ঢামেক মর্গে লাশের অপেক্ষায় অশ্রুসিক্ত স্বজনরা
৬ মার্চ ২০১৯ ১৫:০৬
।। সোহেল রানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: চুড়িহাট্টার আগুন কেড়ে নিয়েছিল স্বজনদের প্রাণ। সে আগুন এমনভাবেই পুড়িয়েছিল স্বজনদের, চেনার মতো অবস্থা ছিল না। দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও স্বজনরা তাই দিন গুনছিলেন, কবে পাওয়া যাবে সন্তান, ভাই-বোন বা মা-বাবার লাশটি। অবশেষ সেই অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। চুড়িহাট্টার আগুনে পোড়া যে ১৯টি মরদেহ শনাক্ত করা যায়, তার মধ্যে শনাক্ত হওয়া ১১টি মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। আর সেই মরদেহ বুঝে নিতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গে হাজির হয়েছেন স্বজনরা। চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডের প্রায় দুই সপ্তাহ পর ঢামেক মর্গের সামনে অশ্রুসিক্ত স্বজনদের এই উপস্থিতি দেখে কে বলবে— পৃথিবীর শোকে আয়ু দণ্ড তরে!
বুধবার (৬ মার্চ) দুপুরে ঢামেক মর্গে গিয়ে দেখা যায়, শনাক্ত হওয়া মৃত ১১ জনের মধ্যে আট জনের স্বজনরা এসেছেন এখানে। অপেক্ষা করছেন কখন স্বজনের লাশটি বুঝে পাবেন।
তাদের মধ্যে ছিলেন শামসুন্নাহার ও তার ছেলে সাইদুল ইসলাম সানি। শামসুন্নাহারের মেয়ে ও সানির বোন ফাতেমাতুজ জোহরা বৃষ্টির (২১) মরদেহটি বুঝে নেবেন তারা। জানালেন, বৃষ্টি ছিলেন হোম ইকোনোমিকস কলেজের চাইল্ড কেয়ার বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার সন্ধান রয়েছে জানিয়েই পরিবারের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল একটি প্রতারক চক্র। সেই অমানবিকতার শিকার পরিবারটি ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে বৃষ্টির লাশ শনাক্ত হওয়ায় খানিকটা স্বস্তিও পেয়েছে।
সানি বলেন, এখন অন্তত জানলাম, আমার বোনটি মারা গেছে। ওর লাশটা নিয়ে কবর দিতে পারব। এটুকুই সান্ত্বনা।
সালেহ আহমেদ লিপু (৩৬) ও তার স্ত্রী নাসরিন জাহানের (২৮) মরদেহ বুঝে নিতে ঢামেক মর্গে এসেছেন লিপুর ভাই ইসমাইল হোসেন। তিনি জানালেন, চুড়িহাট্টাতেই থাকতেন লিপু-নাসরিন দম্পতি। ৫ বছরের একটি ছেলেও ছিল তাদের। ঘটনার দিন ইসলামবাগ থেকে চুড়িহাট্টায় ফিরছিলেন তারা। আগুন লাগার পর থেকেই তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
ইসমাইল বলেন, ডিএনএ টেস্টের পর লিপু আর নাসরিনের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তাদের ছেলের লাশ এখনও শনাক্ত হয়নি। জানি না, বাবাটা কোথায় হারাল!
আগামসি লেনের বাসিন্দা নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএ শিক্ষার্থী তানজিল হাসান রোহানের (১৯) মরদেহও শনাক্ত করা হয়েছে। চার বন্ধু মিলে চুড়িহাট্টায় যাওয়ার পর তাদের দু’জন বেঁচে ফিরেছিলেন। আরেক বন্ধু আরাফাতের লাশ পাওয়া যায় সেখানে। তবে রোহানকে পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত তার মরদেহটিও শনাক্ত হয়েছে। বাবা হাসান খান আর মা রুবি বেগম এসেছেন ছেলের লাশ দিতে।
এর বাইরে নুরুজ্জামান, ইব্রাহীম, আহসানুল্লাহ’র মরদেহ নিতেও এসেছেন স্বজনরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মরদেহগুলোর কয়েকটি রয়েছে বিভিন্ন হাসপাতালের মর্গে। সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সেগুলো আজই উপস্থিত স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে চকবাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুন্সী আব্দুল লোকমান সারাবাংলাকে বলেন, এখন পর্যন্ত আটটি পরিবার তাদের স্বজনদের মরদেহ নিতে এসেছে ঢামেক মর্গে। মরদেহগুলো শনাক্ত করা অবস্থায় একেকটি একেক হাসপাতালে আছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এলে সেগুলো ঢামেক মর্গে এনে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
সারাবাংলা/এসএসআর/টিআর
১১ লাশ শনাক্ত চুড়িহাট্টার আগুন ডিএনএ পরীক্ষা ঢাকা মেডিকেল কলেজ ঢামেক মর্গ