Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডাকসু নির্বাচন: আ.লীগের প্রত্যাশা ভোটের স্বাধীনতা


১০ মার্চ ২০১৯ ২২:৩০

।। নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: দীর্ঘ ২৮ বছরের অচলায়তন ভেঙে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় পার্লামেন্ট ও নেতৃত্ব তৈরির আঁতুড় ঘরখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে আলোর মুখ দেখে বহুল প্রতীক্ষিত এই নির্বাচন। এরই মধ্যে এই নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ক্যাম্পাসে এখন নির্বাচনের উৎসবমুখর পরিবেশ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরিতে ডাকসু’র এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহায়তা দেবে সরকার। আর ভোটাররা যে যার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে— ক্ষমতাসীন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এমন বার্তাই সবাইকে দিতে চান।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রতিষ্ঠার তিন বছর পর থেকেই যাত্রা শুরু হয় ডাকসুর। ব্রিটিশ শাসনামলের পর পাকিস্তানি সামরিক জান্তা সরকারের আমলেও এই নির্বাচন থেমে থাকেনি। এমনকি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সামরিক শাসক এরশাদের ৯ বছরের শাসনামলেও বন্ধ থাকেনি ডাকসু নির্বাচন। তবে ১৯৯১ সালে স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনের পর গণতান্ত্রিক সরকার যাত্রা শুরু করার পরই থেমে যায় ডাকসুর অগ্রযাত্রা। বিভিন্ন সময় এই নির্বাচন নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হলেও আয়োজন করা যায়নি ঢাবি শিক্ষার্থীদের নিজস্ব এই ছাত্র সংসদ নির্বাচন। শেষ পর্যন্ত ২৮ বছরের প্রতীক্ষা শেষে সোমবার (১১ মার্চ) অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ঢাবিতে বিক্ষোভ-মহড়ায় আচরণবিধি লঙ্ঘন ৪ প্যানেলের!

এই নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে সরকারের সহায়তার কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, আমরা চাই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি হোক। বাংলাদেশের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট হিসাবে খ্যাত এই ডাকসু। তাই আমরা চাই, এই নির্বাচন অত্যন্ত সুন্দর ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক। এটা আমাদের সকলের প্রত্যাশা। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ঢাবি প্রশাসনকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

এ বিষয়ে ডাকসু নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত আরেক নেতা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ২৮ বছর পর নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এটা অত্যন্ত আনন্দের খবর। এটাই সব মহলের, সব শ্রেণিপেশা, বিশেষ করে ছাত্র-শিক্ষক সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে নির্বাচন হচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা, এই নির্বাচনটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হোক। সরকার প্রধান হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই নির্বাচনে স্বচ্ছভাবে আয়োজনের সদিচ্ছার কথা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার কথা জানিয়েছেন। ডাকসু নির্বাচনটি হোক, এটা নিঃসন্দেহে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক ইচ্ছারই বহিঃপ্রকাশ।

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সরকারি দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হিসাবে আপনাদের সর্বশেষ বার্তা কী— জানতে চাইলে আব্দুর রহমান বলেন, এই নির্বাচন ঘিরে খুবই উৎসবমুখর পরিবেশ রয়েছে ক্যাম্পাসে। যে যার পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দেবে, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে— এটাই আমাদের শেষ বার্তা। আমাদের নেত্রী এরকম সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছেন।

আরও পড়ুন- ঢাবি উপাচা‌র্য কার্যালয়ে ৪ প্যানেলের ভি‌পি-জিএস, বিক্ষোভ

জানা গেছে, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকেই এই নির্বাচনকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া হয়। নির্বাচনে ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্রলীগের প্যানেলকে বিজয়ী করতে শীর্ষ নেতাদের নিয়ে মতবিনিময় ও রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এই নির্বাচন পরিচালনার জন্য দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে দায়িত্ব দেন। তারা হলেন— দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বি এম মোজাম্মেল হক এবং কার্যনির্বাহী সদস্য ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারুজ্জামান।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ডাকসু নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সেদিনের সভায় সূচনা বক্তব্যে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আমাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে তিনি পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ডাকসু হলো দ্বিতীয় পার্লামেন্ট। আমরা এই দ্বিতীয় পার্লামেন্টের নির্বাচন চাই, ডাকসু নির্বাচন চাই। আমি চাই লিডারশিপ তৈরি হোক। এই নির্বাচন অত্যন্ত সুন্দর, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করার বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

আরও পড়ুন- ডাকসুর আগের রাতে ডাস চত্বরে লাঠিসোঁটা জমা!

ওই মতবিনিময় সভায় নানক আরও বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ডাকসুর আসন্ন নির্বাচন জাতির কাছে রাজনৈতিক আঙ্গিনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর গুরুত্বপূর্ণ বিধায় আমরা আপনাদের সঙ্গে মতবিনিময় করছি। আমরা বিশ্বাস করি, গত ১০ বছর ধরে একটানা এবং গত সংসদ নির্বাচনে মানুষের বিপুল ভোটে জয়লাভ করার মধ্য দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে যে পরিবর্তন এনেছেন, সেই পরিবর্তনের ভাগিদার হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আপামর শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমাজ। কাজেই তাদের দ্বারা আমরা নিগৃহীত হব না। তাদের ভোট থেকে আমরা বঞ্চিত হব না— এটা আমরা বিশ্বাস করি।

এদিকে, রোববার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, এই নির্বাচন শিক্ষার্থীদের নির্বাচন। আমরা চাই এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক। দীর্ঘ ২৮ বছর এই নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। তাদের একটা সংসদ হবে। সেখানে শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে— এটিই আমাদের প্রত্যাশা। শিক্ষার্থীরা তাদের চিন্তা-চেতনা দিয়েই ভোটের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবেন।

তবে আমরা সবসময় মনে করি, ঢাবি শিক্ষার্থীরা সবসময় সমাজের একটি সচেতন অংশ হিসেবে বিবেচিত। তারা অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়ে লড়াই করেছে। এই শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন, ভূমিকা রেখেছেন। সেই শিক্ষার্থীরা অবশ্যই গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধরে রাখতে তাদের চিন্তার প্রতিফলন ঘটাবে বলেও জানান তিনি।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

ডাকসু ডাকসু নির্বাচন

বিজ্ঞাপন

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর