‘গণতন্ত্র কখনও একদলীয় হয় না’
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১২:৩৪
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কমিশনে এখন পর্যন্ত আত্মবিশ্লেষণমূলক আলোচনা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, গণতন্ত্র কখনও একদলীয় হয় না। বহুদলীয় না হলে সেটি কখনও গণতান্ত্রিক রূপ লাভ করে না।
বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে দ্বিতীয় পর্যায়ের উপজেলা নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্রিফিং অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ইসি মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘এবারের উপজেলা নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় তা গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।’ তিনি বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়া নিতান্তই প্রাথমিক প্রাপ্তি। নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য হতে হয়। এ দুটি শব্দের পরিমাপক জনগণ, যারা নির্বাচন করেন তারা নয়। এই প্রেক্ষাপট মনে রেখে আগামী উপজেলা নির্বাচন যাতে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার প্রতি জনগণকে অধিকতর আস্থাশীল করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, নির্বাচন হতে হবে সুষ্ঠু ও শুদ্ধ। বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কখনও তা কাম্য নয়।
ইসি মাহবুব বলেন, ১৯৭১ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যাত্রা শুরু হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় বা স্থানীয় বিভিন্ন স্তরে জনপ্রতিনিধি বেছে নেওয়াই হলো অভীষ্ট। নির্বাচনই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায়। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র সংরক্ষিত ও পরিচালিত হয়। বিশেষত, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা সকল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন অভিপ্রেত। এ জন্য উপজেলা, এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পর্যন্ত গণতান্ত্রিক কাঠামোতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমান ব্যবস্থায় উপজেলা পরিষদ যেভাবে দায়িত্ব পালন করার কথা, তা সম্ভব হচ্ছে না। এখানে অন্য কারও খবরদারি বা নিয়ন্ত্রণ থাকার কথা নয়। বিচারপতি খায়রুল হক ও বিচারপতি ফজলে কবীর প্রদত্ত ২০০৮ সালের রায়টি বাস্তবায়িত হলে উপজেলা পরিষদ পরিপূর্ণ স্বায়ত্বশাসিত রূপ লাভ করবে এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও অধিকতর গৌরবমন্ডিত হবে বলেও যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা সবাই বলে থাকি নির্বাচন আইনানুগ হতে হবে। কথাটার কিছু ব্যাখ্যা প্রয়োজন। নির্বাচন আইনানুগ হওয়ার অর্থ সবার সম অধিকার ও সবার প্রতি সম আচরণ নিশ্চিত করা। এ জন্য আপনাদের কঠোর নিরপেক্ষতা অবলম্বন করতে হবে। কোনো প্রকার ভয়-ভীতি চাপ, লোভ বা প্রলোভনের কাছে আপনারা নতি স্বীকার করবেন না। নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকে সাহসিকতার সঙ্গে আপনারা দায়িত্ব পালন করুন। অনেক অপ্রত্যাশিত সমস্যা আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারে। আইনের কাঠামোর মধ্যে থেকেই আপনাদের তা মোকাবিলা করতে হবে। আইন কখনও সমস্যা সৃষ্টি করে না, সমাধান দেয়। যারা নির্বাচনের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করছেন, তারা প্রতি পদক্ষেপে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন, এটাই প্রত্যাশা।
আলোচিত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন কমিশনে এখন পর্যন্ত নির্বাচনগুলোর সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়ে আত্মবিশ্লেষণমূলক আলোচনা হয়নি। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আপনারা সাফল্য ও ব্যর্থতার যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন, তা থেকে পরবর্তী পর্যায়ের নির্বাচনগুলোর ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন। নির্বাচনের ব্যর্থতাই কেবল যাচাই হবে তা নয়, যেসব বিষয়ে সাফল্য অর্জিত হয়েছে, সেসব বিষয়গুলো যাতে আগামী নির্বাচনগুলোতে অক্ষুণ্ন ও অব্যাহত থাকে সে সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের উদ্দেশ্যে ইসি মাহবুব বলেন, আপনারা আসন্ন পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনের মূল শক্তি। আপনাদের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা আছেন। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে সর্বাঙ্গীন সুন্দর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার মূল দায়িত্ব আপনাদের। মনে রাখতে হবে যে, নির্বাচন কমিশন সরাসরি নির্বাচন করে না। নির্বাচনকালে আপনারাই প্রকারান্তরে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন করেন। আপনাদের সাফল্যের ওপরই নির্বাচন কমিশনের সাফল্য নির্ভরশীল।
সারাবাংলা/ জিএস/জেডএফ