৬ বছরেও শেষ হয়নি ত্বকী হত্যার তদন্ত
৬ মার্চ ২০১৯ ০৯:৩৭
।। আশিকুর রহমান হান্নান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ছয় বছর পার হলো বুধবার (৬ মার্চ)। তবে ছয় বছরেও আদালতে দাখিল হয়নি মামলার অভিযোগ পত্র। চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড হিসেবে মনিটরিং সেলে অর্ন্তভুক্ত হলেও এখনও মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ শহরের পুরান কোর্ট এলাকা থেকে অপহরণের পর হত্যা করা হয় ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষার্থী তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে। অপহরণের দুইদিন পর ৮ মার্চ সকালে ত্বকীর লাশ ভেসে ওঠে শহরের চারারগোপ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খালে। ঘটনার দিন রাতেই ত্বকীর বাবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় আসামি অজ্ঞাত উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় ডিবি পুলিশকে। তবে ডিবি পুলিশের তদন্তে মামলাটির আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় রফিউর রাব্বির আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৮ মে উচ্চ-আদালত মামলাটি তদন্ত করতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) কে নির্দেশ দেন।
রফিউর রাব্বি বলেন, ত্বকী হত্যার ছয় বছর পেরোলেও বিচার প্রক্রিয়া তো দূরের কথা এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত অভিযোগপত্রই দাখিল করতে পারেনি তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা র্যাব। ত্বকী হত্যাকাণ্ডের এক বছরের মাথায় র্যাব এ হত্যাকাণ্ডের সকল রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল। কিন্তু ছয় বছরেও তারা অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেনি।
বিচার না হওয়ায় হতাশ হয়ে ত্বকীর মা রওনক রেহানা বলেন, ‘ছোট্ট একটা শিশুকে তারা বড় হতে দিল না। বিচারহীনতার সংস্কৃতির জন্য এমনটা হচ্ছে। যারা ক্ষমতায় আছে তারাই তো বিচার করবে। বিচার না হওয়ায় অপরাধীরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। সরকারের কাছে ত্বকী হত্যার বিচারের জন্য এখনো আমি তাকিয়ে আছি।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘ত্বকী হত্যার বিচার প্রাপ্তির জন্য আমাদেরকে এখনো আন্দোলন করতে হচ্ছে। আমরা চাই না এই আন্দোলন দীর্ঘ হোক।’
স্থানীয় মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত বন্ধ হওয়া এটিই প্রমাণ করে যে একটি প্রভাবশালী পরিবার এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। ত্বকী হত্যাকাণ্ডের সকল কিছু স্পষ্ট, তারপরেও এই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া আমাদেরকে হতাশ করে। ত্বকী হত্যার বিচারহীনতা বিচার বিভাগকে একধরনের প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে।’
ত্বকী হত্যা মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী প্রদীপ ঘোষ বাবু জানান, মামলার তদন্ত করতে গিয়ে র্যাব এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৫ জনকে গ্রেফতার করলেও তাদের মধ্যে একজন কারাগারে রয়েছে এবং চারজনই উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে গেছে। গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে দুইজন সুলতান শওকত ভ্রমর ও আসামি ইউসুফ হোসেন লিটন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলেও জানান এই আইনজীবী।
অন্যদিকে র্যাব বলছে মামলাটি স্পর্শকাতর। র্যাব ১১ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী শামশের উদ্দিন বলেন, ‘এটার তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন কবে জমা দেওয়া হবে সেটা বলা কঠিন। তবে সময় লাগবে। নির্দিষ্ট সময় বলা যাচ্ছে না। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কি পর্যায়ে আছে সেটাও বলা যাচ্ছে না। তবে তদন্তে কোন চাপ নেই। আমরা আমাদের মতো কাজ করে যাচ্ছি’।
সারাবাংলা/এসএমএন