Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আগামী ডিসেম্বরেই ফ্ল্যাটে ওঠার স্বপ্ন ছিল মাকসুদ-রুমকির


৩০ মার্চ ২০১৯ ১১:২৭

ঢাকা: এফআর টাওয়ারের ১১ তলায় একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি করতেন মাকসুদুর রহমান জামি ও রুমকি রহমান। চাকরি সূত্রেই প্রণয়, তা থেকে পরিণয়। প্রতিদিন একসঙ্গেই গেন্ডারিয়ার ফরিদাবাদের বাসা থেকে অফিসে আসতেন, বাসায় ফিরতেন একসঙ্গেই। এফআর টাওয়ারের ভয়াবহ আগুন একসঙ্গেই কেড়ে নিয়েছে এই দ্ম্পতির প্রাণ।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর গেন্ডারিয়া ফরিদাবাদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাকসুদুর-রুমকি দম্পতির এই আকস্মিক প্রয়াণে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন স্বজনরা। প্রিয় দুই মুখ লাশ হয়ে ফেরার পর কারও মুখে যেন কথা সরছে না, চোখে কেবল অশ্রু। লোহারপুল জামে মসজিদে জুমার নামাজের পর জানাজা শেষে সেই চোখের জলেই শেষ বিদায় জানালেন তারা। জুরাইন কবরস্থানে একসঙ্গে দাফন করা হলো দু’জনকে।

বিজ্ঞাপন

জামির বন্ধু মুকিত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে যোগ দেয় জামি। রুমকি সেখানেই চাকরি করতেন। সেই সুবাদে পরিচয়, সম্পর্ক, বিয়ে। ওদের দু’জনের বোঝাপড়া খুব ভালো ছিল। রুমকি চার মাসের অন্তঃস্বত্বা ছিল। এত অল্প বয়সে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হলো তাদের— এটা মেনে নেওয়া যায় না।’

মুকিত বলেন, বছর ছয়েক আগে জামির বাবা মারা যায়। একমাত্র বোন তখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। তখন থেকে বোনের দেখাশোনার সব দায়িত্ব জামিই নিজের হাতে তুলে নেয়। এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। জামির ইচ্ছা ছিল, বোনকে অনেক পড়ালেখা করাবে। এসব এখন অতীত।

ছেলের শোকে বারবার সংজ্ঞা হারাচ্ছিলেন জামির মা। বলছিলেন, ‘দুপুরে পৌনে ১টার দিকে আগুন লাগার পর ছেলে ফোন দেয়। বলে, ‘মা, আগুন লাগছে। তোমরা দোয়া করো। আগুন ওপরে আসেনি। তবে প্রচণ্ড ধোঁয়ায় টিকতে পারছি না। আমরা ধোঁয়ায় নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। এরপর আর কথা হয়নি ছেলের সঙ্গে। পরে ফোন করেও পাইনি ছেলেকে। ছেলে আমার লাশ হয়ে ফিরল।’

বিজ্ঞাপন

জামির একমাত্র বোন চিৎকার করে বলছিল, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর ওই আমার বাবা ছিল। সব আবদার পূরণ করত। ভালো জায়গায় পড়াতে চেয়েছিল। অনেক বড় করে বিয়ে দিতে চেয়েছিল। আজ সেও চলে গেল। আমার আর কিছুই থাকল না…।’

বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ে বোনটি। আবার বলে, পাশের বিল্ডিংয়ে কাজ চলছে, সেখানে ফ্ল্যাট কিনেছিল। ব্যাংক থেকে ৭০ লাখ টাকা লোন নিয়েছিল ভাই-ভাবি। ভাবি সন্তানসম্ভবা ছিলেন। সে খবরে আমাদের যে কী আনন্দ! সেই শিশুটিও পৃথিবীর মুখ দেখতে পারল না। আমাদের যে আর কিছুই যে থাকল না।

মেয়েকে হারিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেছেন রুমকির মাও। বিড়বিড় করে বলছিলেন, ‘আগুন লাগার পর মেয়ে কয়েকবার ফোন করে বলেছে, মা আর টিকতে পারছি না। কষ্ট হচ্ছে। তোমরা দোয়া করো। এরপর আবার দুপুর ২টা ১০ মিনিটে ফোন করে জানায়, মা আর পারছি না। দম বন্ধ হয়ে আসছে। জামি তার বেয়ে নেমে গেছে। দেখি কিছু করতে পারে কি না। নীলফামারীতে ফোন করে বাবার কাছেও দোয়া চেয়েছে। এরপর আর ওকে পাওয়া যায়নি। শেষে লাশ হয়ে ফিরল মামনি আমার। রুমকি জানতই না যে জামিও লাফ দিয়ে মারা গেছে।‘

বনানীর এফআর টাওয়ারের আগুনে প্রাণ হারানো অন্যদের বাড়িতেও চলছে মাতম। আদরের সন্তানকে হারিয়ে স্তব্ধ মা-বাবা, স্বজনদের চোখেও কেবল অশ্রুর ধারা।

রংপুরে স্ত্রীর কাছে মোবাইল ফোনে বাঁচার শেষ আকুতি জানিয়েছিলেন মোস্তাফিজার রহমান। কিন্তু আগুনের ধোঁয়া বাঁচতে দেয়নি তাকে। পীরগঞ্জে তার গ্রামের বাড়িতে শোকার্ত মানুষের ঢল। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন স্ত্রী। জানান, ফোনে বারবার বলছিলেন, আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। আমাকে মাফ করে দিও।

দিনাজপুর শহরের বালুয়াডাঙ্গার আব্দুল্লাহ আল মামুন। চাকরির সুবাদে স্ত্রী ও দুই শিশুকন্যা তানহা ও তাহিয়াকে নিয়ে থাকতেন ঢাকায়। কাজ করতেন এফআর টাওয়ারের ১০ তলায় হেরিটেজ এয়ারলাইন্স নামে একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে। ঘটনার সময় আগুন থেকে বাঁচতে জানালা দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। নিচে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় তার।

এফ আর টাওয়ারে আগুনে প্রাণ হারানো আরেকজন কুষ্টিয়ার ইকতিয়ার হোসেন মিঠু। ১১ তলায় একটি অফিসে কর্মরত ছিলেন তিনি। তার অকাল মৃত্যুতে আড়াই বছরের সন্তান নিয়ে এখন দিশেহারা স্ত্রী সালমা।

শবেবরাতের ছুটিতে ছেলে বাড়ি আসবে, সেই অপেক্ষায় ছিলেন মা। কিন্তু পাবনার আতাইকুলার চরপাড়া গ্রামে এলো আমির হোসেন রাব্বির মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স। রাব্বির বাবা বলেন, আজকে আমাকে ছেলের লাশ কাঁধে করে নিয়ে দাফন করতে হচ্ছে। অথচ ছেলে আমাকে কাঁধে নিয়ে কবরস্থানে যাবে, এটুকুই তো আশা করেছিলাম।

মাত্র দু’দিন আগে নিজেদের তৃতীয় বিয়েবার্ষিকী পালন করেছিলেন জারিন তাসনিম বৃষ্টি। সবশেষ গত ঈদ কাটিয়েছেন যশোরে গ্রামের বাড়িতে, মা-বাবার সঙ্গে। এরপর আর বাড়ি যাননি বৃষ্টি। আর কখনও যাওয়াও হবে না। এফআর টাওয়ারের আগুন তার বাড়িতে ছড়িয়ে দিয়েছে চিরস্থায়ী শোক।

সারাাবাংলা/ইউজে/টিআর/জেএএম

এফ আর টাওয়ারে আগুন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ইনজুরিতে মৌসুম শেষ রদ্রির
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:২৮

সম্পর্কিত খবর