ডাকসু’র ছাত্রলীগ প্যানেলের ট্র্যাম্পকার্ড শেখ হাসিনার হাতে
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২৩:৪১
।। নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রলীগের ‘প্যানেল’ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেবেন বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির একাধিক নেতা। তাদের মতে, পাশাপাশি এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম এই সংগঠনটির প্যানেলের জয় নিশ্চিতে শেখ হাসিনার ‘ক্যারিশম্যাটিক’ নেতৃত্বই হবে ‘ট্রাম্পকার্ড’। শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডাকসু নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের এক মতবিনিময় সভায় সংশ্লিষ্ট নেতারা এ তথ্য জানান।
প্রসঙ্গত, আগামী ১১ মার্চ বহুল প্রতীক্ষিত ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে জোর প্রস্তুতিতে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ডাকসু নির্বাচন পরিচালনার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদক এবং হল শাখা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
এছাড়া দুই দফায় গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার বিকেলে ছাত্রলীগ ও ডাকসুর সাবেক নেতাদের সঙ্গে এই মত-বিনিময়র সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। এছাড়া বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিএম মোজাম্মেল হক। অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, সুভাষ সিংহ রায়, বাহাদুর বেপারী, লিয়াকত শিকদার, সাইফুর রহমান সোহাগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কার্যনির্বাহী সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, এবিএম রিয়াজুল কবির কাওসার, আনোয়ার হোসেন, গোলাম কিবরিয়া চিনু, মারুফা আকতার পপি, ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের মধ্যে মোশারফ হোসেন রাজা, বলরাম পোদ্দার, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটনসহ অনেকে।
আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেড় ঘণ্টার বৈঠক
সভায় ডাকসু নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আমরা বাইরে থেকে যা শুনেছিলাম তা সঠিক নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কাঠামোগত একটি শক্তিশালী পরিস্থিতি রয়েছে। হল কমিটি সচল রয়েছে, আমার কাছে তালিকা রয়েছে, অনুষদ কমিটি রয়েছে, বিভাগীয় কমিটি রয়েছে, ইতোমধ্যেই তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। ছাত্রলীগের জয়লাভ করার এটিই হলো সঠিক ও সময়পোযোগী সময়।’
ডাকসু নির্বাচনে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের দুর্বলতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে নানক বলেন, ‘ক্যাম্পাসে অনেকে সাইনবোর্ডসর্বস্ব ছাত্র সংগঠন আছে। কিন্তু ছাত্রলীগ নতুন কমিটি হওয়ার পর থেকে সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে একটি সুন্দর অবস্থান তৈরি করেছে। ডাকসু নিয়ে বিভিন্ন জরিপও চলছে। ডাকসু প্যানেল সময়মতো আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের কাছে পেশ করবেন। সেই অনুসারে সেই প্যানেলকে নিয়ে আমরা নামবো।
এছাড়া, ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টিতে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা ও পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন নানক। সে লক্ষ্যে আগামী ২৪ তারিখ ঢাবিতে নবীন বরণসহ ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তার মতে, এর মধ্য দিয়ে ঢাবিতে ‘ছাত্রলীগ-ছাত্রলীগ’ একটা রব উঠবে।
নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান ছাত্রলীগের প্যানেলকে বিজয়ী করতে দিক-নির্দেশনামূলক কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে জিততে হবে কিন্তু সেই রাজনীতিটা কী? আমাদের নেত্রীর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা, তার বিশ্বব্যাপী খ্যাতি। তিনি সৎ রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। তিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, এমন উপাধিতে তিনি ভূষিত। তিনি মানবিক গুণাবলিতেম শ্রেষ্ঠ। তিনি প্রাচ্যের তারকা। তিনি মাদার অব হিউম্যানিটিসহ নানান উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। তিনি হলেন আমাদের ইতিবাচক রাজনীতি, তিনি হচ্ছেন আমাদের রাজনীতির প্রতীক। ডাকসু নির্বাচনেও মূল রাজনীতি হলো, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে এবং বাংলাদেশের অভিযাত্রার বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছে, যারা যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের জায়গা করে দিয়েছে, যারা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করেছে, রাজনীতির সেই অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের শুভ শক্তির লড়াই।’
বর্তমান ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের ইতিবাচক দিকগুলোর প্রশংসা করে আব্দুর রহমান বলেন, ‘‘ইমেজগত জায়গায় প্রমাণ করতে হবে সমস্ত ছাত্র সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় ছাত্রসংগঠন হলো ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’। ছাত্রলীগকে যদি জিততে হয়, তাহলে আমাদের সামনে নিয়ে আসতে হবে শেখ হাসিনাকে। আমাদের একমাত্র উপাদান, একমাত্র অবজেকক্টিভ হলো শেখ হাসিনার কালজয়ী ও জাদুকরি নেতৃত্ব।’
আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচন: ভোটকেন্দ্র নিয়ে নিজ অবস্থানে অনড় ছাত্র সংগঠনগুলো
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ছাত্রলীগের কথিত ‘সিন্ডিকেটবাজ হিসাবে সংগঠনের সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত এই নেতা আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগের মধ্যে কোনো সিন্ডিকেশনের অস্তিত্ব নেই। ছাত্রলীগের মধ্যে কোনো গ্রুপিং নাই। ছাত্রলীগে ভাইয়ের কোনো রাজনীতি নেই। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কাউকে নেতা বানানোর সিঁড়ি হয়ে ব্যবহৃত হবেন না।’
আব্দুর রহমান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একমাত্র আশ্রয়স্থল নির্ভরযোগ্য এবং অপরিহার্য ঠিকানা হলো বঙ্গবন্ধু কন্যা। ছাত্রলীগের প্যানেল করার দায়িত্ব আমাদের কারও ওপর দেওয়া হয়নি। ছাত্রলীগের প্যানেল করার জন্য অন্য কোনো নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। আমরা ছাত্রলীগের ৫ জন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে গতকাল বলে দিয়েছি, ছাত্রলীগের হল কমিটির সম্ভাব্য প্রার্থী কারা, আপনারা একটা শর্ট লিস্ট তৈরি করুন। আমাদের দায়িত্ব হলো কেবল সেই তালিকা শেখ হাসিনার হাতে পৌঁছে দেওয়া। সুতরাং শেখ হাসিনা যেই প্যানেল ঘোষণা করবেন, এক্স হোক, ওয়াউ হোক, জেড হোক, কানা হোক, খোঁড়া হোক, আমরা সবাই সেই প্যানেলের পেছনে ঐক্যবদ্ধ আছি। ’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও ডাকসুর সাবেক ভিপি ও জিএস আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা চাই, ছাত্রদল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। কিন্তু ২০১৩ ও ২০১৪ সালের অস্ত্র-সন্ত্রাসের রাজনীতি, পেট্রোল বোমার রাজনীতি যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে না আসে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে। ’
ঢাবির সাবেক এই ভিপি আরও বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি অর্ধেক গণতন্ত্র ও অর্ধেক বোমাবাজির রাজনীতিতে ঘুরপাক খাচ্ছে। ’ গণতন্ত্রের রাজনীতি নিয়ে এলে আওয়ামী লীগে তাদের স্বাগত জানাবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এ সময় ভোটকেন্দ্র হলের ভেতরে করার পক্ষে মত দেন ডাকসু নির্বাচন পরিচালনা সংশ্লিষ্ট নেতারা।
সারাবাংলা/এনআর/এমএনএইচ