কূটনীতিক পাড়ার নিরাপত্তা জোরদার
১৭ মার্চ ২০১৯ ২৩:০০
।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো হয়েছে রাজধানীর কূটনীতিক পাড়া। বাড়তি হিসেবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সদস্যদেরও ‘হাই অ্যালার্ট’ অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি রাজধানী ছাড়াও দেশের যেসব এলাকায় খ্রিস্টান বা সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস বেশি, সেসব এলাকাতেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে একটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় ৪৯ জন নিহতের পর এই সতর্কতা জারি করা হয়। বিশেষ করে কূটনীতিক এলাকা ও যেসব এলাকায় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা বাস করেন, সেসব এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকার কূটনীতিক পাড়ায় বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রাত ১২টার ঢাকায় তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে। পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। এর বাইরে ঢাকায় খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী বসবাসকারী এলাকাতেও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। টহল পার্টির সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।’
কোনো হুমকির কারণে এত উচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে কি না— জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা আগাম নিরাপত্তা দিয়ে সতর্ক রয়েছি। কোনো থ্রেট নেই। কোনো কিছু ঘটার পর নিরাপত্তা বাড়িয়ে লাভ নেই। ঘটার আগে কী পদক্ষেপ নিয়েছি, সেটাই দেখার বিষয়। যেভাবে হামলার লাইভ প্রচারিত হয়েছে, তাতে উগ্রবাদ বেড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘দেশের মানুষকে নিরাপদে রাখতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সবাইকে এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা শান্তিতে বিশ্বাস করে। কোনো উগ্রপন্থাকে আমরা পছন্দ করি না।’
পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া) সোহেল রানা সারাবাংলাকে বলেন, কূটনীতিক পাড়ায় নিরাপত্তার পাশাপাশি দেশের অন্য অঞ্চলে যেখানে খ্রিস্টান ও অন্য ধর্মের মানুষ আছে, সেখানেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। টহল পার্টির মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, বগুড়া, রংপুর, সাভার, রাজশাহী ও চট্টগ্রামের খ্রিস্টান অধ্যুষিত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে।
শনিবার (১৬ মার্চ) রাতে গোপালগঞ্জ পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমরা এমনভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজিয়েছি যে কোনো সমস্যায় পুলিশকে ফোন করলেই সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে যাবে পুলিশ। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আমরা নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি।’
একই ধরনের কথা জানালেন রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি ড. খোন্দকার গোলাম ফারুকও। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘খ্রিস্টানসহ সংখ্যালঘু এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা সহিংসতা চাই না। ইসলাম শান্তির ধর্ম। শান্তিপূর্ণভাবেই আমরা থাকতে চাই। সে কারণেই পুলিশি টহল বাড়ানোসহ বিশেষ নজরদারিও করা হচ্ছে।‘
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ শনিবার বিএফডিসিতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসী হামলার পর আমরা নিরাপত্তা নিয়ে মোটেই পরিতৃপ্ত নই। এই হামলা আমাদের আরও সতর্ক থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে। তাই আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। সারাদেশে র্যাব সদস্যরা তৎপর রয়েছে।’
একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শনিবার রাতে সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলেই সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা পেয়ে গোয়েন্দারা মাঠে রয়েছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির পাশাপাশি সবার গতিবিধিও লক্ষ্য করা হচ্ছে। বিশেষ করে গির্জা, মন্দির, তারকা মানের হোটেল, প্যাগোডাসহ সংখ্যালঘু এলাকায় নজরদারি করা হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের সবসময় খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।’
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইটারনেটেও মনিটরিং করা হচ্ছে, যেন কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে উগ্রবাদ ছড়িয়ে দিতে না পারে। সাইবার সিকিউরিটি বিভাগের সদস্যরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি অব্যাহত রেখেছেন।
নিউজিল্যান্ডে হামলার পর বাংলাদেশের কেন নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে— তা জানতে চাওয়া হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের কাছে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার পর বিশ্বের যেকোনো দেশেই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি গোষ্ঠী তৈরি হতে পারে। এজন্য নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। বিশেষ করে আগে যারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং যারা জামিনে আছে, তাদের নজরদারিতে রাখাই এই মুহূর্তের কাজ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপকমিশনার মুহিবুল ইসলাম বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের সার্বক্ষণিক নিবিড়ভাবে নজরদারিতে রাখতেই সিটিটিসির যাত্রা শুরু হয়েছিল। জঙ্গি নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে সবসময় কাজ করা হচ্ছে। যারা উগ্রবাদে বিশ্বাস করে কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা করছে, বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডে মুসলমানদের ওপর হামলার পর তাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
সারাবাংলা/ইউজে/এসএমএন