রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগের কথা ভুলে যাওয়া উচিত নয়: পেনি মরডন্ট
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২১:৩০
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘ মেয়াদি সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন যুক্তরাজ্য সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী পেনি মরডন্ট। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্ভোগ ভুলে যাওয়া উচিত নয়।’ বাংলাদেশের কক্সবাজারে দ্বিতীয়বারের মতো সফরে এসে মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) তিনি এই মন্তব্য করেন।
যুক্তরাজ্যের ঢাকার মিশন জানিয়েছে, নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সফরকারী প্রথম ক্যাবিনেটমন্ত্রী মরডন্ট। তিনি তার বাংলাদেশ সফরে কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে ত্রাণ খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে দেখা করেন। সহিংসতা থেকে সুরক্ষা পাওয়া নারীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় কীভাবে প্রতিবন্ধী শিশুরা চিকিৎসা পাচ্ছে, তাও পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। এই সব কার্যক্রম ইউকে এইড-এর সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে।
কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং এই সংকটের ফলে চাপে থাকা স্থানীয় জনগণের জীবন রক্ষার্থে মানবিক সাহায্য দিচ্ছে করছে যুক্তরাজ্য।
বিগত ২৫ আগস্ট ২০১৭ থেকে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে যুক্তরাজ্যের দাতা সংস্থা ইউকে এইড ১২৯ মিলিয়ন পাউন্ড আর্থিক সাহায্য দিয়েছে।
ঢাকায় মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাতে মরডন্ট উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হলে মিয়ানমারে যে সব পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, সেগুলোর ব্যাপারে তিনি জোর দেবেন। তিনি বলেন, এখন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবন রক্ষার্থে স্বল্প মেয়াদি সাহায্য দেওয়ার চেয়ে বেশি কিছু ভাবার, তাদের নিজেদের ও নিজ পরিবারের টেকসই জীবন নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা বাড়ানোর সময় এসেছে।
যুক্তরাজ্য সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী পেনি মরডন্ট বলেন, ‘ইতোমধ্যে এই গুরুতর মানবসৃষ্ট মানবিক সংকটটি ব্যাপক পরিসরে জাতিগত নিধন চালিয়েছে। আমার বার্মা সফরের সময় আমি সে দেশের সরকারকে প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছি, যেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের দাতাসংস্থা ইউকে এইড-এর সহায়তা ও ব্রিটিশ জনগণের অকৃপণ অনুদান প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর এবং এই সংকটের ফলে চাপে থাকা কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণের একটি বড় অংশের জীবন রক্ষার্থে মানবিক সাহায্য দিয়ে আসছে।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের প্রতি চাপ অব্যাহত থাকবে: যুক্তরাজ্য
পেনি মরডন্ট বলেন, ‘বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ রোহিঙ্গাদের এদেশে আশ্রয় দিয়ে মহান উদারতা ও মানবতা প্রদর্শন করেছে। তবে আমরা অনুধাবন করি যে বাংলাদেশ এই দায়িত্ব একা বহন করতে পারবে না। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্ভোগ যেন আন্তর্জাতিক এজেন্ডা থেকে সরে না যায়. রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্যে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ’
এছাড়াও ঢাকায় মরডন্ট আইসিডিডি’বি-এর কলেরা ও পানিবাহিত রোগ দূরীকরণের চিকিৎসা ও গবেষণা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্য আইসিডিডি’বি-এর গবেষণা কার্যক্রম ও জীবন-রক্ষার্থে উদ্ভাবনমূলক কার্যক্রমে সহায়তা করে আসছে।
এরআগে, ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে যুক্তরাজ্য সরকারের ৫০ লাখ পাউন্ড সহায়তাসহ ডিজাস্টার ইমারজেন্সি কমিটি আপিলের মাধ্যমে ব্রিটিশ জনগণের ৩ কোটি পাউন্ড আর্থিক পরিমাণ অকৃপণ অনুদানের ধারাবাহিকতা হিসেবে মিস মরডন্টের এই বাংলাদেশ সফর।
যুক্তরাজ্যের এই সহায়তার মাধ্যমে, ৩ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ জন জীবন রক্ষার্থে খাদ্য পেয়েছে, ৩৪ হাজারটি পরিবার বিছানা, কম্বল, পোশাক, গৃহস্থালির সামগ্রী পেয়েছে। ১ লাখা ২৪ হাজার ৪০০ জন নিরাপদ পানি ও শৌচাগারের সুবিধা পেয়েছে। ১৯ হাজার ৫০০টি পরিবার আশ্রয় নির্মাণের সামগ্রী পেয়েছে। ৪২ হাজার ৩০০ জন চিকিৎসা সেবা পেয়েছে। নারী, শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় তথা ২৮ হাজার ২০০ জন দুস্থ মানুষ সুরক্ষা লাভ করেছে।
এরআগে, গত ২০১৭ সালের নভেম্বর প্রথমবারের মতো কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির সফর করেন পেনি মরডন্ট।
সারাবাংলা/জেআইএল/এমএনএইচ