রাসেলকে ক্ষতিপূরণ দেবে না গ্রিনলাইন, একাট্টা পরিবহন মালিকরা
৪ এপ্রিল ২০১৯ ১১:৩৫
ঢাকা: গ্রিনলাইন বাসের চাপায় পা হারানো প্রাইভেটকারের চালক রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি নয় পরিবহন কোম্পানিটি। এ বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল করেছিল তারা। সে আপিল খারিজ হয়ে গেলে ৩ এপ্রিলের মধ্যে এই ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল গ্রিনলাইনের। যদিও সেই টাকা তারা দেয়নি। এখন তারা রিভিউ পিটিশন দাখিল করে সর্বোচ্চ আদালতের সুবিবেচনার আশা করছে। পাশাপাশি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমেও বিষয়টি সুরাহার আশায় রয়েছে তারা।
এদিকে, পা হারানো রাসেলকে ক্ষতিপূরণ দিতে আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার (১ এপ্রিল) দেশের পরিবহন সেক্টরের নেতারা একটি বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। ওই বৈঠকে তারা একজোট হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, জরিমানা না দিয়ে বিষয়টি সমাধান করা হবে। তবে এ ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বহালের বিষয়টি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন পরিবহন খাতের শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, যে রায় দেওয়া হয়েছে তা পরিবহন খাতের জন্য অশনি সংকেত। এমন রায়ের পর কোনো পরিবহন ব্যবসা দেশে চলতে পারবে না। বড় বড় পরিবহন মালিকরা আশঙ্কা জানিয়ে বলছেন, তারাও এমন পরিস্থিতির শিকার হতে পারেন। আর তখন তাদের ব্যবসা গুটিয়ে সর্বস্বান্ত হতে হবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির এক নেতা নাম প্রকাশ না করে জানান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি ও সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ’র উপস্থিতিতে বড় বড় মালিক নেতাদের নিয়ে বৈঠকে এমনটাই আলোচনা হয়েছে। ওই বৈঠকে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কোনোভাবেই জরিমানা দেবেন না।
সূত্র বলছে, বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য সরকারের সাবেক একজন মন্ত্রী ও বর্তমান পরিবহন খাতের একজন শীর্ষ নেতা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবে। ওই বৈঠকে গ্রিনলাইন পরিবহনের মালিক মো. আলাউদ্দিন নিজেও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
বৈঠকের একদিন পর আলাউদ্দিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতির মুখে তিনি দেশের বাইরে চলে গেছেন।
গ্রিনলাইন পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার মো. আব্দুস সাত্তার সারাবাংলাকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে পরিবহন মালিকরা বৈঠক করেছেন। তারা আপিল বিভাগের একই রায় বহালের পর রিভিউয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একইসঙ্গে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের সুবিবেচনার দিকেও চেয়ে আছেন।
ক্ষতিপূরণের আদেশ বহাল
২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল রাসেল বাসচাপায় পা হারানোর পর সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি হাইকোর্টে ক্ষতিপূরণ চেয়ে একটি রিট আবেদন করেন। ওই বছরের ১৪ মে রাসেলকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। পরে গত ১২ মার্চ বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ দুই সপ্তাহের মধ্যে ৫০ লাখ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছিলেন গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষকে।
এ সংক্রান্ত রিটের পরবর্তী শুনানির জন্য ৩১ মার্চ তারিখ নির্ধারণ করেন। ওই দিন হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ। আপিল বিভাগ সে আবেদন খারিজ করে দিলে হাইকোর্টের ক্ষতিপূরণের আদেশ বহাল থাকে। সেদিন শুনানি নিয়ে তিন দিনের মধ্যে (৩ এপ্রিলের মধ্যে) রাসেল বরাবর গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দেন। গতকাল আদালতের সে সময়সীমা পার হয়েছে।
গত বছরের ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকার চালকের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেন। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
রাসেলের বাবার নাম শফিকুল ইসলাম, গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে। ঢাকার আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় তার বাসা। স্থানীয় একটি রেন্ট-এ-কার থেকে প্রাইভেট কার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি।
সারাবাংলা/এসএ/টিআর