দেন দরবারের পর অর্থ ছাড় হলো কর্ণফুলী টানেলে
২১ জানুয়ারি ২০১৮ ২২:৫৮
জোসনা জামান, স্টাফ করসপনডেন্ট
নানা দেনদরবারের পর কর্ণফুলী টানেলের অর্থায়ন জটিলতার অবসান হয়েছে। ছাড় করা হয়েছে কিস্তির প্রথম অর্থ। চুক্তি স্বাক্ষরের এক বছর এক মাস পর গত ৭ ডিসেম্বর অর্থ ছাড় করেছে চীনা এক্সিম ব্যাংক। এতে টানেল নির্মাণে অর্থায়ন জটিলতা কেটে গেল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এশিয়া উইং এর যুগ্ম সচিব ড. মতিউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, নভেম্বর মাসে ব্যবস্থাপনা ফি পাঠানোর পর প্রায় ১ হাজার ১শ ৮ কোটি টাকা ছাড় করেছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। গত ৭ ডিসেম্বর এ অর্থ ছাড় করেছে ব্যাংকটি। প্রথম কিস্তি ছাড় দেওয়ায় ইআরডির দীর্ঘ দিনের প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আর কোনও বাধা থাকলো না।
ইআরডি সূত্র জানায়, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা খরচে ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৫ সালের নভেম্বরে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। এর আগে ২০০৯ সালে টানেলটি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। টানেল নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ২০১১ সালে নিয়োগ করা হয় পরামর্শক। যৌথভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) ও হংকংয়ের ওভিই অরুপ অ্যান্ড পার্টনারস। নকশাও প্রণয়ন করা হয় একই সঙ্গে। জি টু জি ভিত্তিতে চীনের অর্থায়নে টানেলটি নির্মাণে আগ্রহ জানায় সিসিসিসি।
পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) অনুযায়ী সম্ভাব্যতা যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারির কাজ পাওয়ার সুযোগ নেই। তবে জি টু জি ঋণের আওতায় হওয়ায় সিসিসিসিকে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। ২০১৫ সালের জুনে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি সই হয়। মোট নির্মাণ খরচের মধ্যে ৭০ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা চীন জি টু জির আওতায় ঋণ হিসেবে দেওয়ার কথা। বাকি টাকা সরকারি তহবিল থেকে খরচ করা হবে।
নকশা অনুযায়ী, টানেলের শহর প্রান্ত থাকবে পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি পয়েন্টে। অপর প্রান্ত থাকবে নদীর পশ্চিম তীরে আনোয়ারার চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার (সিইউএফএল) এলাকায়। পূর্ব প্রান্তে ৫ কিলোমিটার এবং পশ্চিমে এক কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে।
সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণ দেবে। এছাড়া একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শি জিনপিং টানেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধনও করেন। কিন্তু এরপরই নানা জটিলতায় আটকে যায় ঋণের অর্থছাড়। ফলে টানেল নির্মাণের মূল কাজে স্থবিরতা তৈরি হয়। এরপরই শুরু হয় নানা দেন দরবার। পরবর্তীতে ব্যাপক আলাপ-আলোচনার পর গত নভেম্বর মাসের শেষ দিকে চীনা এক্সিম ব্যাংকের কাছে পাঠানো হয় মোট ব্যবস্থাপনা ফি। এক্ষেত্রে ঋণের শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ হারে ১৪ লাখ ২ হাজার ৩৯০ ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ১১ কোটি ২১ লাখ ৯১ হাজার ২০০ টাকা পরিশোধ করা হয়। এরপরই অর্থছাড়ের প্রক্রিয়া শুরু করে চীন।
সারাবাংলা/জেজে/জেএএম