Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফের বাড়ছে চকবাজারের আগুন, নিয়ন্ত্রণে যোগ দিলো বিমান বাহিনী


২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:৫৫

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে চকবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে দাবি করার পর আবারও বাড়তে শুরু করেছে আগুন। নতুন করে তিনটি আবাসিক ভবনে আগুন লাগার খবর পাওয়া গেছে। ভোর রাত ৪টা ৫২ মিনিটে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ৪৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ভোররাত পৌনে ৫টার দিকে নতুন করে তিনটি ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এসব ভবন থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। তাদের ধারণা, এগুলো গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের শব্দ।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৪টার দিকে ফায়ারকর্মীদের সহায়তা দিতে যোগ দেয় বিমান বাহিনীর সদস্যরা। এর আগে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭ ইউনিট প্রায় ৫ ঘণ্টা চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছিল।

বিমান বাহিনীর প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ফায়ার সার্ভিস ইনচার্জ) স্কোয়াডন লিডার সঞ্জিব চৌধুরী বলেন, পানি স্বল্পতার খবর পেয়ে বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে সড়ক পথে চার গাড়ি পানি পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: কেমিক্যাল কারখানার বিরুদ্ধে ডিএসসিসি মেয়রের হুঁশিয়ারি

এছাড়া, দুইটি হেলিকপ্টার আকাশে উড়ছে। কাউকে রেসকিউ করার প্রয়োজন হলে কিংবা ওপর থেকে পানি দেওয়ার প্রয়োজন হলে। আরও ৪টি হেলিকপ্টার স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে।

রাত সোয়া ৩টায় আগুন নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) একেএম শাকিল নেওয়াজ। এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মেয়র বলেন, এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে যা কিছু করা প্রয়োজন- সব করা হবে। আগুন যেহেতু নিয়ন্ত্রণে এসেছে সেহেতু এখন সার্চ কমিটির মাধ্যমে দেখা হবে ভবনগুলোর ভেতরে আর কোনো মরদেহ আছে কি না, কেউ আটকা পড়েছেন কি না।

বিজ্ঞাপন

উদ্ধারকর্মী ফারুক হোসেন জানান, তিনি লালবাগ এলাকা থেকে উদ্ধার কাজে এসেছেন। ওয়াহিদ ম্যানসনের আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল। এরপর যখন উদ্ধার তৎপরতা শুরু করা হয়, তখন হঠাৎ আবার দাউ দাউ আগুন জ্বলতে শুরু করে।

ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে ছুড়িহাট্টা জামে মসজিদের পাশে ওয়াহেদ ম্যানসন নামে একটি পাঁচতলা ভবনে আগুন লাগে। এর পাশের আরও একটি চারতলা ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আরও তিনটি ভবনে ছড়ায় আগুন।

ওয়াহেদ ম্যানসনের পেছনেই রয়েছে বড় কাটারা কমিউনিটি সেন্টার। সেই কমিউনিটি সেন্টার এবং এর পূর্ব পাশের প্লাস্টিক কারখানায় আগুন লেগে যায়।

আরও পড়ুন: চারটি ভবনে ছড়ায় আগুন, উদ্ধার হচ্ছে লাশ

স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, আগুন লাগা চারটি ভবনের নিচে কমপক্ষে ত্রিশটির বেশি কেমিক্যাল গোডাউন ছিল। এসব গোডাউনের মধ্যে কয়েকটিতে গ্যাস সিলিন্ডার, বার্মিজ স্যান্ডেল, পারফিউম মজুদ করা ছিল। ভবনে লাগা আগুন এসব গোডাউনে ছড়িয়ে পড়লে আগুনের ভয়াবহতা বাড়তে শুরু করে।

ফায়ার কন্ট্রোলরুমের ডিউটি অফিসার মাহফুজ রিবেন সারাবাংলাকে জানান, মোট ১৩টি স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করছে। ঢাকা এবং পার্শ্ববর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জ থেকেও ইউনিট আনা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আরও জানান, সরু গলি হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমাদের কয়েকটি গাড়ির পানি শেষ হয়ে গেছে। স্থানীয়দের কাছে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। তারা পানি দিয়ে আমাদের সহায়তা করছেন। আগুন লাগার পরপরই এই এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হোটেল থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আশেপাশে কেমিক্যালের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আধুনিক ক্রেন ব্যবহার করা সম্ভব হলে আগুন নেভানো সহজ হতো।

বিজ্ঞাপন

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক একেএম শাকিল নেওয়াজ বলেন, সচেতনতার অভাবে আজকের এ পরিস্থিতি। যদি আগে থেকে আবাসিক এলাকা থেকে কারখানা সরিয়ে নেওয়া হতো তাহলে আজকের এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না। নিমতলী দুর্ঘটনার পর আমাদের সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিল।

আরও পড়ুন: বড় হচ্ছে চকবাজারের আগুন, সরু গলি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সাকিফ রহমান সারাবাংলাকে জানান, আমাদের কাছে ৪ জন এসছিল। ৩ জনকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, ১ জন ভর্তি আছে।

এদিকে আগুনে দগ্ধ এবং ভবন থেকে নামার সময় আহত অর্ধশত ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রাত দেড়টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক ডা. হোসাইন ইমাম সারাবাংলাকে বলেন, তাদের ইউনিটে এখন ১০ জনের মতো ভর্তি আছে। আরও এসেছিল যারা, তাদের অবস্থা বিবেচনায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে ১৮ জনের মতো হতে পারে। এদের মধ্যে দুইজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অন্য যারা আছেন তাদের ক্ষত গুরুতর হলেও আশঙ্কাজনক বলা যাচ্ছে না।

বার্ন ইউনিটে ভর্তি হওয়া রোগিদের একটি তালিকা দিয়েছে ইউনিট কর্তৃপক্ষ। সে অনুযায়ী, সেখানে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেনম, রেজাউল করিম (২১), সেলিম (৪৮), আনোয়ার (৫৫), জাকির (৫০), মাহমুদ (৫৭), মুজাফ্ফর (৩২), হেলাল (২৫), রুহিনা (২৬), সোয়াদ (২২)।

আরও পড়ুন: নিয়ন্ত্রণে চকবাজারের আগুন, ১১ লাশ উদ্ধার

সারাবাংলা/ইউজে/জেআইএল/এসএমএন/এটি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

দু’দিনে ভারতে ৯৯ টন ইলিশ রফতানি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৪

সম্পর্কিত খবর