Sunday 20 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মৃত পুলিশদের পরিবার ‘রাষ্ট্রীয় বঞ্চনা’র শিকার: ডিআইজি-কমিশনার


১ মার্চ ২০১৯ ১৪:২৯

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কর্তব্যরত অবস্থায় মারা যাওয়া পুলিশ সদস্যদের পরিবারের জন্য ফ্ল্যাট-চাকরির পাশাপাশি বিশেষ ভাতারও দাবি তুলেছেন চট্টগ্রামের দুই শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা। এসব পরিবার ‘রাষ্ট্রীয় বঞ্চনার’ শিকার হচ্ছে বলে মনে করছেন।

শুক্রবার (০১ মার্চ) পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান এই দাবি তুলেছেন।

এটা অত্যন্ত কষ্টের, অত্যন্ত দু:খের

ডিআইজি বলেন, ‘পুলিশ ছাড়া অন্য কোন সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন- হাসপাতালের একজন কর্মচারীও যদি কর্তব্যরত অবস্থায় মারা যান, তাহলে তার পরিবার পায় ৮ লাখ টাকা। আর পুলিশ যদি মারা যায়, তাহলে পায় ৫ লাখ টাকা। এটা আমাদের প্রতি এক ধরনের অবিচার করা হচ্ছে। এটা অত্যন্ত কষ্টের, অত্যন্ত দু:খের।’

আইজিপি’র মাধ্যমে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে জানিয়ে ডিআইজি বলেন, ‘আমরা সমতা চেয়েছি। আমরা বলেছি- অন্যান্যরা যদি ৮ লাখ টাকা পায়, আমাদের পাওয়া উচিৎ ১০ লাখ টাকা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নিজেই জানতেন না যে, পুলিশকে এভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে। শুনে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন যে, পুলিশ এভাবে বঞ্চিত হতে পারে না।’

২০১৩-১৪ সাল কিংবা পরবর্তীতে দেশজুড়ে সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচির তথ্য তুলে ধরে ডিআইজি বলেন, ‘এই চট্টগ্রামে জীবন্ত পুলিশ সদস্যকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। এই ধরনের আগুন সন্ত্রাসের ঘটনায় যারা মারা যাবেন, তাদের শুধু সরকারি সুযোগ-সুবিধা না, যত ধরনের রাষ্ট্রীয় খেতাব আছে সবগুলো দেওয়া উচিৎ।’

বিজ্ঞাপন

‘বেসামরিকরা যে সুবিধা পায়, আমরাও তা-ই, এটা হয় না’

একজন বেসামরিকের মৃত্যু এবং কর্তব্যরত অবস্থায় একজন পুলিশ সদস্যের মৃত্যুকে ‘এক করে’ না দেখার আহ্বান জানিয়েছেন সিএমপি কমিশনার মো.মাহাবুবর রহমান।

তিনি বলেন, ‘কর্তব্যরত অবস্থায় মারা গেলে বেসামরিকরা যে সুবিধা পায়, আমরাও তা-ই, এটা হয় না। অন্যান্য সংস্থায়, তারা ফ্ল্যাট-বাড়ি পায়, অনেক অনুদান পায়, বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। তাহলে কেন আমাদের পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর পরে সরকার এগিয়ে আসবে না, বেসরকারি ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসবে না?’

সিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘আমরা যদি মনে করতে পারি যে, মারা গেলে, সরকার আমাদের পাশে থাকবে, আমার ফ্যামিলি দুই মাসের মধ্যে একটা ফ্ল্যাট পাবে, তাহলে আমার সদস্যরা হাজারগুণ বেশি মনোবল নিয়ে কাজ করবে, কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বে।’

‘মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত দেশকে যেসব শক্তি আবার পেছনে নিতে চায়, তাদের আঘাতে যদি আমাদের মৃত্যু হয়, তাহলে কেন এই রাষ্ট্র আমাদের জন্য বিশেষ কিছু দেবে না ? আকুল আবেদন জানাচ্ছি, যারা কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, যারা জীবন দিয়েছে তারা বীর। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করতে পারিনি। কিন্তু এখন যারা দেশের জন্য লড়ছে, যারা জীবন দিচ্ছে, তারা অবশ্যই শহীদের মর্যাদা পাবে। রাষ্ট্র এবং সরকার আমাদের সেভাবেই দেখবে আশা করি।’ বলেন সিএমপি কমিশনার

তিনি বলেন, ‘মনোবল শক্ত থাকলে কেউ আঘাত করতে পারবে না। আঘাত করতে আসলে প্রতিঘাত করা হবে। যারা অস্ত্র নিয়ে আসে, আইনের মাধ্যমে অস্ত্র দিয়েই তাদের মোকাবেলা করতে হবে। মাদক ও জঙ্গির বিরুদ্ধে সামনের দিনের লড়াইয়ে আমরা জীবন উৎসর্গ করতে রাজি আছি।’

বিজ্ঞাপন

 

নগর পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশ সদস্য মারা গেলে সরকারি নিয়মে দাফনের জন্য ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি যোগদানের পর সিএমপি কমিশনারের তহবিল থেকে আরও এক লাখ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।

একই অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা জানান, মৃত্যুর পর পুলিশ সদস্যদের জন্য সরকারি অনুদানের পাশাপাশি পুলিশ সুপারের তহবিল থেকেও ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।

‘আমি নাকি কথিত বন্দুকযুদ্ধকে জায়েজ করছি’

একই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো.ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী আত্মরক্ষার্থে পুলিশ সদস্যদের ‘গুলি করার’ পক্ষে মত দেন।

উপাচার্য দু’টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তার লেখা নিবন্ধের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘অনেকে আমার সমালোচনা করেছেন যে, আমি নাকি কথিত বন্দুকযুদ্ধকে জায়েজ করছি। আমার লেখার মধ্যে আমি বলতে চেয়েছি যে- একজন মাদক ব্যবসায়ী আপনাকে গুলি করছে , আপনি গুলি খাবেন নাকি প্রতিহত করবেন? প্রতিহত করতে গিয়ে যদি আপনাদের জীবন দিতে হয়, তাহলে আপনারা জীবন রক্ষার জন্য, আপনাদের প্রথম কাজ হচ্ছে তাকে গুলি করে মেরে ফেলা।’

নগরীর হালিশহরে জেলা পুলিশ লাইনে পুলিশ সিভিক সেন্টারে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০১৯’ উপলক্ষে সম্মাননা প্রদান ও স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্ন জেলায় কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের পরিবারের সদস্যদের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়।

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক পুলিশ সুপার আল্লাহ বক্স, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ, ব্যবসায়ী অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন।

এছাড়া সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার কুসুম দেওয়ান, ট্যুরিস্ট পুলিশের চট্টগ্রামের ডিআইজি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ সভামঞ্চে ছিলেন।

সারাবাংলা/আরডি/আরএ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর