মাদরাসাছাত্রীকে হত্যাচেষ্টা: বোরখা পরা ৪ জনকে খুঁজছে পুলিশ
৭ এপ্রিল ২০১৯ ১৯:০০
ঢাকা: ফেনীর সোনাগাজীর একটি পরীক্ষাকেন্দ্রে মাদরাসাছাত্রীর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের মাঠে নেমেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এরইমধ্যে একজন সহকারী শিক্ষকসহ দুজনকে আটক করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি, চালানো হচ্ছে দফায় দফায় অভিযান।
রোববার (৭ মার্চ) দুপুরে ফেনী জেলা পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রীটিকে ছাদে ডেকে নেওয়া থেকে শুরু করে আগুন দেওয়া পর্যন্ত ঘটনাটি দেখেছেন, এমন কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই। এমনকি ওই ছাত্রীও কিছু বলতে পারছেন না যে, যারা আগুন দিয়েছে বা তার আগে মারধর করেছে, এমন কাউকে তিনি চিনতে পেরেছেন কি না। এরপরও আমরা বিষয়টি এমনভাবে নিয়েছি যে, এর রহস্য উদঘাটনে সর্বোচ্চপর্যায় থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে। এরইমধ্যে ওই মাদরাসার একজন সহকারী শিক্ষকসহ দুজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের নিবিড়িভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর বাইরে মাঠে গোয়েন্দারা সব বিষয়ে নজরদারি করছেন।’
রোববার বিকেলে পুলিশ সদর দফতরের একজন এডিশনাল ডিআইজি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনিও ঘটনার ব্যাপারে রহস্য উদঘাটনের জোর তৎপরতার কথা বলেন। ঘটনাটি সর্বোচ মহল থেকে তদারকি করা হচ্ছে বলে পুলিশ সুপারকে জানান এডিশনাল ডিআইজি।
আগুন লাগিয়ে মাদরাসাছাত্রীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় অধ্যক্ষ বরখাস্ত
ফেনী জেলা পুলিশ সুপার বলেন, রোরখা পরে যে চারজন মেয়েটির গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়, তাদের পরিচয় নিশ্চিত করার কাজ চলছে। কারণ সকাল ৯টার পর যেকোনো পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত থাকে। পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষা কাজে সংশ্লিষ্টরা ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারেন না। যদি বাইরের কেউ প্রবেশ করে থাকেন, তাহলে কারা এবং কীভাবে প্রবেশ করলেন আর বেরই বা হলো কী করে? আবার পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেতরের কেউ যদি এ কাজ করে থাকেন, তাহলে তারা কারা? এত মানুষের সামনে কীভাবে ওই শিক্ষার্থীকে ডেকে নেওয়া হলো? কেউ দেখলো না? গায়ে আগুন দেওয়ার পর জড়িতরা কোথায়, কীভাবে গেলো? চিৎকার করার পর কারা প্রথম গেলেন? গিয়ে কি কাউকে দেখতে পেলেন না? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তদন্ত চললে বলে জানান পুলিশ সুপার। সব সত্য বের হয়ে আসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম সরকার আরও বলেন, ‘এর আগে মাদরাসার অধ্যক্ষ মেয়েটিকে শ্লীলতাহানি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি এখন কারাগারে। তার ইন্ধনে বা উস্কানিতে বা তার হয়ে কেউ এ কাজ করেছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সব কিছু পুঙ্খানুপুঙ্খানুভাবে যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। আসলেই তারা বোরখা পরিহিত ছিল না কি সাধারণ পোশাকে ছিল তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আশা করি এর রহস্য উদঘাটন করা যাবে।’
৭৫ শতাংশ পুড়ে গেছে সেই শিক্ষার্থীর
এদিকে আগুনে শরীরের ৮০ শতাংশ ঝলসে যাওয়া মাদ্রাসাছাত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তার চিকিৎসার জন্য গঠন করা হয়েছে ৮ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড।
শনিবার (৬ এপ্রিল) সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান ওই শিক্ষার্থী। পরে সেখানে তাকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের দাবি, পরীক্ষার হল থেকে তাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বোরখা পরা চারজন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ার চাপ দেয়। ওই শিক্ষার্থী মামলা তুলতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
সারাবাংলা/ইউজে/এসএমএন