শুক্রবার থেকে ‘শিশুবান্ধব’ রাঙতা মেলা
১ এপ্রিল ২০১৯ ১২:৫৯
অনেক মা-ই আছেন যারা সন্তানের কারণে চাইলেও অনেক জায়গায় যেতে পারেন না। বিশেষ করে মেলা বা বিপনীবিতানে যেখানে বেশি মানুষের সমাগম সেখানে সমস্যাটা হয় সবচেয়ে বেশি। বাচ্চা নিয়ে কীভাবে কেনাকাটা করবেন, বাচ্চার ঘুম পেলে কী করবেন, কোথায় খাওয়াবেন এসব নানা চিন্তায় নিজের প্রয়োজনেও বাইরে যান না।
সেইসব মায়েদের কথা চিন্তা করেছে মেয়ে নেটওয়ার্ক। আর তাই তো এই নেটওয়ার্ক আয়োজিত রাঙতা মেলায় একটি নির্দিষ্ট স্থান বরাদ্দ থাকে ডে কেয়ারের জন্য।
সানশাইন ডে কেয়ার এর স্টলে শিশুর নাম নিবন্ধন করে তাকে রেখে আপনি অনায়াসে ঘুরতে পারবেন গোটা মেলা। আর এজন্য ঘণ্টা হিসেবে গুণতে হবে সামান্য পারিশ্রমিক।
স্টল বলে ভাববেন না যে, ডে কেয়ার কর্তৃপক্ষ কেবল টেবিল চেয়ার নিয়ে বসে বাচ্চা সামলাবেন। মেলার এক কোণায় রীতিমতো বিছানা পেতে, খেলনা, স্লিপার ইত্যাদি নিয়ে প্রস্তুত থাকবে সানশাইন ডে কেয়ার। আপনার শিশু বরং খেলতে আর পাজল মেলাতে এতোই ব্যস্ত হয়ে যাবে যে আপনার কথা ভাবারও সময় পাবে না।
রাঙতায় থাকবে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারও। যেখানে অনায়াসেই একজন মা তার সন্তানকে বুকের দুধ পান করাতে পারবেন।
শুধু তাই নয়, রাঙতা মেলায় হুইল চেয়ার নিয়েও ঘুরতে পারবেন। শারিরীকভাবে প্রতিবন্ধিতাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তি যেন মেলায় প্রবেশ করতে পারেন, ভেন্যু হিসেবে মাইডাস সেন্টারকে নির্বাচনের পেছনে সেটাও ছিল একটা কারণ।
আগামী ৫ ও ৬ এপ্রিল ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে রাঙতা মেলার আয়োজন করেছে মেয়ে নেটওয়ার্ক। এই মেলায় কোনো পাকিস্তানী পণ্য পাওয়া যায় না। আয়োজকরা অত্যন্ত গর্ব করেই বলেন কথাটা। এটাই অন্য অনেক বৈশাখি বা ঈদ মেলা থেকে রাঙতাকে আলাদা করে।
রাঙতার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, শুধুমাত্র মেলাকে কেন্দ্র করেই নতুন নতুন পোশাক নকশা করেন ডিজাইনাররা। পটের বিবি, বিজেন্স, বুবুর বায়না, ঈহা, রেগা, রঙধনু ক্রিয়েশন, কারুজসহ বেশ কিছু অনলাইন ব্যবসার স্টলে থাকবে নতুন নতুন সব নকশার পোশাক। যা এর আগে কেউ দেখেনি।
প্রতিবারের মত এবারের রাঙতা মেলার আসরেও থাকছে শিল্পকর্মের প্রদর্শনী। চিত্রশিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গগ এর সম্মানে তার চিত্রকর্ম থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের তৈরি করা পণ্যের প্রদর্শনী চলবে মেলার পাশাপাশি। আর এই প্রদর্শনী থেকে বিক্রি হওয়া পণ্যের অর্ধেক চলে যাবে মেয়ে নেটওয়ার্কের সেবামূলক প্রকল্প সন্ধির তহবিলে।
গতবারের মতো এই রাঙতাতেও থাকবে ‘শিশুদের জন্য আমরা’ পরিবার। এই পরিবারের প্রধান হাজেরা বেগম। যিনি ৪০ শিশুর মা হিসেবে পরিচিত। এইসব শিশুদের মায়েরা হয় যৌনপেশায় না হয় বাসাবাড়িতে কাজ করেন। আর তাদের অবর্তমানে এই শিশুদের মায়ের স্নেহ দিয়ে লালন করেন হাজেরা বেগম। তার সেই শিশুদের হাতে তৈরি নানান সামগ্রীও পাওয়া যাবে রাঙতা মেলায়।
রাঙতা মেলায় ক্রেতা বা দর্শনার্থীরা কেন আসবেন? জানতে চাওয়া হলে মেলার আয়োজন ও মেয়ে নেটওয়ার্কের ভলান্টিয়ার সাবরিনা আমান রিভী বলেন, “রাঙতা আসলে শুধু মাত্র পণ্য প্রদর্শনীর মেলা নয়। রাঙতা হল প্রাণের মিলনমেলা। এখানে দারুণ সব দেশীয় পণ্য পাওয়া যাবে। এর পাশাপাশি চলবে চিত্রশিল্পী ভ্যানগগের শিল্পকর্ম থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আমাদের দেশীয় উদ্যোক্তাদের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের প্রদর্শনী। রাঙতা সম্ভবত একমাত্র মেলা যেখানে বাচ্চাদের ডে কেয়ার সুবিধা ও নার্সিং মায়েদের ব্রেস্টফিডিং এর সুবিধা আছে। এছাড়া আমাদের মেলা হুইলচেয়ার প্রবেশযোগ্য। এখানে কার্ডে কেনার পাশাপাশি সামান্য সম্মানীর বিনিময়ে বাসায় পণ্য পৌঁছে দেয়ার সুব্যবস্থা থাকছে। সব ‘মানুষের’ আমন্ত্রণ রইলো রাঙতায়।”
এবার চলুন দেখে নিই কোন কোন স্টল থাকছে রাঙতা মেলায়। বেগুনি প্রজাপতি, অংশু, আর্টোপোলিস, লাল কাজল, রংধনু ক্রিয়েশন, রেনে বাংলাদেশ, ঝর্ণা, দয়ীতা, ট্যাটু স্টাইল, বুবুর বায়না, ওয়্যার হাউজ, রানজুনি, আরুনিকা, রসুইঘর, ব্যাড হ্যাবিট, হানি বি, পুনিজ কিচেন, নগরপলাশ, খুঁত, বিজেন্স, পটেরবিবি, ক্লোজেট ডি তাতিয়ানা, দ্য ম্যালাকাইট ক্যাসকেট, কেয়ার শপ বিডি, চিহ্ন, চিত্রলেখা, সারানা, ওয়াও ফুড অ্যান্ড ক্র্যাফটস, ঈহা, কারুজ, রাঙ্গা, এগারো, সরলা, তুগুন, বক্স অব অর্নামেন্টস, লৌকিক, সুগার ক্যাসল, রেগা, কইন্যা, বোকা বাক্স, সানশাইন ডে কেয়ার, শিশুদের জন্য আমরা, নৈর্ঋতা, ফুল্লোরা, হেরিটেজ বিডি, বাংলার প্রকাশন, রংদারু ও প্রিয়তমেষু।
শুধু পোশাক বা গহনাই নয়। এবারো মেলায় মিলবে বই, বিভিন্ন ধরনের খাবার, পিঠা, ঘি, মধু, মশলা, কেকসহ নানা কিছু।
বছরের সেরা সম্ভার নিয়ে রাঙতা মেলা থাকবে আপনার অপেক্ষায়।
আরো পড়ুন: পাকিস্তানি পণ্যবিহীন এক মেলার কথা
সারাবাংলা/এসএমএন