সেই রুহুল আমিনের জামিন আদেশ প্রত্যাহার
২৩ মার্চ ২০১৯ ১১:২৪
ঢাকা: নোয়াখালীর সুবর্ণচরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের রাতে গৃহবধূকে ধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি মো. রুহুল আমিনকে দেওয়া জামিন আদেশ প্রত্যাহার করেছেন হাইকোর্ট। শনিবার( ২৩ মার্চ) সকালে এই আদেশ রিকল করে অবকাশকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের খাস কামরায় দুইপক্ষের আইনজীবীদের ডেকে নেন। এরপরই রুহুল আমিনের জামিন প্রত্যাহার করে আদেশ দেন আদালত।
আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, আজকে আদেশের ফলে রুহুল আমিনের জামিন বাতিল হল। এছাড়া ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি করায় আসামিপক্ষের আইনজীবীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধান বিচারপতির নজরে আনা হবে। একই সঙ্গে এ আসামি যাতে জামিন না পায় রাষ্ট্রপক্ষ তার সে ব্যবস্থা করবে।
গত সোমবার ১৮ মার্চ বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে জামিন দেন। তবে জামিনের বিষয়ে সংবাদটি গত ২১ মার্চ গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়।
আরও পড়ুন: সুবর্ণচরের সেই রুহুল আমিনের জামিন
বিষয়টি আদালতের নজরে আসলে শনিবার (২৩ মার্চ) ছুটির দিন থাকা সত্ত্বেও আদেশটি রিকল করেন আদালত। এ দিন বেলা ১১টার দিকে বিচারকরা চেম্বারে বসেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায়।
তিনি জানান, বিচারপতিরা তাদের চেম্বারে বসে যেখানে রাষ্ট্রপক্ষের ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের ডেকে নেন। চেম্বারে বসেই তারা পূর্বে আদেশের বিষয়ে ফের আদেশ দেন।
আসামি রুহুল আমিনের জামিন নিতে গিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বিভ্রান্ত করেছেন এমন অভিযোগ করে গত ২১ মার্চ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী জানিয়েছিলেন ‘জামিন আবেদনে উল্লেখ আছে এনএক্স-১৭ নম্বর কোর্টের কথা। কিন্তু ওই কোর্টে না গিয়ে এনএক্স ১৪ নম্বর কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে যায়। যেদিন জামিন হয় সেদিন আসলে আমরা বুঝতেই পারিনি কার জামিন হয়েছে। পরে দেখা যায় রুহুল আমিন জামিন নিয়ে গেছে।’
এ জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
কোন যুক্তিতে আসামিকে জামিন দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘আবেদনকারীর আইনজীবী আদালতে বলেছেন যে, মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর)-এ আসামি রুহুল আমিনের নাম নেই। তা ছাড়া মামলাটি এখনও তদন্তাধীন। এসব বিষয় তুলে ধরে জামিন চাওয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন: গ্রামের প্রতিবাদী নারীকে মানতে না পেরেই ধর্ষণ!
আদালত আসামি রুহুল আমিনের এক বছরের অন্তবর্তীকালীন জামিনের পাশাপাশি রুলও জারি করেছেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় অভিযুক্ত আবেদনকারী মো. রুহুল আমিনের জামিন কেন বৃদ্ধি করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। এছাড়া আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রুহুল আমিনের জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আশেক-ই-রসুল।
উল্লেখ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের রাতে মধ্যম বাগ্যা গ্রামের সোহেল, হানিফ, স্বপন, চৌধুরী, বেচু, বাসু, আবুল, মোশারেফ ও ছালাউদ্দিন ৪০ বছর বয়সী ওই গৃহবধূর ঘর ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে তারা ওই নারীর স্বামী ও চার সন্তানকে বেঁধে রেখে তাকে ঘরের বাইরে নিয়ে গণধর্ষণ করে। এ সময় তাকে পিটিয়ে আহতও করা হয়। ঘটনার পরদিন ৩১ ডিসেম্বর চরজব্বর থানায় ভুক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন।
চাঞ্চল্যকর এই মামলায় এ পর্যন্ত সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক (বহিষ্কৃত) রুহুল আমিনসহ ১০ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে কয়েকজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন।
সারাবাংলা/এজেডকে/এমএইচ/জেডএফ