ট্রাফিক নিয়ম না মানাই সবচেয়ে বড় সমস্যা: প্রধানমন্ত্রী
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:২২
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা : রাজধানীর যানজট ভোগান্তি দূরীকরণে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা যারা চলাচল করি তারা কিন্তু ট্রাফিক নিয়ম মানি না। এখানেই সবথেকে বেশী সমস্যা। যেখানে-সেখানে গাড়ি থামানো, গাড়ি পার্কিং করে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করা হয়।
বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধী দলীয় সদস্য মুজিবুল হকের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।
রাজধানীর যানজট ও গণপরিবহন সংকট নিতে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মুজিবুল হক (কিশোরগঞ্জ-৩) বলেন, এ সরকারের অনেক অর্জন আছে। কিন্তু রাজধানীর মানুষ এই গণপরিবহনের জন্য খুবই ক্ষুব্ধ। গণপরিবহনে সমন্বিত একটা কিছু করা যায় কি না, এব্যাপারে নির্দেশনা জানালে ভাল হয়?
এবিষয়ে সংসদ নেতা রাজধানীর যানজট ভোগান্তি নিরসনে তার সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে নেওয়া পদক্ষেপ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখনি সরকারে এসেছি তখনি কিন্তু এই গণপরিবহনের উপর গুরুত্ব দিয়েছি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, একসময় যখন মিনিবাস দেওয়া হলো, সবাই মিনিবাসের ব্যবসা করতে নেমে গেলো। তখন এই গণপরিবহনকে সংকুচিত করা হলো। এর পরবর্তীতে যারা ক্ষমতায় আসলো তারা আবার এ ধরনের বাস সার্ভিস প্রাইভেটে তুলে দিয়ে গণপরিবহনকে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার পরিকল্পনাও নিয়েছিল। বিআরটিসি সার্ভিসটাই বন্ধ করে দেওয়া হয় কারণ সেটা লাভজনক নয়। এ ধরনের সিদ্ধান্ত কোন কোন সরকার নিয়েছিল। কিন্তু আমরা সরকারে আসার পর সেই ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ ছিলাম এবং সেই বিআরটিসি’কে নতুনভাবে ঢেলে সাজিয়ে অনেক নতুন নতুন বাস ক্রয় করে চালুও করেছি।
বিএনপি-জামায়াতের সরকারবিরোধী আন্দোলনে অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনায় গণপরিবহনের আগুন দেওয়ার ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবচেয়ে দুভার্গ্য যে, আন্দোলনের নামে বিআরটিসির প্রায় তিন চার’শ বাস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমরা ১৯৯৬ সালে যতগুলি বাস কিনে রেখেছিলাম ২০০৯ সালে এসে দেখি তার কোন হদিসেই নাই। সেগুলো ভাড়া খাটাতে দিয়ে নষ্ট করে ফেলে রেখে দিয়েছে। যখনি আমরা কিছুটা কাজ করে এগিয়েছি তখনি একটা বাধা এসেছে।
যাই হোক আমরা এব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। মেট্রোরেল থেকে যতকিছু প্রকল্প তার সবই কিন্তু গণপরিবহনের আওতায়, সেটাই আমরা করেছি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
রাজধানীর যানজট ভোগান্তিতে জনগণের অসচেতনতাকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘আমাদের যেটা সমস্যা সেটা হলো আমরা যারা চলাচল করি তারা কিন্তু ট্রাফিক রুল মানি না। এখানেই সবথেকে বেশী সমস্যা। আর রাস্তা ফুটপাত দখল করে যেখানে-সেখানে গাড়ি থামানো, যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং করা, এ ধরনের নানা সমস্যার সৃষ্টি করা হয়।’
এছাড়াও মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়ছে, গাড়ির সংখ্যারও বেড়ে যাচ্ছে, আবার গণপরিবহণ চলাচলও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আমরা বিআরটিসির জন্য আরও নতুন নুতন বাস ক্রয় করছি। আর এই পর্যন্ত যা বলেছি, সবই কিন্তু গণপরিবহনের জন্য। এটা জনগণের সুবিধার জন্য করা হচ্ছে বলেও সংসদকে অবহিত করেন তিনি।
সরকার দলীয় সদস্য দিদারুল আলম চট্টগ্রাম মহানগরীর যানজট নিরসনে মেট্রোরেল করার পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা জানান, এই বিষয়টা আমরা চিন্তাভাবনা করেছি এবং চট্টগ্রামের যানজট নিরসনে অনেকগুলো ফ্লাইওভার ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। বেশক’টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। এই টানেল নির্মাণ হয়ে গেলেও অনেকটা দূর হবে। এছাড়াও এয়ারপোর্ট পর্যন্ত সহজে পৌঁছানো যায়, সেই বাইপাসও নির্মাণ করেছি।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রাস্তার উন্নয়ন করা হচ্ছে এবং সেখানেও রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। চট্টগ্রামের ভিতরে চিন্তা করছি এবং আমরা এব্যাপারে আলোচনা করেছি কিভাবে এখানে যানজট নিরসনে আরও পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। কারণ এটা পাহাড়ি এলাকা, এখানে কাজ করতে গেলে একটু আমাদের চিন্তাভাবনা করতে হবে এবং যাদের এ ধরনের অভিজ্ঞতা আছে তাদের নিয়েই ফিজিবিলিটি স্টাডি না করে কিছু বলা সম্ভব নয়, কাজেই এই সমীক্ষাটা করে তখন আমরা এই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারবো। ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম নিয়েও আমাদের চিন্তাভাবনা রয়েছে।
আরো পড়ুন : আমার গাড়ির বহর ৫২ থেকে ৮টিতে নামিয়ে এনেছি: প্রধানমন্ত্রী
সারাবাংলা/এনআর/এইচএ/এসএন