সুলতান-মোকাব্বিরের শপথ কাল, বৈঠকে গণফোরাম
৬ মার্চ ২০১৯ ১৮:৪০
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণফোরাম থেকে নির্বাচিত দুই সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান শপথ নিচ্ছেন আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ)। সংসদ সচিবালয় থেকে জানানো হয়েছে, এদিন সকাল সাদে ১১টায় স্পিকারের কার্যালয়ে এই দু’জনকে শপথ পড়াবেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এর আগে ৭ মার্চ নিজেদের শপথ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গত শনিবার (২ মার্চ) সংসদ সচিবালয়ে চিঠি দেন এই দুই নেতা। রোববার (৩ মার্চ) স্পিকারের দফতরে পৌঁছায় সেই চিঠি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে গণফোরামের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে জয়ী হন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। ১৯৯৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে জয় পেয়েছিলেন, সংসদ সদস্য ছিলেন ২০০১ সাল পর্যন্ত। অন্যদিকে, মোকাব্বির খান সিলেট-২ আসনে গণফোরামের প্রার্থী হিসেবে উদীয়মান সূর্য প্রতীকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমর্থন নিয়ে জয়ী হন এবারের নির্বাচনে। এতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের বাকি ছয় জনই বিএনপির।
আরও পড়ুন- জোটের সিদ্ধান্তের আগে শপথ নিলে মনসুর-মোকাব্বিরকে বহিষ্কার
শপথ নেওয়ার বিষয়ে সুলতান মনসুর সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি আগামীকাল শপথ নিচ্ছি, এটা নিশ্চিত।’ দলের অনুমতির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, গণফোরাম বা ড. কামাল অনুমতি না দিলেও আমি শপথ নেব। গণফোরাম আমাকে দল থেকে বাদ দিলেও তাতে আমার কিছু যায় আসে না। একই বিষয়ে মোকাব্বির খান অবশ্য বলেন, ড. কামালের অনুমতি নিয়েই আমি শপথ নেব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মোহসীন মন্টু সারাবাংলাকে বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে বহাল আছি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ শপথ নিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যদি বহিষ্কারের নিয়ম হয়, তাহলে তাদের দু’জনকে বহিষ্কার করা হবে।
এদিকে, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন গণফোরামের একাধিক নেতা। এ ক্ষেত্রে আইনি বা সাংগঠনিক ব্যবস্থা কী হতে পারে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ বুধবার (৬ মার্চ) বিকেলে মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে বৈঠকে বসেছে গণফোরাম। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বৈঠক চলছিল।
আরও পড়ুন- সুলতান মনসুরের সামনে ৫ বাধা: চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ইসিতে
গণফোরামের একাধিক নেতা জানান, একই সিদ্ধান্ত নিতে মঙ্গলবার (৫ মার্চ) বিকেলেও বৈঠকে বসেন গণফোরামের সিনিয়র নেতারা। মতিঝিলে গণফোরাম সভাপতি ড. কামালের চেম্বারে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে নেতারা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। সে কারণেই ফের বৈঠকে বসেছেন তারা।
মঙ্গলবারের বৈঠকে অংশ নেওয়া এক গণফোরাম নেতা জানান, দলের সিনিয়র নেতাদের একটি অংশ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ও মোকাব্বির খানের শপথ নেওয়ার পক্ষে, আরেকটি অংশ বিপক্ষে। যারা শপথ নেওয়ার পক্ষে, তারা মনে করছেন শপথ না নেওয়াটা রাজনৈতিকভাবে একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। আর শপথ নেওয়ার পক্ষে যারা তারা মনে করছেন, শপথ নেওয়াটা হবে জনগণের সঙ্গে প্রতারণার সামিল।
এদিকে, রাজনৈতিক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার ক্ষেত্রে সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের সামনে কিছু বাধা রয়েছে। সেগুলো নিয়ে বির্তক তৈরি হলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনই (ইসি) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
আরও পড়ুন- সুলতান ও মোকাব্বির খানকে অপেক্ষার পরামর্শ গণফোরামের
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণফোরামের সদস্য হিসেবেই সুলতান মনসুর ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছেন। ড. কামাল হোসেন ঐক্যফ্রন্টের আনুষ্ঠানিক সভাপতি ছিলেন না। সুতরাং তাকে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে কোনো মনেনায়নপত্রে সই দেওয়ার জন্য ক্ষমতাও দেওয়া হয়নি। তিনি নির্বাচন করেছেন ধানের শীষ প্রতীকে, এটিও তার জন্য বড় বাধা। এছাড়া সুলতান মনসুরের নির্বাচনি মনোনয়নপত্রে সই দিয়েছেন মির্জা ফখরুল। এসব নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যেই বিভক্তি ও ঝামেলা আছে।
এ প্রসঙ্গে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা আছে, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়ে কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তিনি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন, অথবা সংসদে ওই দলের বিপক্ষে ভোট দেন, তাহলে সংসদে তার আসন শূন্য হবে।
এ বিষয়টি নিয়ে কোনো বির্তক হলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে, এই সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্যের আসন শূন্য হবে কি না, সে সম্পর্কে কোনো বিতর্ক দেখা দিলে শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য প্রশ্নটি নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো হবে এবং এমন ক্ষেত্রে কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।
সারাবাংলা/এইচএ/টিআর
গণফোরাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মোকাব্বির খান সংসদ সদস্যের শপথ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর