Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘৩ ঋণখেলাপির কারণে মূলধন সংকটে পড়তে পারে ২১ ব্যাংক’


৪ এপ্রিল ২০১৯ ১৩:৫১

ঢাকা: দেশের তিন জন বড় ঋণগ্রহীতা যদি ঋণখেলাপিতে পরিণত হন  বা তাদের প্রতিষ্ঠান আর্থিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে, তাহলে ২১টি ব্যাংক মূলধন সংকটে পড়বে। এমন ঋণগ্রহীতার সাত জন ঋণখেলাপি হলে ৩১টি এবং ১০ জন খেলাপি হলে ৩৫টি ব্যাংক মূলধনের সংকটে পড়বে। তাদের মূলধন মাপকাঠির নিচে নেমে যাবে।

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদন প্রকাশের সময় বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন এসব কথা বলেন। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের মুদ্রানীতির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হলো ব্যাংকিং খাত, যার মাধ্যমে আমরা মুদ্রানীতি পরিচালনা করি। সেই খাতে বেশ কিছু দুর্বলতা আগে থেকেই ছিল। ইদানীং সেই দুর্বলতা আরও বেড়েছে। এই দুর্বলতা আসলে কতটা গভীর, এই দুর্বলতা নিয়ে আপনি কতটা উদ্বিগ্ন হবেন? এটা কি শুধু আকাশের মেঘ, নাকি বজ্রপাত— এটা বুঝতে হবে। এটা বুঝার যে স্টেশন, তা হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদন কিছু বিশ্লেষণ বলা হয়েছে, আমাদের দুর্বলতার প্রধান জায়গা হলো খেলাপি ঋণ।

আরও পড়ুন- এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৭.৩ শতাংশ, পূর্বাভাস বিশ্বব্যাংকের

জাহিদ হোসেন বলেন, ব্যাংকগুলোর আরেকটি দুর্বলতা হলো আমরা বড় বড় যেসব ঋণগ্রহীতাকে ঋণ দিচ্ছি, তাদের ব্যবসায় যদি কোনো দুর্যোগ দেখা দেয়, তাহলে কী হবে? ব্যাংকিং খাতে তার কী প্রভাব কী হতে পারে? বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ৩ জন, সাত জন ও ১০ জন বড় ঋণগ্রহীতা ঋণখেলাপি হয়ে যান, তাহলে ২১, ৩১ ও ৩৫টি ব্যাংক তাদের মূলধনে ঘাটতিতে পড়ে যাবে।

জাহিদ হোসেন বলেন, ব্যাংকগুলো যে ঋণ দেয় তার বিপরীতে কিছু জামানত নেওয়া হয়। এই বন্ধকি জামানত যদি বিক্রি করে খেলাপি ঋণ আদায় করা হয়, তাহলে কী হবে? তিনি বলেন, এই জামানতের যদি ১০, ২০ ও ৪০ শতাংশ মূল্য কমে যায় তাহলে ২, ৫ ও ৯টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়বে। সব মিলিয়ে যদি ব্যাংকের ঝুঁকি পর্যালোচনা করি, তাহলে চিত্রটি অনেক গভীর বলা যায। সব মিলিয়ে বলা যায়— ব্যাংকিং খাতে কালো ঘন মেঘ ঘূর্ণিঝড়-তুফানে পরিণত হতে পারে। তার মানে হলো আর্থিক খাতে দুর্বলতা আছে।

অনুষ্ঠানে ব্যাংকিং খাতকে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সবচেয়ে বড় দুর্বলতার জায়গা বলে অভিহিত করেন জাহিদ হোসেন। তিনি খেলাপি ঋণকে এই খাতের প্রধান সমস্যা বলে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংকিং খাতে বড় বড় ঋণখেলাপি রয়েছে। তাদের ঋণ বারবার পুনঃতফসিল করতে দেওয়া হচ্ছে। একেকজনকে তিন-চার বার করে ঋণ পুনঃতফসিল করতে দেওয়ার মাধ্যমে আর্থিক খাত, বিশেষ করে ব্যাংক দুর্বল হচ্ছে। এভাবে পুনঃতফসিলের কোনো যৌক্তিকতা নেই।

সম্প্রতি ঋণখেলাপিদের ৯ শতাংশ সরল সুদে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দিতে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার সমালোচনা করে জাহিদ হোসেন বলেন, এভাবে ঋণ পরিশোধের সুযোগ করে দেওয়া হলে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়বে। ববারবার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার পরিবর্তে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন তিনি।

৯৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘এত ঋণের সবই কি অনিচ্ছাকৃত?’ সব খেলাপি ঋণকে অনিচ্ছাকৃত বলা যাবে না বলে মত দেন জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, গত ১০-১৫ বছরে দেশে এমন কিছু (বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বড় ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা) ঘটেনি যে বারবার ঋণ পুনঃতফসিল করতে হবে। এভাবে পুনঃতফসিল করা হলে ব্যাংকগুলো লোকসানে পড়ে যাবে।

আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া উচিত মত দিয়ে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের এই লিড ইকোনমিস্ট বলেন, বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক যেন ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের কাজে যেন হস্তক্ষেপ না করা হয়।

অর্থনীতিতে ২ দুর্বলতা

অনুষ্ঠানে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ না বাড়া ও রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতাকে দেশের অর্থনীতির বড় দুইটি দুর্বলতার জায়গা হিসেবে অভিহিত করা হয়।

জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে যে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তাতে শিল্প খাতের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। তবে দুর্বলতার জায়গা হলো ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ। তবে এই খাতে যে বিনিয়োগ হচ্ছে না, তা নয়। তবে প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগ এই খাতে হচ্ছে না। সামষ্টিক অর্থনীতি মোটামুটি স্থিতিশীল হলেও বেশ কিছু দুর্বল জায়গা রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান হলো ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ ও রাজস্ব খাতের আয়ের দুর্বলতা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে আমরা প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কিছুটা কমেছে। তবে আমাদের মতে, অগ্রাধিকারভিত্তিতে সংস্কারের ধারাবাহিকতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আর্থিক খাত ও রাজস্ব খাত, অবকাঠামো, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং ব্যবসায়িক পুঁজি বিনিয়োগে।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের এবারের প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আর্থিক খাতের রেগুলেটরের সংস্কারে। এ বছরের প্রবৃদ্ধিতে বেশকিছু পরিবর্তন দেখা গেছে, অতীতে প্রবৃদ্ধি বেশি হয়েছে দেশীয় বাজারভিত্তিক উৎপাদনে। তবে এবারের প্রবৃদ্ধি রফতানি খাতভিত্তিক হয়েছে। বিশেষ করে পোশাক খাত ও পোশাক বহির্ভূত খাতে প্রবৃদ্ধি গত বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে। শিল্প খাতে প্রতি মাসে ১ শতাংশ করে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সে হিসাবে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে শিল্প খাতে। তবে এই খাতে দেশীয় উৎপাদনে প্রধান বাধা ছিল বিদ্যুৎ সরবরাহ। বিশেষ করে দেশীয় উৎপাদনের ক্ষমতা ব্যবহারে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদন। তবে ইদানীং উল্লেখযোগ্য হারে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। মাথাপিছু বিদুৎ উৎপাদন গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে ২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯ সালের পর বেড়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হারে। বিদ্যুৎতের এই উৎপাদন বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে ভূমিকা রেখেছে।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর