Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এখনও জানতে পারলাম না আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটা কী: মওদুদ


১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৬:২০

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ (ফাইল ছবি)

।।স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: নাইকো দুর্নীতি মামলার সঙ্গে নিজের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।  তিনি বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত জানতে পারলাম না আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটা কী? আমি কোনো কিছুই খুঁজে পাইনি।’ মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ জজ শেখ হাফিজুর রহমানের আদালতে নাইকো চার্জ শুনানির সময় তিনি এসব কথা বলেন।

মওদুদ আহমদ বলেন, ‘শুধু একটি বিষয় জানতে পেরেছি, প্রশাসন থেকে আমার একটি অভিমত নেওয়া হয়েছে।  ওই অভিমতটা আমার কোনো ব্যক্তিগত অভিমত নয়। আমার বিরুদ্ধে কোনো ক্রিমিনাল অভিযোগ নেই।  যে অভিমত দিয়েছে প্রশাসন, সেটা আপনার (বিচারক) ও আমার সামনে নেই, এটাই আমার প্রথম বক্তব্য।’

সাবেক এই আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কোনো টাকা অত্মসাতের অভিযোগ নেই। আমি কোথাও কোনো অভিমত দেইনি, আর কেউ দেখাতেও পারবে না।  মিনিস্ট্রির মতামতে আটজনের নাম দেওয়া হয়েছে।  কিন্তু তাদের নাম সাক্ষীতে, বাদী বা আসামির কোনো জায়গায়ই ব্যবহার করা হয়নি।  সেখানে শুধু আমার নাম ব্যবহার করা হয়েছে। কেন আমার নাম দেওয়া হয়েছে? রাজনৈতিকভাবে হেনস্থ করার উদ্দেশেই আমার নাম ব্যবহার করা হয়েছে।  আমার বিরুদ্ধে কোন সাক্ষী নেই।  অনেক আলমত আছে মিনিস্ট্রিতে কিন্তু আমার বিরুদ্ধে কোনো আলামত নেই।’

এই মামলার চার্জ গঠনের কোনো গ্রাউন্ড নেই দাবি করে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘হাজার হাজার মানুষ জেলে আছে, সেগুলো না করে এ ধরনের মামলা করে আদালতের সময় নষ্ট হচ্ছে।  আমার সাবমিট যদি সঠিক হয়, তাহলে আদালত এই মামলার কার্যক্রম বন্ধ করে দেবেন। এই মামলার কার্যক্রম এখানেই শেষ হওয়া উচিত। এরপরে এ মামলা কার্যক্রম চলে না। তারপরও যদি আপনি (বিচারক) চান, তাহলে এই মামলার শুনানি করতে পারি। ’ এই প্রসঙ্গে শুনানি চালিয়ে যেতে বলেন বিচারক। এরপর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আংশিক চার্জ শুনানির পর পরবর্তী শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করেন।

বিজ্ঞাপন

এদিন, খালেদা জিয়াকে হু্ইল চেয়ারে করে দুপুর ১২ টা ২৬ মিনিটে আদালতে আনা হয়্।  এরপর বিচারক ১২ টা ২৮ মিনিট এজলাসে উঠে ২ টা ৫ মিনিট পর্যন্ত বিচারকার্য পরিচালনা করেন।  ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও শহীদুল ইসলামের আংশিক চার্জ শুনানি শেষে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ঠিক করেন আদালত।

মওদুদ আহমদের চার্জশুনানি শেষে খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী মাসুদ আহদেম তালুকদার বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বর মাসে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করা হয়েছিল। চিকিৎসা অসমাপ্ত অবস্থায় খালেদা জিয়াকে আবার কারাগারে আনা হয়েছে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের একটি আবেদন রয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। তার সমস্যাগুলো দিন দিন বাড়ছে। ব্যক্তিগত চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা করার প্রয়োজন। দয়া করে একটি চিকিৎসা বিষয়ে আদেশ দিন।  এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের আদেশ আছে। ’ এ সময় উচ্চ আদালতের আদেশ জমা দেওয়ার কথা বলে এ বিষয়ে আদেশ পরে দেবেন বলে জানান বিচারক।

শুনানির পুরো সময় এজলাসে খালেদা জিয়া চুপ ছিলেন।

আরও পড়ুন: নাইকো দুর্নীতি মামলায় মতামত দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার মওদুদের

উল্লেখ্য, কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন।  পরের বছর ৫ মে ওই মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেন দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম সাহেদুর রহমান। অভিযোগপত্রে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।

বিজ্ঞাপন

নাইকো ছাড়াও গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা বাতিলের আবেদন জানিয়ে আলাদা রিট করেছিলেন খালেদা জিয়া। এসব রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতির মামলাগুলোর কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট বিভাগ।

কয়েক বছর স্থগিত থাকার পর মামলাগুলো সচলের উদ্যোগ নিয়ে রুল নিষ্পত্তির আবেদন জানায় দুদক।  পরে গতবছর আলাদা আলাদা শুনানি শেষে মামলা তিনটি সচলের রায় দেন আদালত।

এই মামলার প্রধান আসামিরা হলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভুঁইয়া, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন।

তিনজন আসামি পলাতক।  তারা হলেন, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, বাপেক্সের সাবেক মহা-ব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

গত বছরের ৫ মে এই মামলায় অভিযুক্ত আরেক আসামি সাবেক সচিব শফিউর রহমান মারা যাওয়ায় তার নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।  ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতে খালেদা জিয়াসহ মামলার ১১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন জানান।

সারাবাংলা/এআই/এমএনএইচ

আদালত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর