ছে। তারা বলছেন, যে টাকা বরাদ্দ ছিল তার পুরোটা কাজে লাগানো হয়নি। হাসপাতাল উন্নয়নের টাকা চলে গেছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে।

হাসপাতালের একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে নতুন তিনতলা ভবনের জন্য ৫০০ কেবিএ ক্ষমতাসম্পন্ন জাপানি জেনারেল ব্র্যান্ডের জেনারেটর কেনার আদেশ হয়। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে পুরনো জেনারেটরকে জাপানি জেনারেল ব্র্যান্ডের নতুন কভার দিয়ে ঢেকেই হস্তান্তর করা হয়। আর দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই জেনারেটরটি চালুর পর সেদিনই শর্টসার্কিট হয়ে পুরো ভবনের এসিসহ মেশিনারিজ নষ্ট হয়ে যায়। বিকল হয়ে পড়ে জেনারেটরটিও।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতালের একজন চিকিৎসক আক্ষেপ করে সারাবাংলাকে বলেন, প্রায় পাঁচ মাস আগে হাসপাতালের তিনতলার মেঝের কাজ শুরু হয়, লাগানো হয় টাইলস। সে টাইলস কী করে এই কয়েকমাসে উঠে যাচ্ছে?

এই চিকিৎসক আরও বলেন, চিকিৎসকদের বসার জায়গা নেই, হাপসাতালের একটি বারান্দাকে কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে পোস্ট অপারেটিভ বিভাগ বানানো হয়েছে। সেখানে সব ক’টি বেডের সঙ্গে অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই। বারান্দার দিকের আটটি বেডের জন্য রয়েছে একটি পোর্টেবল অক্সিজেন সিলিন্ডার। সেটিকেই ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ছোট্ট শিশুদের দরকার হলে কাজে লাগানো হয়।

এই হাসপাতালে দুর্নীতির পাশাপাশি পরিকল্পনারও অভাব রয়েছে উল্লেখ করে এই চিকিৎসকার আরও বলেন, হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষগুলোয় শিশুদের জন্য কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নেই। অস্ত্রোপচারের সময় শিশুরা নানা কারণেই ঠাণ্ডা হয়ে যায় বলে তখন বিশেষ হিটারের ব্যবস্থা থাকা দরকার। কিন্তু সেসব যন্ত্রপাতি নেই বলে চিকিৎসকদের কয়েকজন ব্যক্তিগত উদ্যোগে ‘হেয়ার ড্রেয়ার’ মেশিনকে অস্ত্রোপচার বেডের সঙ্গে কোনোরকমে জুড়ে দিয়ে শিশুদের ঠাণ্ডার হাত থেকে রক্ষা করছেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের উপ-পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু তৈয়ব সারাবাংলাকে বলেন, ‘কিছু বিশৃঙ্খলা তো অবশ্যই আছে। এসব বিষয়ে মনিটরিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’ কিন্তু নানা কারণে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না বলেও তিনি দাবি করেন।

সারাবাংলা/জেএ/এমএনএইচ/টিএস

অধ্যাপক ডা. আবু তৈয়ব ঢাকা শিশু হাসপাতাল দুর্নীতি সারাবাংলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর