Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কর্ণফুলীতে ৭ দিনের মধ্যে উচ্ছেদ শুরু না হলে আদালত অবমাননার মামলা


৪ এপ্রিল ২০১৯ ১৯:৫৩

আইনজীবী মনজিল মোরশেদ

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম সাতদিনের মধ্যে আবারও শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন এ সংক্রান্ত উচ্চ আদালতে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরশেদ। অন্যথায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ নিয়ে তিনি হাইকোর্টে যাবেন বলেও জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে কর্ণফুলী নদী পরিদর্শন করেন মনজিল মোরশেদ। এরপর বিকেলে তিনি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

দুই মাস আগে কর্ণফুলী নদীর তীরে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর পর প্রথম ধাপের কাজ শেষে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসন বলছে, উচ্ছেদের পর উদ্ধার হওয়া ভূমির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মহাপরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে। সেজন্য উচ্ছেদে সাময়িক বিরতি দেওয়া হয়েছে।

এই অবস্থায় নয় বছর আগে জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট করে কর্ণফুলী নদীর পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের আদেশ নিয়ে আসা আইনজীবী মনজিল মোরশেদ চট্টগ্রামে আসেন। দুপুরে কর্ণফুলী নদী পরিদর্শনের পর তিনি জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

মনজিল মোরশেদ বলেন, ‘কথা বলে বুঝতে পারলাম, এখানে কিছু জটিলতা আছে। সেজন্য উচ্ছেদ কার্যক্রমটা বন্ধ হয়ে গেছে। আমি জেলা প্রশাসন ও বন্দরের কর্মকর্তাদের বলেছি যে, হাইকোর্টের নির্দেশনাটা বাইপাস করার বা সেটা থেকে দূরে থাকার কোনো সুযোগ নেই। যদি থাকেন, তাহলে আপনাদের আদালত অবমাননার মুখোমুখি হতে হবে।’

‘সর্বোপরি আমি বলেছি, সাতদিনের মধ্যে যদি তারা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু না করে, তাহলে আদালত অবমাননার বিষয়ে হাইকোর্টে আবেদন করব। তখন তাদের জবাবদিহি করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

উচ্ছেদে জটিলতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বড় সমস্যাটা হচ্ছে, নদীর তীরের অবৈধ স্থাপনার জরিপটা হয়েছিল ২০১৫ সালে। তখন যে তালিকাটা হয়েছিল, এর বাইরে গত চার বছরে আরও অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এখন তালিকায় থাকা একটি উচ্ছেদ করতে গেলে তো পাশেরটিও উচ্ছেদ করতে হচ্ছে। কিন্তু সেটি তো তালিকায় নেই।’

‘আমি বলেছি- হাইকোর্টের নির্দেশনা যেভাবে আছে, সেভাবে উচ্ছেদ করতে হবে। নতুন যেসব স্থাপনা আছে সেগুলোর বিষয়ে আবার হাইকোর্টের নির্দেশনা চাইব। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সেগুলোও উচ্ছেদ করতে হবে।’,

আরও একটি জটিলতা আছে উল্লেখ করে মনজিল মোরশেদ বলেন, ‘এর আগে যেগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছিল, সেগুলো ছিল জেলা প্রশাসনের খাস খতিয়ানভুক্ত। কিন্তু এর মধ্যে বড় একটা জায়গা আছে, যেটা মূলত বন্দরের। সেখানে কয়েক হাজার লোক আছে। তাদের পেছনে রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়া আছে। সে কারণে প্রশাসন ভয় পাচ্ছে। যারা উচ্ছেদ করতে গেছেন, তাদের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তারা ভয় পাচ্ছেন, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আমি বলেছি, এই নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি আমি আদালতের নজরে আনব।’

তিনি আরও বলেন, ‘বন্দরের এলাকায় উচ্ছেদ করতে হলে বন্দরের সার্বিক সহযোগিতা লাগবে। কিন্তু তাদের ওপর আদালতের কোনো প্রত্যক্ষ নির্দেশনা নাই। আগামী সপ্তাহেই আমি হাইকোর্টে আবেদন নিয়ে যাব, যেন বন্দরের উপরও একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়।’ এছাড়া আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নদীর জায়গা দখল করে স্থাপনা বানিয়ে মাছের বাজার বা অন্যকোনো বাজার বসানোর কোনো সুযোগ নেই বলেও জানিয়েছেন মনজিল মোরসেদ।

তিনি বলেন- ‘নদীর তীরে অনেকসময় মাছ বিক্রি হয়, সবজি বিক্রি হয়। এটা তো বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে, সেটাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু স্থাপনা তৈরি করে বাজার বসানোর সুযোগ নেই।’

চট্টগ্রাম নগরীর চাক্তাই খালের পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়েও আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জনস্বার্থে বিভিন্ন রিট করে আলোচনায় থাকা এই আইনজীবী। কর্ণফুলী নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষ্ক্রিয় ভূমিকারও কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি।

মনজিল মোরশেদ বলেন, ‘পরিবেশ অধিদফতর একেবারে অকার্যকরভাবে কাজ করছে। নদী দখল করে এতগুলো স্থাপনা গড়ে উঠল, পরিবেশ অধিদপ্তর কি কিছুই দেখল না ? তাহলে এই অধিদপ্তর থেকে লাভ কি ? নদী-পাহাড় মনিটরিং করা তাদের দায়িত্ব। অথচ তারা তাদের দায়িত্ব পালন না করায় আমাদের আদালতে যেতে হয়।’

কর্ণফুলী নদী পরিদর্শনের সময় মনজিল মোরশেদের সঙ্গে উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান মুক্ত এবং চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান ছিলেন।

২০১০ সালের ১৮ জুলাই হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে জনস্বার্থে করা রিট আবেদনে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ নদী দখল, মাটি ভরাট ও নদীতে সবধরণের স্থাপনা বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। একইসাথে আদালত স্থানীয় প্রশাসনকে নদীর প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতে বলে।

আদালতের নির্দেশের পর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করে। এ নদীর প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ করতে গিয়ে ২১৮১টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে ২০১৫ সালের নভেম্বরে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

এরপর চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলীর তীরে নগরীর সদরঘাট থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হয়। টানা পাঁচদিন অভিযান চালিয়ে ২৩০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে ১০ কিলোমিটারেরও বেশি ভূমি দখলমুক্ত করা হয়। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম পর্যায়ের অভিযান। কার্যত এরপর থেকে বন্ধ আছে উচ্ছেদ কার্যক্রমও।

সারাবাংলা/আরডি/এমআই

উচ্ছেদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর