‘পটকা ফাটিয়ে’ উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টা!
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২৩:০২
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজে কমান্ডো অভিযানে প্রাণ হারানো তরুণ ‘বোমা ও অস্ত্রসদৃশ বস্তু’ নিয়ে উঠেছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে এ সংক্রান্ত মামলার এজাহারে। এতে আরও বলা হয়েছে, উড্ডয়নরত উড়োজাহাজের ভেতরে সে দু’টি ‘পটকা জাতীয় বস্তুর’ বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল।
সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশন বিভাগের প্রযুক্তি সহকারী দেবব্রত সরকার বাদি হয়ে নগরীর পতেঙ্গা থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর ১৫।
আক্রান্ত বিমান ক্রু সাগরের বরাতে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বিমানটি (উড়োজাহাজ) উড্ডয়নের আনুমানিক ১৫ মিনিট পর একজন অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারী বিমানের মাঝখান থেকে দৌড় দিয়ে সামনে ককপিটে ঢুকতে চেষ্টা করে। তার কাছে বোমা ও অস্ত্রসদৃশ বস্তু দেখা যায়। দুষ্কৃতিকারী তার কিছু দাবিদাওয়া প্রধানমন্ত্রীকে শুনতে হবে বলে চিৎকার করে বলতে থাকে। অন্যথায় সে বিমানটি তার কাছে থাকা বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে ধ্বংস করে দেবে মর্মে বিমানের কেবিন ক্রু ও যাত্রীদের হুমকি দেয়। বিমানে থাকা পাইলট, কেবিন ক্রু এবং যাত্রীদের মধ্যে মৃত্য আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
আরও পড়ুন- ৪ মাস আগে তালাক দিয়েছি পলাশকে, এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে সিমলা
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, দুষ্কৃতিকারী এসময় দু’টি পটকা জাতীয় বস্তুর বিস্ফোরণ ঘটায়। এই পরিস্থিতিতে বিমানটি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এজাহারে ওই অস্ত্রধারীর মৃত্যুর ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে, ঢাকা থেকে ৫টা ১৩ মিনিটে ছেড়ে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমান (বিজি-১৪৭) উড্ডয়নের আনুমানিক ১৫ মিনিট পরে অজ্ঞাতনামা একজন দুষ্কৃতিকারী বোমাসদৃশ বস্তু ও অস্ত্র দেখিয়ে বিমানটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় বিমানের পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের কথোপকথন ইসিআরে স্থাপিত রিসিভারে মনিটরিং করা হয়। ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ওয়াকিটকির মাধ্যমে অবহিত করা হয়। তখন বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক সিভিল এভিয়েশন বিভাগের নিরাপত্তাকর্মী, আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন ও আনসার সদস্যদের বিমানবন্দরের রানওয়ে এবং অ্যাপ্রোনে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
বিকেল ৫টা ৪১ মিনিটে আক্রান্ত বিমানটি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পরপরই জরুরি বহির্গমন পথ দিয়ে যাত্রী ও কেবিন ক্রুরা দ্রুত বের হয়ে বিমানের পাখার ওপর অবস্থান করেন। তখন বাংলাদেশ বিমানের গ্রাউন্ড সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সদস্যরা দ্রুত বিমানে সিঁড়ি লাগিয়ে যাত্রী ও কেবিন ক্রুদের বিমান থেকে নামিয়ে আনেন।
এরই মধ্যে বিমানবাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটির এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমানের নেতৃত্বে বিমান বাহিনীর সদস্য, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো টিম, র্যাব-৭-এর কর্মকর্তা এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সিআইডি’র ক্রাইম সিন টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
আরও পড়ুন- ‘সিমলাকে একবার বাড়িতে এনেছিল পলাশ’
এরপর সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো টিম আক্রান্ত বিমানের অভ্যন্তরে অভিযান চালিয়ে অজ্ঞাতনামা একজন দুষ্কৃতিকারীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিমানের বাইরে অ্যাপ্রোনে নামিয়ে আনে। পরবর্তী সময়ে তার মৃত্যুর বিষয়টি জানা যায় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল কান্তি বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘মামলার এজাহারে যেসব অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো নিবিড়ভাবে তদন্ত হবে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা ও পরামর্শ মোতাবেক তদন্তের পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সোমবার রাতে দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে আসামির তালিকায় নিহত যুবকের নাম পলাশ আহমেদ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০১২-এর ৬ ধারা এবং বিমান নিরাপত্তাবিরোধী অপরাধ দমন আইন, ১৯৯৭-এর ১১ (২) ও ১৩ (২) ধারায় মামলাটি দায়ের হয়েছে।
এর আগে, রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ (বোয়িং-৭৩৭) ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। বিকেলে ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পর উড়োজাহাজটি ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে। এসময় দু’জন কেবিন ক্রুকে জিম্মি করে রাখার কথাও বলা হয়।
আরও পড়ুন- প্রযোজক থেকে ‘বিমান ছিনতাইকারী’
বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিমানটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। তখন পাইলট-যাত্রীদের নিরাপদে নামিয়ে নেওয়া হয়। শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনার মধ্যে সন্ধ্যার দিকে মাত্র ৮ মিনিটের কমান্ডো অভিযানে ছিনতাই কাণ্ডের অবসান ঘটে।
সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে জানান, অভিযানে ছিনতাইকারী নিহত হয়েছে। নিহত যুবকের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে- লাশের নাভির ওপরে ডানপাশে গুলিবিদ্ধ হওয়ার চিহ্ন আছে। এছাড়া শরীরে আর কোথাও আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই।
এদিকে, অভিযানের পর জানানো হয়েছিল, বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী যুবকের নাম মাহাদি। তার বয়স ২৬-২৭ বছর। তবে সোমবার র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওই যুবকের নাম মো. পলাশ আহমেদ। তিনি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের দুধঘাটা এলাকার পিয়ার জাহান সরদারের ছেলে।
অভিভাবক বা স্বজনরা এসে লাশ শনাক্ত করলে যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে সেটি তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন ওসি উৎপল বড়ুয়া।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর