শাহজালালে জব্দ মাদক কোথায় যায়?
১ এপ্রিল ২০১৯ ০৭:৫৬
ঢাকা: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় জব্দ করা হয় বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। জব্দ করা মাদকদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে, ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন, কোকেন, মদ ও নিউ সাইকোট্রপিক সাবসট্যান্সেস (এনপিএস-খাট)। কিন্তু জব্দ করার পর এসব মাদকের পরিণতি কী হয়, বিষয়টি নিয়ে সারাবাংলা’র অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বেশকিছু গুরুত্ব তথ্য।
শাহজালাল বিমানবন্দরে সাধারণত যেকোনো সংস্থা মাদকদ্রব্য জব্দ করলেও দুটি সংস্থা বিচার কাজ পরিচালনা করে। এর একটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও দ্বিতীয়টি পুলিশ।
বিমানবন্দর থানা সূত্র জানায়, শাহজালাল বিমানবন্দরে কোনো সংস্থা মাদকদ্রব্য জব্দের পর আলামত ও আসামিসহ তাদের হাতে বুঝিয়ে দেয়। এরপর মাদকের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ অনুযায়ী আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। আর জব্দ হওয়া মাদক থানার মালখানায় রাখা হয়।
একইসঙ্গে আদালতের জন্য কিছু আলামত রাখা ছাড়াও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বা রাসায়নিক পরীক্ষাগার সিআইডিতে ল্যাব টেস্টের জন্য পাঠানো হয়। তবে মাদকের পরিমাণ বেশি হলে আসামিকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করলে আসামিকে আবার থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এদিকে, আসামিকে আদালতে সোপর্দের পাশাপাশি মাদকদ্রব্য ধ্বংসের জন্য আদালতের অনুমতি চান তদন্ত কর্মকর্তা। সাধারণত আদালতে সপ্তাহে দুদিন (রোববার ও বুধবার) মাদকদ্রব্য ধ্বংস করা হয়ে থাকে। সেখানে বিভিন্ন সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন। অন্যদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আদালতে চার্জশিট বা চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বলছে, বিমানবন্দরে কোনো মাদক জব্দ করা হলে প্রথমত আটককারী সংস্থা মাদকের জব্দ তালিকা করে। এরপর আটককারী সংস্থাকে বিমান বন্দরের পক্ষ থেকে আরও একটি জব্দ তালিকা দেওয়া হয়। তখন বিমানবন্দর থানায় আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এরপর মাদকগুলো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের হেফাজতে রাখা হয়। পাশাপাশি অধিদফতরের ল্যাবে মাদকগুলো পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। একইসঙ্গে আসামিকে থানায় বা আদালতে পাঠানো হয়।
এই সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করার জন্য অধিদফতরের একজন সাব-ইনস্পক্টর বা ইনস্পেক্টরকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে আসামিকে হাজির করার পাশাপাশি মাদকের জব্দ তালিকাও উপস্থাপন করেন। পাশাপাশি জব্দ করা মাদক ধ্বংসের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত কেমিক্যাল টেস্টের প্রতিবেদন দেখে জব্দ হওয়া মাদকদ্রব্য ধ্বংসের অনুমতি দেন। আর যেকোনো মাদকদ্রব্য ধ্বংসের সময় সরকারের বিভিন্ন দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকেন। তবে জব্দ হওয়া মাদকদ্রব্য আদালতের নির্দেশে যেমন ধ্বংস করা হয়, ঠিক তেমনিভাবে আসামির বিচারকাজও ওই সময় আদালতে চলতে থাকে।
এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টমস হাউসের উপকমিশনার অথেলো চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শাহজালাল বিমানবন্দরে কোনো মাদকদ্রব্য জব্দ করলে সেগুলো কখনো পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি। কখনো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কাছে হস্তান্তর করি। প্রথমে মাদকের একটি জব্দ তালিকা করি। এরপর মাদক ও আসামিকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলে পুলিশ মামলা করে। তদন্ত করে। আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কাছে হস্তান্তর করলে তারা মামলা করাসহ তদন্ত শেষ করে। আমরা শুধু শাহজালালে নিয়োজিত একটি সংস্থা হিসেবে কাজ করি।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেটো উত্তরের সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘শাহজালাল কিংবা যেকোনো স্থানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কোনো অভিযান পরিচালনা করলে সেটার মামলা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। যৌথভাবে কোনো অভিযান পরিচালনা করলেও সেটার মামলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর করে। তবে মাদকের সঙ্গে যদি অস্ত্র পাওয়া যায়, তাহলে অস্ত্রের বিষয়ে মামলা করে পুলিশ আর মাদকের বিষয়টি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর দেখে। এছাড়া মামলার পরে জব্দ তালিকা করা হয়, যেখানে দুই জন সাক্ষী থাকেন। এরপর থানায় এজাহার দায়ের করা হয়।’
খোরশেদ আলম আরও বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের দায়ের করা মামলার তদন্ত করেন অধিদফতরের একজন সাব-ইনস্পেক্টর বা ইনস্পেক্টর। আর তদন্ত কর্মকর্তা ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন।’
জানতে চাইলে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন্স অ্যান্ড মিডিয়া) মো. আলমগীর হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিমানবন্দরে ইয়াবাসহ যেকোনো মাদকদ্রব্য ধরা পড়লে আমরা যথাযথভাবে জব্দ তালিকা করে জব্দ করি। মামলাসহ আসামিকে থানায় সোপর্দ করি। ’ তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ হলে পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশে ওই মাদকদ্রব্য তা নষ্ট করা হয় বলেও তিনি জানান।
সারাবাংলা/এসজে/এমআই/এমএনএইচ