Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডাকসু নির্বাচন কাল, এখনো হলে বহিরাগত-অছাত্ররা


১০ মার্চ ২০১৯ ১১:৩৩

।। কবির কানন, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট।।

দীর্ঘ ২৮ বছর পর আগামীকাল সোমবার (১১ মার্চ) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেসব হলে এখনো অবস্থান করছে অসংখ্য বহিরাগত ও অছাত্ররা। ফলে ভোটার ও বিভিন্ন প্রার্থীরা, ভোটকেন্দ্র এবং তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ৩৩৭ ও ৩৩৮ নম্বর কক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন করে ছাত্র (বহিরাগত) থাকছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া, পাঁচ বছর আগে ছাত্রত্ব শেষ হলেও ছাত্রলীগের গত কমিটির সহ-সম্পাদক রাসেল খান, কক্ষ নম্বর-৪০২ ও হল ছাত্রলীগের সাবেক নেতা তানজিদুল শিমুলও কক্ষ নম্বর ৪০৩ এখনো হলে অবস্থান করছেন।

একই হলের, ৩১৯ নম্বর কক্ষে হান্নান হোসেন তালুকদার ও ইকরামুল হক নামে দুইজন পুলিশের এসআই থাকেন। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সেশন, ২০০৭-০৮ ও ২০১০-১১। এরমধ্যে, হান্নান তালুকদারের পোস্টিং বংশাল থানায় ও ইকরামুল হকের পোস্টিং নিউমার্কেট থানায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ছাত্রত্ব শেষ হওয়া সত্ত্বেও, ওয়াদুদ নয়ন সওদাগর (সেশন ২০০৭-০৮, রুম নম্বর ৩১৭); নাহিদুজ্জামান নাহিদ (সেশন ২০০৭-০৮, রুম নম্বর ২১১), শরিফুল ইসলাম শরিফ (সেশন ২০০৭-০৮, রুম নম্বর ৩০১), রায়হান কাওসার (সেশন ২০০৮-০৯, রুম নম্বর ২৪৪), সামশ-ই-নোমান (সেশন ২০০৮-০৯, রুম নম্বর ২২৭), মনির উদ্দিন (সেশন ২০০৭-০৮, রুম নম্বর ২৭০), আতিকুর রহমান খান (সেশন ২০০৭-০৮, রুম নম্বর ২০৫), কামরুল হাসান জিপু (সেশন ২০০৮-০৯, রুম নম্বর ২৪৭) হলে অবস্থান করছেন। এরা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

বিজ্ঞাপন

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ছাত্রত্ব শেষ হওয়া সত্ত্বেও, ২০৯ নম্বর কক্ষে রুপম ও সাজ্জাদুল ইসলাম, ৩০৭ নম্বর কক্ষে জাহাঙ্গীর মনজিল পিপাস, ৩০৬ নম্বর কক্ষে হাসান মেহেদী, ৪১৯ নম্বর কক্ষে নাহিদ উকিল, ৩২১ নম্বর কক্ষে ফকরুল ইসলাম জুয়েল ও ৩২২ নম্বর কক্ষে গোলাম মোস্তফা থাকেন। এছাড়া, এই হলে অন্তত অর্ধশত অছাত্র আছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

অপরদিকে, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ছাত্রত্ব শেষ হওয়া সত্ত্বেও যারা হলে থাকেন তারা হলো – ৪৪ নম্বর কক্ষে নাসিম, ৪৬ নম্বর কক্ষে তুহিন, ৪৮ নম্বর কক্ষে মোর্শেদ, ৫২ নম্বর কক্ষে মেহেদী, ৬৪ নম্বর কক্ষে আফনান, ৬৮ নম্বর কক্ষে গোলাম সামদানি, ৭২ নম্বর কক্ষে গালিব, ৯৬ নম্বর কক্ষে শামিম, ১০৪ নম্বর কক্ষে নিলয়, ১২০ নম্বর কক্ষে হাবিব, ১০৯ নম্বর কক্ষে নাজমুল, ১২১ নম্বর কক্ষে তপু থাকেন।

এছাড়া, হলগুলোর গণরুম ও অন্যান্য রুমগুলোতে অবস্থান করা অন্তত শতাধিক বহিরাগত ও অছাত্রদের তালিকা সারাবাংলার কাছে রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের পাঁচটি হল ও ছাত্রদের বিজয় একাত্তর হল বাদে, বাকি সবকয়টি হলে এখনো বহিরাগত ও অছাত্ররা অবস্থান করছেন।

হল কর্তৃপক্ষ অছাত্র ও বহিরাগতদের বের হওয়ার জন্য জানুয়ারি মাসে নোটিশ দিলেও তারা বের হননি। কয়েকজন অছাত্রের সঙ্গে সারাবাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। ছাত্রত্ব না থাকা এবং নোটিশ দেওয়া সত্ত্বেও তারা কেন হলে অবস্থান করছেন এমন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে অধিকাংশের মন্তব্য, ‘এমন নোটিশ তো কর্তৃপক্ষ কতবারেই দিলো!’।

উল্লেখ্য, গত ১৯ জানুয়ারি প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির এক সভায় ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে হলকে বহিরাগতমুক্ত করতে অছাত্র ও বহিরাগতদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। অছাত্র ও বহিরাগত ব্যক্তি কারো কক্ষে অবস্থান করলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও জানায়। কিন্তু বহিরাগত থাকা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। হল প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি সভার সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আর কমিটির আহ্বায়ক সুফিয়া কামাল হলের অধ্যাপক ডা. সাবিতা রিজওয়ানা রহমান।

ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে হলগুলো বহিরাগত ও অছাত্র মুক্ত করার সিদ্ধান্ত হলেও নির্বাচনের দুদিন আগেও কেন তা কার্যকর করা হয়নি এমন প্রশ্ন করা হয় ডা. সাবিতা রিজওয়ানা রহমানকে। জবাবে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওরা তো সবাই চলে গেছে বলে জানি। আপনি যখন বললেন খোঁজ করব।’

এছাড়া, গতকাল শনিবার (৯ মার্চ) শাহবাগ থানায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার কথা বলেন। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বলা হয়, নির্বাচনের আগের দিন সন্ধ্যা ৬টা নির্বাচনের দিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কোনো বহিরাগত-অছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। কিন্তু এখনো হলগুলোতে বহিরাগত এবং অছাত্র অবস্থান করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে বহিরাগতদের অবস্থান সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রোক্টরকে অবহিত করলে তিনি জানান, ‘এটা হল প্রশাসনের কাজ। আপনারা তাদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করুন। হল প্রশাসন বললে আমরা তাদের সহযোগিতা করতে রাজি আছি।’

পুরো বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামানকে জানালে, তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

অছাত্র ও বহিরাগতদের হলে অবস্থান বিষয়ে ভোটার ও প্রার্থীদের শঙ্কা:

এদিকে নির্বাচনের আগে অছাত্র ও বহিরাগতরা হল না ছাড়াই নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কাবোধ করছেন ভোটার ও প্রার্থীরা। এ বিষয়ে স্বতন্ত্রজোট থেকে ভিপি প্রার্থী অরণী সেমন্তী খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ব্যালট বক্স অস্বচ্ছ। তারপর আবার অছাত্র ও বহিরাগতরা হলে অবস্থান করছে। আমরা এটা নিয়ে নানা ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করছি।’

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ থেকে ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নুর সারাবাংলাকে বলেন, ‘তারা যদি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু একটি নির্বাচন করতে চায় তাহলে তো পদক্ষেপ নিবে। অন্তত অছাত্ররা যেন হলে থাকতে না পারে। আমরা জানতে পেরেছি ২৪ ঘণ্টা অছাত্র ও বহিরাগত রেসট্রিকশন আছে। কিন্তু হল থেকে যদি তারা বের না হয় তাহলে লাভ নেই।’

বামছাত্র সংগঠনের জোট হতে ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী বলেন, ‘এখনও হল থেকে বহিরাগতরা বের হয়নি। ভোটের দিনে তাদের বাজে ব্যবহার করা হতে পারে বলে এরকম একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ফোন করা হলে, ছাত্রলীগের মনোনীত প্যানেল থেকে জিএস প্রার্থী গোলাম রাব্বানী, এজিএস সাদ্দাম হোসেন কাউকেই ফোনে পাওয়া যায়নি।

সারাবাংলা/কেকে/এনএইচ

ডাকসু নির্বাচন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) হলে অরাজকতা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

চট্টগ্রামে খালে ভাসছিল অর্ধগলিত লাশ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৩৩

বিএসইসি‘র চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৫১

সম্পর্কিত খবর