‘২ কৌশলে খিলগাঁওয়ের আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণ ’
৪ এপ্রিল ২০১৯ ১৩:০৯
ঢাকা: একসঙ্গে সবগুলো ইউনিট ঘটনাস্থলে পোঁছা আর ফ্লাইওভারে উঠে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা-এই দুই কৌশলের কারণেই খিলগাঁওয়ের আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা গেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। আর তাই গভীর রাত ও মার্কেটের ভেতর দিয়ে আগুন নেভানোর মতো পথ না থাকা সত্ত্বেও প্রাণহানি ছাড়াই আড়াই ঘণ্টায় আগুন নিভে যায় বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সকালে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, চুড়িহাট্টা ও বনানীর আগুন থেকে শিক্ষা নেওয়া হয়েছে। রাত আড়াইটার দিকে খিলগাঁওয়ের আগুনের সংবাদ পেয়ে ১৫টি ইউনিট একসঙ্গে পাঠানো হয়। ফায়ার সার্ভিসের যত সক্ষমতা রয়েছে তার সবই নিয়ে যাওয়া হয়। গভীর রাতে রাস্তা ফাঁকা থাকায় খুব দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানোও সম্ভব হয়।
মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেন, কাজ করতে গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটের এক কর্ণারে আগুন জ্বলছে। মার্কেটের ভেতর দিয়ে যাওয়ার মতো কোনো পথ নাই। সরু গলি থাকলেও গেটগুলোতে তালা লাগানো অবস্থায় পাওয়া যায়। মার্কেটের বাইরে ফাঁকা আছে তবে সেদিকে গাড়ি প্রবেশ করানোর মতো কোনো পথ নাই। কারণ ওই দিকে রেল লাইন ছিল এবং মাকের্ট ঘেঁষে দেয়াল ছিল। এসময় কর্মীরা ফ্লাইওভারে উঠে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। আর এ কারণেই আগুন দ্রুত নিভে যায়।
আরও পড়ুন: খিলগাঁও বাজারে আগুন: কাজ করছে ১৫টি ইউনিট
তিনি বলেন, ওপর থেকে পানি ছিটানোর ফলে আগুন তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণে আসে। আরও কম সময় লাগত যদি আগুনের স্থলটি একেবারই ফ্লাইওভারের নীচ বরাবর না হতো। এই আগুন নেভানোর পর দেখা গেছে, প্রায় হাজার খানেক দোকান রয়েছে। তবে, ৪০টি মতো দোকান পুড়ে গেছে। কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। একজন সাধারণ মানুষ ও একজন ফায়ার কর্মী আহত হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন সারাবাংলাকে বলেন, যেখানে আগুন ধরেছে, সেখানে একই সঙ্গে কাপড়ের দোকান, চায়ের দোকান, হার্ডওয়ারের দোকান ও কামার পট্টিও রয়েছে। কেউ বলেছে আগুন চায়ের দোকান থেকে লেগেছে। আবার কেউ বলেছে আগুন কামারের দোকান থেকে লেগেছে। আগুনের সূত্রপাত জানার জন্য ফায়ারের তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে জানা যাবে কোথা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।
দেবাশীষ বর্ধণ আরও বলেন, পুরো মার্কেট জুড়ে কোথাও আগুন নেভানোর মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই পানির উৎস, নেই কোনো এক্সটিংগুইসার। দোকানে কোটি কোটি টাকার মালামাল তুলে রেখেছে ব্যবসায়ীরা অথচ সেই মাল আগুনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা রাখেনি।
মামুন ট্রেডার্স নামে কাপড়ের গোডাউনে ঘুমিয়ে ছিলেন রিদয় হাসনাত। আগুন আগুন বলে মানুষের চিৎকার শুনে তাড়াহুড়ো করে গোডাউনের তালা খুলে বের হয়ে আসেন। বৃহস্পতিবার সকালে রিদয় সারাবাংলাকে বলেন, কামার পট্টি থেকেই আগুনের সুত্রপাত হয়েছে। আমি বের হয়ে দেখেছি কামার পট্টির ঘরগুলো আর তার পাশে থাকা হার্ডওয়ারের দোকান পুড়ছে। এরপর চায়ের দোকান থেকে শুরু করে আশেপাশের সব দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফ্লাইওভারের ওপর থেকে এতো বেশি মারা হয়েছে যে মুহুর্তেই আগুন নিভে যায়। না হলে এই মার্কেটের ভেতরে যতো দোকান আছে তার সবই পুড়ে ছাই হতো।
পাশে থাকা একটি হাড়ি পাতিলের দোকান পুড়ে ছাই হয়েছে। ওই দোকানের ম্যানেজার ইমাম হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, দোকানে সব সময় অন্তত ১০ লাখ টাকার মালামাল থাকত। এই মার্কেট ও আশেপাশের যতো কাস্টমার আছে সবাই এক নামে চিনত দোকানটিকে। এক রাতেই আগুনে সব নি:স্ব হয়ে গেছে। দোকানের ভেতর দুজন ছেলে থাকত। আগুন টের পেয়ে তারা বের হয়ে যায়। না হলে আরও বিপদ হতো। খবর পেয়ে অনেক দোকানদার এসে তাদের মালামাল বের করতে পারলেও আমরা পারিনি।
মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, ওপরে টিনশেড আধাপাকা বিশাল এই মার্কেটে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ চাহিদা মেটানোর সব ধরণের জিনিস পাওয়া যায়। খিলগাঁও, সবুজবাগ ও শাহজাহানপুরসহ আশেপাশে সব মানুষ তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা এই মার্কেট থেকেই পূরণ করেন। মার্কেটটির পূর্ব উত্তর কোণে রেল লাইন ঘেষা অংশে আগুন ধরে ৫০টি দোকান পুড়ে যায়। ব্যবসায়ীদের ধারণা, আগুনে পুড়ে ক্ষতি হয়েছে অন্তত কয়েক কোটি টাকা।
মার্কেটের ভেতরে আগুন নেভানোর মতো কোনো ব্যবস্থাই রাখা হয়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক অলি আহমেদ সরদার বলেন, কয়েকদিন ধরে আগুন নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। আজ কালের মধ্যেই বসে আগুন নেভানোর জন্য করণীয় সব ঠিক করার কথা ছিল। তার আগেই আগুনে অনেকের স্বপ্ন শেষ করে দিলো। যাই হোক এরপরেও মার্কেটকে রক্ষার স্বার্থে আগুন নেভানোর জন্য যা যা করণীয় তা করা হবে। ফায়ার সার্ভিসের পরামর্শ মতে সব ধরণের ব্যবস্থা রাখা হবে।
এদিকে, ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকাল ১১টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা করতে দেখা গেছে। মেয়র বা অন্য কোনো সংস্থার কাউকে দেখা যায়নি। ব্যবসায়ীরাও জানিয়েছে, জেলা প্রশাসন ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আর কেউ দাঁড়াননি।
সারাবাংলা/ইউজে/জেএএম/জেডএফ