Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চবির সাবেক শিক্ষার্থীকে মারধর: ৭ ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা


৩১ মার্চ ২০১৯ ২০:৪৪

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় সাক্ষাৎকার দিতে আসা এক সাবেক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির সাত ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার (৩১ মার্চ) চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিম কামরুন্নাহার রুমী’র আদালতে মামলাটি দায়ের করেন মারধরের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সাবেক ছাত্র মো.এমদাদুল হক।

বিজ্ঞাপন

আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন—চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র আনোয়ার হোসেন, আসিফ মাহমুদ শুভ ও মোকসেদ আলী ওরফে মীলু প্রামাণিক, একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র জাহিদুল হাসান ও রফিকুল ইসলাম, তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আসির উদ্দিন ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শরীফ উদ্দিন। এছাড়া, এই মামলায় আসামি হিসেবে আরও ৫-৬ জনকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মামলার বিষয়ে বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ শাহজাহান সারাবাংলাকে বলেন, ‘তুলে নিয়ে মারধর, চাঁদাবাজি, হুমকি, পকেট থেকে টাকা-মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। আদালত পিবিআইকে তদন্ত করে ১৬ মে’র মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।’ তিনি আরও জানান, ‘মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৪৩, ৩২৩, ৩৭৯, ৩৮৫, ৩৪১, ৩৬৩, ৫০৬ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ করা হয়েছে।’

মামলার বাদী এমদাদুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক পদের নিয়োগ পরীক্ষায় সাক্ষাৎকার দেওয়ার কথা জানানো হয়। সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য গত ২৭ মার্চ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদে গিয়েছিলেন। মামলায় অভিযুক্তদের সঙ্গে সেখানে তার দেখা হয়। অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন ও মোকসেদ আলী নিজেরাই এগিয়ে এসে এমদাদুলের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

কথোপকথনের একপর্যায়ে আনোয়ার এমদাদুলকে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ না নিতে চাপ দেন। এমদাদুল কারণ জানতে চাইলে আনোয়ার বলেন, ‘আপনি তো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরীক্ষা দিতে আসেননি। এখানে যারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে আসছে প্রত্যেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আসছে। ছোট ভাইদের কিছু আর্থিক দাবি-দাওয়া আছে, তা আপনাকে মেটাতে হবে। তা না হলে আপনি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।’

বিজ্ঞাপন

এসময় এমদাদুল কোনো দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানলে সেখানেই তাকে মারধর শুরু করে এবং পরণের শার্ট ছিঁড়ে ফেলে। পকেট থেকে দু’টি মোবাইল ফোন ও ৫ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। এমদাদুল দৌড়ে ওই স্থান ত্যাগ করতে চাইলে তাকে ধাওয়া দিয়ে ধরে ফেলে আনোয়ার ও জাহিদুল। এরপর কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে নিয়ে গিয়ে অভিযুক্ত সবাই মিলে তাকে বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ এমদাদুলের।

তিনি আরো জানান, মারধরের পর তাকে হাটহাজারী থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ওইদিন দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত থানা হাজতে আটকে রাখার পর এমদাদুলকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

এমদাদুল কান্নাজড়িত কণ্ঠে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি কখনোই শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না। শুধু শুধু অপবাদ দিয়ে আমাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। তারা আমাকে নিয়োগ পরীক্ষায়ও অংশ নিতে দেয়নি। তাদের জন্য আমার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।’

উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে শিবির কর্মী সন্দেহে এমদাদুল হককে তুলে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে নিয়ে মারধর করা হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০০৮-২০০৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র এমদাদুল হক ২০১৫ সালে স্নাতক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করায় স্বর্ণপদক পান।

সারাবাংলা/আরডি/এসবি

মামলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর