Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তারা শোনালেন বেঁচে ফেরার গল্প


৩১ মার্চ ২০১৯ ২০:০৯

ঢাকা: জীবন বাজি রেখে রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ার থেকে বেঁচে ফেরার গল্প শোনালেন ভবনটিতে কাজ করতেন এমন কয়েকজন। রোববার (৩১ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দেওয়া শেষে সারাবাংলার সঙ্গে কথা বলেন তারা। জানান, সেদিন কী হয়েছিল, কী ঘটেছিল তাদের সঙ্গে।

তেমনই একজন এস এম কামাল সবুজ। এফআর টাওয়ারের নবম তলায় অবস্থিত ইমপায়ার গ্রুপে চাকরি করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

সবুজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভবনে আগুন লাগার খবর পেয়ে দরজা দিয়ে বেরিয়ে বেশ কয়েকজন মিলে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে যাই। কিন্তু অষ্টম তলায় গিয়ে বুঝতে পারি আগুন বের হচ্ছে। এরপর সিঁড়িতে ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যাই। কোনোরকমে জীবন বাজি রেখে ওপরে উঠে যাই।’

ধোঁয়ায় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল জানিয়ে কামাল সবুজ বলেন,‘কিন্তু কিছুই করার ছিল না। মাথায় চিন্তা ছিল বের হয়ে আসতেই হবে। শার্ট খুলে মুখে বেঁধে এরপর বের হয়ে আসি ছাদে। ছাদ থেকে পাশের ভবন আহমেদ টাওয়ার দিয়ে নিচে নেমে আসি।’

৩ মাসের আগে ব্যবহার করা যাবে না এফআর টাওয়ার

ওই ঘটনায় নিহত সহকর্মী মোস্তাফিজুর রহমানের কথা উল্লেখ করে সবুজ বলেন, ‘আমার সহকর্মী মোস্তাফিজুর রহমান ধোঁয়ায় সিঁড়িতেই মারা গেছে। মোস্তাফিজ শার্ট খুলেছিল ঠিকই কিন্তু মুখে বাঁধতে পারেনি। যার কারণে প্রচণ্ড ধোয়ায় মারা যায়। পরে সাদা গেঞ্জি, প্যান্ট আর জুতা পরিহিত অবস্থায় সিঁড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। আরও দুই সহকর্মীকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।’

তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দিয়েছেন মোট ২৪ জন। এর মধ্যে সাক্ষ্য দেন ২১, ২২ ও ২৩ তলায় অবস্থিত কাশেম গ্রুপের কর্মীরাও। এদের মধ্যে ইবনে হাসিব সালাউদ্দিন বলেন, ‘আগুন অনেক নীচে লাগলেও ধোঁয়ায় পুরো ভবন ছেয়ে যায়। জানালা খুলে দেখি মানুষজন ওপরে তাকাচ্ছে আর অনেকের মধ্যে ভবনের কাঁচ ভেঙ্গে বাঁচার আকুতি দেখতে পাই। ২১, ২২ ও ২৩ নম্বর ফ্লোরে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত কোনো ধোয়া আসেনি। এরপর ধোয়া আসলে আমরা বের হয়ে ছাদে উঠতে যাই। ভেবেছিলাম আগুন বা ধোঁয়া এতো ওপরে আসবে না।’

বিজ্ঞাপন

প্রাণ বাঁচাতে ভবন থেকে লাফ (লাল বৃত্ত চিহ্নিত)

অফিস থেকে বের হওয়ার সময় সহকর্মী পক্ষাঘাতগ্রস্ত মঞ্জুর হাসানকে রেখেই বের হয়ে যান সবাই। কারণ প্রত্যেকেই নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন। ছাদে গিয়ে প্রায় ২০০ জনের মতো মানুষ দেখতে পান তিনি সালাউদ্দিন। তিনি দেখতে পান, এসব মানুষের কেউ কাঁদছেন, কেউ বাসায় ফোন করে দোয়া চাইছেন, কেউ ছাদেই নফল নামাজ পড়ছেন আবার কেউ কিভাবে ছাদ থেকে বের হওয়া যায় সেই চিন্তা করছেন। সবার বুদ্ধিতেই পাশের ভবন আহমেদ টাওয়ারের সঙ্গে মই লাগিয়ে বের হয়ে যান বলে জানান তিনি। বিকেল ৫ টার দিকে ফায়ারের কর্মীরা মইটি নিয়ে আসেন।

এরপরেও সহকর্মীদের আরও চারজন আহত হয়েছেন বলে জানান সালাউদ্দিন।

এফআর টাওয়ারে ইমার্জেন্সি এক্সিট ছিল মাত্র ২৪ ইঞ্চি

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন, হেরিটেজ হলিডের কর্মী মামুন আব্দুল্লাহ। তিনি জানান, ভবনটির ১০ তলায় কর্মরত ছিলেন। আগুন লাগার সংবাদ পেয়েই দ্রুত গেট খুলতে গিয়ে দেখেন যে  দরজা খুলছে না। তখন বাইরের গ্লাস ভেঙ্গে অনেকে বের হয়। কেউ তার বেয়ে নামতে গিয়ে পড়ে যায়। কেউ কেউ ফায়ার সার্ভিসের ল্যাডারের সাহায্যে উদ্ধার হন।

মামুন বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকজন বের হতে পারিনি। আমরা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গিয়ে বুঝতে পারি চারপাশ প্রচণ্ড ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। বেশিক্ষণ টিকতে না পেরে ১৭ তলার ভেতরে ঢুকে পড়ি। সেখানে কনফারেন্স কক্ষে আশ্রয় নেই ৩২ জনের মতো। বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্তও ওই কক্ষে ধোঁয়া ঢোকেনি। এরপর ধোঁয়া বাড়তে থাকলে স্ট্যান্ড ফ্যান দিয়ে গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়। এরপর গ্রিল ভাঙার পালা। সহজে ভাঙছিল না। বাঁচতে হবে তাই সবার প্রচেষ্টায় একটা সময় গ্রিল ভেঙে যায়। এরপর পাশের ভবনের গ্লাস ভাঙতে পারলেও গ্রিল ভাঙা যাচ্ছিল না। তখন এক বন্ধুকে ফোন করে পাশের ভবনে আসতে বলি। ওপরে উঠে গ্রিল ভাঙতে বলি। বন্ধুরা বেশ কয়েকজন উঠে গ্রিল ভাঙতে পারছিল না। হতাশ হয়ে যাচ্ছিলাম। এতোগুলো মানুষের জীবন গ্রিল ভাঙতেই হবে। এরপর অনেক চেষ্টার পর গ্রিল দেয়াল থেকে খুলে যায় আর একে একে ৩২ জন লোক বের হয়ে আসতে পারি। ততক্ষণে ফায়ারের লোকজনও চলে আসে। দুজন নারী আসতে পারছিলেন না। পরে ফায়ার কর্মীরা তাদের উদ্ধার করেন।’

মামুন বলেন, এরপরেও তার অফিসের ১০ জন মারা গেছেন বলে পরে জানতে পারেন।

সারাবাংলা/ইউজে/এসএমএন

এফআর টাওয়ারে আগুন বেঁচে ফেরার গল্প

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর