Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা আদায় করতে নিখোঁজ নাটক


৮ মার্চ ২০১৯ ০০:৪৫

।। সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: কমল চন্দ্র দাস (৪৫)। পেশায় সেলুন ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন ধরে রাজধানী মুগদার দক্ষিণ পাড়ায় সেলুনের দোকান তার। গত ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে বাসা থেকে বের হলেও আর ফেরেননি তিনি। তার ফেরার অপেক্ষায় চারদিন পার হলেও কোনো কূল-কিনারা না পেয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি মুগদা থানায় জিডি করেন নিখোঁজের স্ত্রী ও ছেলে। এরপর পুলিশ কমলকে খুঁজতে তদন্ত শুরু করে।

এদিকে, তদন্ত চলাকালেই নিখোঁজের ২৪ দিন পর পরিবার জানলেন এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। স্ত্রী প্রতীমা রাণী দাসের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা আদায়ে করতে সে নিখোঁজ হওয়ার নাটক করেছিল। আর নিখোঁজের পর মুক্তিপণ হিসেবে টাকাগুলো আদায় করতে চেয়েছিল সে। কিন্তু ২৪ দিনেও যখন তার নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে টাকা দেয়নি স্ত্রী, তখন এবার তিনি নিজেই গোপন তথ্য ফাঁস করে ফেললেন।

কিন্তু তার এমন কর্মকাণ্ড প্রকাশ হওয়ার পর পুলিশের ভয়ে এখনও সে প্রকাশ্যে আসছেন না। এমনকি কোথায় আছেন সেটিও পরিবারের সদস্যদেরকে জানাচ্ছেন না। তবে তার নিখোঁজের জিডি করার পর পুলিশ তাকে খুঁজতে নাম্বার ট্র্যাকিং করে জানতে পারে সে এখন সাভার এলাকায় আছেন।

পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ ধারণা করছেন, সেখানে তার ভাইয়ের বাসায় আছেন তিনি। তবে তাকে ধরতে চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে মুগদা থানা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) সকালে তার ছেলে দীপ্ত দাসের কাছেই ফোন করে নিখোঁজ কমল জানালেন- সে নিখোঁজ নয়, তার কাছ থেকে এলাকার মানুষজন টাকা পাবে, সে টাকা পরিশোধ না করলে বাসায় ফিরবেন না তিনি।

‘নিখোঁজ হওয়ার পর কখনও তার নাম্বার খোলা পায় আবার কখনও বন্ধ পায়। এভাবে এক সপ্তাহ পার হয়। এরপর একদিন এলাকার কয়েকজন বখাটে এবং তার দোকানের কর্মচারী আরিফ মিলে আমাদের কাছে ১ লাখ টাকা দাবি করে। এমনকি টাকা দিলে আমাদের ক্ষতি করার হুমকিও দেয় তারা। কিন্তু কিসের টাকা, কবে নিয়েছে এসব বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য কোনো তথ্য মিলছিল না। আবার বাবাও নিখোঁজ। তাই তাদের কথা বিশ্বাস করিনি। উল্টো ভেবেছিলাম হয়তো তারা বাবাকে গুম করেছে’ বলছিলেন- নিখোঁজ কমলের একমাত্র ছেলে দীপ্ত দাস।

বিজ্ঞাপন

দীপ্ত দাস সারাবাংলাকে বলেন, এ ঘটনার সপ্তাহখানেক পর অথাৎ ১৪/১৫দিন পর বাবা নিজেই তার নাম্বার থেকে ফোন করে জানালেন- তার কাছ থেকে লোকজন টাকা পাবে। সে টাকা দিয়ে দিতে। কিন্তু লোকজন কিসের টাকা পাবে আর কেনো টাকা ধার করেছিল এসব জানার আগেই ফোন বন্ধ করে দেয়। আর ৫/৬ দিন ফোন খোলেনি।

এরপর নিখোঁজের ২২ দিন পর সন্ধ্যায় একজন লোক ফোন করে বললো- তোমার বাবাকে খুঁজতে থানায় যেতে হবে না। আমাদের কাছে আছে। তার কাছ থেকে পাওনা টাকাগুলো পেলেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এরপর ফোন বন্ধ করে দেয়। কিন্তু আমাদের তো সে সামর্থ্য নেই যে দেড় লাখ টাকা শোধ করব।

বাবার এমন কর্মকাণ্ডে সে খুবই লজ্জিত জানিয়ে বলেন, কেউ টাকা পেলে সেটি নিখোঁজ না হয়েও বলতে পারতেন তিনি। তাহলে আমরা যেভাবে পারি করতাম। কিন্তু তিনি সেইটা না করে আমাদেরকে হেনস্তা করলেন। আমাদের দিয়ে পুলিশকেও বিরক্ত করলেন। আমরা এতদিন পুলিশকে দোষারোপ করেছি যে তারা বাবাকে খুঁজতে চেষ্টা করছে না। বাবার এমন অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই এবং তা অবশ্যই চাই। যাতে আর কোনো বাবা এমন না করে স্ত্রী সন্তানদের সঙ্গে।

এ বিষয়ে কমল দাসের স্ত্রী প্রতীমা সারাবাংলাকে বলেন, বিয়ের পর থেকে সে বিভিন্ন সময় বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে বলতো। তখন ভাবতাম সামান্য সেলুন দোকানে কাজ করে কত টাকা সেখানে পায়, তাই বাবার বাড়ি থেকে দেড় লাখ টাকা এনে দিয়েছিলাম বিদেশ যাওয়ার জন্য। সে টাকা দুতিন মাস পর বললো দালাল মেরে দিয়েছে। পরে আবার এক লাখ টাকা দিয়ে দোকান নিয়ে দিয়েছি। এভাবে অনেক লাখ টাকা বাপের বাড়ি থেকে আনছি। কিন্তু ৫/৬ বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর আর টাকা পয়সা আনতে পারি না।

বিজ্ঞাপন

মুগদা থানার জিডি তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) মজাহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, তার নিখোঁজের খবর পেয়ে আমরা সব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। এরইমধ্যে তার নাম্বার ট্র্যাকিং এবং কল লিস্ট টেস্ট করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী সে সাভার এলাকায় আছেন আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু এর মধ্যে শুনলাম সে নিখোঁজ নয়, নিখোঁজ হওয়ার নাটক করেছিলেন। তবে কি জন্য এমন করলেন সেটি এখনো আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। কিন্তু সে যে নিখোঁজ নাটক করেছে এটা একটা অপরাধ।

মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি প্রলয় কুমার সরকার বলেন, কমল দাস নিখোঁজ না হয়েও নিখোঁজের নাটক করেছে। এটি অবশ্যই অপরাধ। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে।

সারাবাংলা/এসএইচ/একে

নিখোঁজ. নিখোঁজ নাটক

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

গুলশানে দুইজনের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৫৫

ঢাকার পথে প্রধান উপদেষ্টা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৩৩

সম্পর্কিত খবর