পাকিস্তানি পণ্যবিহীন এক মেলার কথা
২৬ মার্চ ২০১৯ ১৯:০০
সারাবছরই রাজধানীতে কোনো না কোনো উপলক্ষে আয়োজন করা হয় বিভিন্ন মেলার। মূলত ছোট উদ্যোক্তা, অনলাইনভিত্তিক ব্যাবসাগুলো ক্রেতার কাছে পৌঁছতেই এসব মেলার আয়োজন করে। গত কয়েক বছর ধরেই এসব মেলায় চোখে পড়ে বিভিন্ন দেশের পণ্য, বিশেষ করে পাকিস্তানি পণ্য। এই পাকিস্তানি পণ্যের ভিড়ে একটা সময় কোনঠাসা হয়ে পড়ে মানসম্পন্ন দেশি পণ্য।
ক্রেতারা বাংলাদেশি পণ্য দেখে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন, উদ্যোক্তা বন্ধুদের কাছে এমন প্রতিকূল অভিজ্ঞতা শুনে মানসম্মত বাংলাদেশি পণ্যকে উৎসাহ জোগাতে ২০১৩ সালে মেয়ে নেটওয়ার্ক আয়োজন করে প্রথম রাঙতা মেলা।
সেই রাঙতা ছিল একেবারে নবীন উদ্যোক্তাদের নিয়ে। একঝাঁক সমমনা মানুষ যারা মেয়ে নেটওয়ার্কের বদৌলতে পরস্পরের পাশে ছিলেন তারাই শুরু করেন রাঙতা। তখনও তারা জানতেন না, কীভাবে সামনে এগোবেন বা কীভাবে একটা সফল মেলার আয়োজন করা যায়। তাদের ভরসা ছিল নিজেদের পণ্যের মানের ওপর আর ছিল দেশি পণ্যের প্রতি অগাধ ভালোবাসা।
এই ফাঁকে জানিয়ে যাই মেয়ে নেটওয়ার্ক সম্পর্কে। ‘মেয়ে’ বাংলাভাষী নারীদের নিয়ে মিলেমিশে গড়ে ওঠা একটি অলাভজনক, স্বেচ্ছাসেবী নেটওয়ার্ক। মেয়েদের বন্ধুতা, ক্ষমতায়ন ও নেতৃত্বের বিকাশ ‘মেয়ে’র প্রতিপাদ্য। যুগ যুগ ধরে নারীকে যে নীরবতার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, তার দেয়ালে নিজেদের সোচ্চার কণ্ঠ দিয়ে ফাটল ধরাতে মেয়েদেরকে একত্রিত করে বিশাল এক পরিবার হয়ে উঠেছে ‘মেয়ে’।
সময়ের সঙ্গে সেই পরিবারে যোগ দিয়েছেন পুরুষ এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষও। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় ‘মেয়ে’র অনেক অনেক উদ্যোগের মাঝে একটি হলো ‘রাঙতা’ নামের মেলাটি। ‘মেয়ে’ বিশ্বাস করে নারীর ক্ষমতায়নে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার কোনো বিকল্প নেই। সেই ভাবনা আর আলোচনার সূত্রে ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে কিছু নবীন উদ্যোক্তা নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম রাঙতা মেলা।
প্রথম মেলার অভাবনীয় সাফল্য উদ্যোক্তাদের নিয়ে ‘মেয়ে’র নতুন শাখা ‘হুটহাট’-এর সৃষ্টি ও প্রসারে উৎসাহ জুগিয়েছে। ব্যবসায়িক মুনাফা নয়, বরং ভালোলাগা এবং মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার দিয়ে গুণগত মানসম্পন্ন ক্রেতাবিক্রেতার সমাহার সৃষ্টি এবং বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগের মধ্য দিয়ে ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন ‘রাঙতা’র সাফল্যের মূলমন্ত্র।
তাই বাজারচলতি বিদেশি পণ্যের ভিড়ে একান্তই নিজস্ব সৃষ্টিশীলতা নিয়ে ব্যতিক্রমী পথে হেঁটে চলেছে ‘রাঙতা’। ‘মেয়ে’ থেকে যাত্রা শুরু করলেও হুটহাট এবং রাঙতায় ক্রেতা ও বিক্রেতা হিসেবে লিঙ্গনির্বিশেষে সকল মানুষ আমন্ত্রিত।
আগামী ৫ ও ৬ এপ্রিল ধানমণ্ডির মাইডাস সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে এবছরের বৈশাখের রাঙতা। প্রতিবারের মতো এবারের মেলাতেও পাওয়া যাবে না কোনো পাকিস্তানি পণ্য।
থাকবে অনলাইনে সুপরিচিত উদ্যোক্তা ও ডিজাইনারদের নকশা করা বৈশাখের পোশাক। এবারের রাঙতায় পটের বিবি, রেগা, রংধনু ক্রিয়েশন, বুবুর বায়না, কইন্যা, বেগুনি প্রজাপতি, অংশু, দয়ীতা, ওয়্যার হাউস, রানজুনি, আরুনিকা, নগর পলাশ, খুঁত, বিজেন্স, ক্লোসেট ডি তাতিয়ানা, দ্য ম্যালাকাইট ক্যাসকেট, কেয়ারশপ বিডি, সারানা, ঈহা, কারুজ, ওয়াও ক্রাফটস, এগারো, তুগুন, সরলা, লৌকিক, রংদারু আর প্রিয়তমেষু হাজির থাকবে আপনার আর আপনার পরিবারের সদস্যদের জন্য বৈশাখি পোশাকের পসরা নিয়ে।
গয়না চাইলে হাজির থাকবে ফুল্লোরা, বোকা বাকসো, লাল কাজল, রাঙ্গা, চিহ্ন, ব্যাড হ্যাবিট, ওয়াও ক্র্যাফটস, নৈঋতা, বক্স অব অর্নামেন্টস, চিত্রলেখাসহ বেশকিছু স্টল।
শহরের সবচাইতে সেরা টিপ নিয়ে মেলায় থাকবে আর্টোপোলিস, ব্যাড হ্যাবিট, লাল কাজল, সারানা আর দয়ীতা।
মজার মজার কেক আর খাবারও পাবেন পুনিজ কিচেন, সুগান ক্যাসলসহ বেশ কিছু স্টলে। থাকবে সুন্দরবনের মধু, গাওয়া ঘি, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি মশলাসহ নানান কিছু।
এসবের জন্য আসতে হবে সপ্তমবারের মতো আয়োজিত রাঙতা মেলায়। দেশি পণ্যের সম্ভার থেকে বেছে নিতে হবে পছন্দের পণ্যটি।
ছবি: রংধনু ক্রিয়েশন, লাল কাজল, নৈঋতা, বিজেন্স, তুগুন, এগারো, ঈহা, ওয়্যারহাউজ, আর্টোপোলিস
সারাবাংলা/এসএমএন