মৃত্যুফাঁদ সদরঘাটের ইস্টবেঙ্গল সুপার মার্কেট
৪ এপ্রিল ২০১৯ ০৯:৫৫
ঢাকা: সদরঘাটের ইস্টবেঙ্গল ইনস্টিটিউশন সুপার মার্কেট ও বাণিজ্যিক ভবন। এ ভবনের নিচ তলা থেকে চার তলা পর্যন্ত শুরু সারি সারি দোকান। কাপড়ের মার্কেট হিসেবে সদরঘাট এলাকায় বিখ্যাত এটি। ভবনটিতে নেই শুধু জরুরি মুহূর্তে জীবন বাচাঁনোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
ভবনের নিচতলায় একেবারই ভেতরের দিকে কয়েকটি দোকানে চাকরি করেন, নাইম, রাজ্জাক আর রাকিব।মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) তারা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ ভবনে আগুন লাগলে বাঁচার কোনো পথ নাই। মাঝেমধ্যেই ভবনের ওপর তলায় আগুন লাগে ঝুট কাপড়ে, ধোঁয়া আর চিৎকার চেঁচামেচি দেখে সবাই রাস্তায় নামে। স্যার আমাগো বাঁচান। আগুন নেভানোর জন্য যা যা দরকার, মালিকরে বলে ব্যবস্থা করেন স্যার।’
তৃতীয় তলায় কাপড়ের দোকানে চাকরি করেন আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পুরো মার্কেট অরক্ষিত। মাঝে-মধ্যে মুল গেটে তালা লাগানো থাকে। এখানে প্রায় ১৫ হাজারের মতো লোক কাজ করে। আগুন লাগলে বড় ধরনের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। আগুন লাগলে বোঝার কোনো উপায় নেই। আগুন নেভানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই আমরা এক ধরনের আশঙ্কা নিয়েই কাজ করছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর হলো এই ভবনটি তৈরির। শুরু থেকেই ভবনটিতে অগ্নিনির্বাপণের জন্য কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। মার্কেটটিতে প্রায় ১৫০০ দোকান রয়েছে। এর মধ্যে নিচ থেকে চারতলা পর্যন্ত প্রায় এক হাজার দোকান রয়েছে। আর পাঁচ থেকে ১৫ তলা পর্যন্ত রয়েছে অসংখ্য গোডাউন আর কারখানা। একেকটি কারখানাতে ৮ থেকে ১০ লোক কাজ করতে দেখা গেছে। তারা জামায় লেইস লাগানো, পাঞ্জাবি তৈরি, প্যান্ট বানানো ইত্যাদি কাজ করছে। পুরো ভবনজুড়ে অসংখ্য ছোট বড় মেশিন বসিয়ে কারখানা তৈরি করা হয়েছে।
ভবনটি ঘুরে দেখা যায়, এতবড় একটি ভবনে মাত্র দুইটি সিঁড়ি রয়েছে। তাও সিঁড়ি দুইটি তিন ফুট সাইজের। তিনতলা পর্যন্ত একটি এক্সেলেটরের সিঁড়ি থাকলেও তা অকেজো হয়ে আছে। আবার ওপরে ওটার সিঁড়িতে কেউ চায়ের দোকান দিয়েছে। কেউবা আসবাবপত্র রেখে চিকন সিঁড়িকে আরও ছোট করেছে। ওপরে কারখানাগুলোর আশেপাশে ঝুট কাপড় দিয়ে ভরা। একইসঙ্গে সিগারেট খেয়ে ওইসব ঝুটের মধ্যেই ফেলছে অনেকেই। সেখান থেকেই নাকি কয়েকদিন পরপর আগুন লেগে থাকে।
আরও পড়ুন- সদরঘাটের ইস্টবেঙ্গল মার্কেট ‘অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা
ফায়ার সার্ভিসের সদরঘাট স্টেশনের ইনচার্জ মাহমুদুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটি ভবনের অগ্নিনিরাপত্তার জন্য যা থাকা দরকার তার ন্যূনতম একটিও নেই। আগুন লাগলে প্রথমে সবাইকে বেরিয়ে আসার জন্য বলতে হবে, সে জন্য দরকার ফায়ার এলার্ম, সেটি এই ভবনে নেই। হোস পাইপ নেই, বেজমেন্টে জলাধার নেই, ফায়ার হাইড্রেন্ট নেই, নিজস্ব পাম্পের কোনো ব্যবস্থা নেই, জরুরি বহির্গমন পথ নেই, কোথাও এক্সটিংগুইশার রাখা নেই। ফায়ার বক্স আছে কিন্তু সেখানে কোনো কিছু নেই।’
তিনি বলেন, ‘এরকম একটি ভবনে আগুন নেভানোর মতো কোনো কিছু নাই, তাহলে কেন বলব না যে, এ ভবনটি মৃত্যুফাঁদ নয়। এখানে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে হাজার হাজার লোক হতাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। প্রতিদিন তো কাস্টমারই থাকে কয়েকহাজার। দোকানের লোকজন তো আছেই। তাই আমরা ভবনটিকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ব্যানার দিলাম। অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা সাপেক্ষেই কেবল এই ব্যানার খুলে দেওয়া হবে।’
সদরঘাট ফায়ারের ইনচার্জ মাহমুদুল হাসান আরও বলেন, ‘গত ডিসেম্বর রাত ১ টার দিকে এ ভবনের ৮ তলায় আগুন লেগেছে খবর ৫ টি ইউনিট এসে দেখি, ঝুট কাপড়ে আগুন গলিতে জ্বলছে। পরে আগুন নেভানোর মতো পানি নেই। পাশের স্কুলের রিজার্ভার থেকে পানি নিয়ে আগুন নির্বাপণ করি। আট তলায় কারখানার ছেলে বাইরে বের হলে আগুন দেখতে পেয়ে চিৎকার করেছিল।’
এদিকে আট তলায় উঠতে গিয়ে দেখা যায়, সিঁড়ির কাছেই ফায়ার বক্স আছে। তবে ফায়ার বক্সে এক্সটিংগুইশার বা হোস পাইপ কিছুই নেই। বক্স খুলতেই চোখে পড়ে বিস্কুট, চিপস আর চকলেটের খালি প্যাকেট। এটাকে ময়লার ড্রাম ভেবে কেউ ব্যবহার করেছে।
মার্কেটের ব্যবসয়ী সমিতির সাধরণ সম্পাদক হাজী শফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মার্কেটটি মালিকপক্ষ একটি কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালনা করেন। অগ্নিনিরাপত্তার জন্য কেন ব্যবস্থা রাখা হয়নি, তা নিয়ে কথা বলব। অচিরেই এ সব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/ইউজে/একে