Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাসপোর্টে ১০৯ কোটি টাকার ভ্যাট বকেয়া, আদায় হয়নি তিন বছরেও


২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১০:১৪

।। শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: পাসপোর্ট অধিদফতরের কাছে ১০৯ কোটি ৫৫ লাখ ২ হাজার ৪১৬ টাকা পায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু তিন বছর পার হলেও পাসপোর্ট অধিদফতরের কাছ থেকে পাওনা এই ভ্যাট আদায় করতে পারেনি এনবিআর। এমনকি দফায় দফায় আলোচনা হলেও কোনো সুরাহা মেলেনি। তবে পাসপোর্ট অধিদফতর বলছে, ‘জনগণের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় না করায়, ওই বকেয়া ভ্যাট পরিশোধ করা সম্ভব নয়।’

বিজ্ঞাপন

তবে এই অর্থ পরিশোধের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নিয়ন্ত্রণাধীন ঢাকা পশ্চিম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট থেকে পাসপোর্ট অধিদফতরের কাছে ২০১৫ সালের ৬ অক্টোবর চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করে।

ঢাকা পশ্চিম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট অফিস বলছে, পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়নের ওপর ভ্যাট রয়েছে। সেই হিসেবে পাসপোর্ট অধিদফতর ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৩৭ কোটি ৬৫ লাখ ৬৫ হাজার ১৯২ টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৬০ কোটি ১৩ লাখ ১৯ হাজার ২০৫ টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৭৩ কোটি ৭৪ লাখ ২৫ হাজার ৭৪৬ টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৪৩ কোটি ৬১ লাখ ৫১ হাজার ৪৩৯ টাকা পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়ন বাবদ আদায় করেছে পাসপোর্ট অধিদফতর। আদায়কৃত এই অর্থের ওপর ১৫ শতাংশ হারে মূসক আরোপযোগ্য মূল্য ৫৩৪ কোটি ৯০ লাখ ৯৭ হাজার ২৮ টাকা। ফলে ভ্যাটের পরিমান দাঁড়ায় ৮০ কোটি ২৩ লাখ ৬৪ হাজার ৫৫৪ টাকা ২ পয়সা।

আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে (এপ্রিল ১৫ পর্যন্ত) পরিশোধ করা হয়েছে ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৯১ হাজার ৯৯০ টাকা। অর্থাৎ বকেয়া ভ্যাটের পরিমাণ ৭৫ কোটি ৭৩ লাখ ৭২ হাজার ৫৬৪ টাকা। আর ২ শতাংশ হারে ২০১৫ সালের ৬ অক্টোবর পর্যন্ত সুদ হিসেবে পাওনা আরও ৩৩ কোটি ৮১ লাখ ২৯ হাজার ৮৫২ টাকা। অর্থাৎ সুদসহ ২০১৫ সালের ৬ অক্টোবর পর্যন্ত পাসপোর্ট অধিদফতরের কাছে এনবিআরের বকেয়ার পরিমাণ ১০৯ কোটি ৫৫ লাখ ২ হাজার ৪১৬ কোটি।

বিজ্ঞাপন

এরপর পার হয়েছে আরও ৪০ মাস। এই ৪০ মাসে আরও ২ শতাংশ হারে সুদের পরিমাণ ৮৭ কোটি ৬৪ লাখ ১ হাজার ৯৩২ টাকা। বর্তমানে সবমিলিয়ে পাসপোর্ট অধিদফতরের কাছে ১৯৭ কোটি ১৯ লাখ ৪ হাজার ৩৪৮ টাকা পায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এই বকেয়া আদায়ে পাসপোর্ট অধিদফতরের সঙ্গে এনবিআরের দফায় দফায় বৈঠক হলেও কোনো সুফল মিলছে না

অন্যদিকে পাসপোর্ট অধিদফতর বলছে, তারা পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়নের জন্য ওই সময়ে কোনো গ্রাহকদের কাছ থেকে কোনো ভ্যাট আদায় করেনি। সুতরাং এই অর্থ তাদের পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব নয়।

তবে এনবিআর বলছে, “কোনো সরকারি, আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশায়িত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোনো লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন, পারমিট প্রদান বা নবায়নকালে সুবিধা গ্রহনকারী ব্যক্তির কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থের উপর ১৫ শতাংশ হারে উৎসে মূসক কর্তনপূর্বক সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করতে হবে। শুধু তাই নয়, ২০১০ সালে ‘এসআরও’ জারির পর সরকারি দফতরের পাশাপাশি পাসপোর্ট অফিসগুলোকেও উৎসে মসূক কর্তনের বিষয়টি এনবিআর’র পক্ষ থেকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া এ বিষয়ে মূসক আদায়ে পাসপোর্ট অধিদফতরকে ২০১১ সালে চিঠি দিয়ে আবারও মূসক আদায় করার কথা বলা হলেও মূসক আদায় না করে থাকলে সেটা পাসপোর্ট অধিদফতরের গাফিলতি।”

ঢাকা পশ্চিম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার ড. মইনুল খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাসপোর্ট অধিদফতরের কাছে আমাদের বকেয়া ১৯৭ কোটি টাকার বেশি। পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়নের ওপর ভ্যাট বাবদ এই বকেয়া। দীর্ঘদিন হলেও প্রতিষ্ঠানটি বকেয়া ভ্যাট পরিশোধ করছে না। এ বিষয়ে এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত বকেয়া রাজস্ব আদায়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বকেয়া ভ্যাটের বিষয়ে পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মো. সোহায়েল হোসেন খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগে নতুন জয়েন করেছি। বিষয়টি সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই। এনবিআরের বকেয়া ভ্যাটের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে বিষয়টি সমাধানে আলোচনা করা হবে।’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘যারা ভ্যাট ফাঁকি দেয় তারা অপরাধ করছে। জনগণের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়া গুরুতর অপরাধ। পাসপোর্ট অধিদফতরের কাছে দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া রাজস্ব পড়ে আছে। আমরা চাই পাসপোর্ট দ্রুত বকেয়া রাজস্ব পরিশোধ করবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সারাবাংলা/এসজে/এমও

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পাসপোর্ট ভ্যাট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর