নারী নির্যাতন দমন আইনের ‘আপস অযোগ্য’ ধারা সংশোধনের আদেশ
১০ এপ্রিল ২০১৯ ২০:২৭
ঢাকা: নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ‘জামিন অযোগ্য’ (১১-গ) একটি ধারা সংশোধনের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আদেশে আইন মন্ত্রণালয় ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ৬ মাসের মধ্যে এই সংশোধন করতে বলা হয়েছে। সাত বছর আগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা এক মামলার আপিল শুনানির সময় বুধবার (১০ এপ্রিল) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
একইসঙ্গে ধারাটি সংশোধনের আগ পর্যন্ত দেশের সব নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারককে এ ধারায় মামলা করা কোনো দম্পত্তি আপস করতে চাইলে তাদের সুযোগ দিতেও বলেন হাইকোর্ট।
প্রসঙ্গত, সাত বছর আগে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক ও নারী নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছিলেন চট্টগ্রামের একজন নারী। ওই মামলার বিচার শেষে স্বামীর তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন আদালত। তবে রায় ও জরিমানার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি মামলা করেন ওই স্বামী। মামলা চলমান অবস্থায় এই দম্পতি আপস-মীমাংসা করেন। ইতোমধ্যে তাদের একটি সন্তানও হয়েছে।
আড়াই মাস বয়সী ওই সন্তানকে তারা হাইকোর্টে হাজির হন।
আদালতে স্ত্রীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী হাসান মাহমুদ খান, স্বামীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সামিউল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ।
পরে আইনজীবী ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ বলেন, ‘‘সাত বছর আগে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করে ছিলেন এক নারী। সেই মামলায় তার স্বামীর তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তবে রায় ও জরিমানার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন সেই স্বামী। হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে জামিনও নেন তিনি। আদালতে মামলা চলার সময়ে তাদের আবার মধ্যে মীমাংসা হয়ে যায়। এই দম্পতি এখন সংসারও করছে। কিছুদিন আগে তাদের একটি সন্তানও হয়েছে। আজ মামলার শুনানির সময় আড়াই মাস বয়সের সেই সন্তান নিয়ে এসেছে এ দম্পতি। আদালত দেখলেন যে, এই ধারা ‘আপস অযোগ্য’ হওয়ায় একদিকে মামলা চলছে, অন্যদিকে তারা সংসারও করছেন। দুজনের জন্যই এটা বিব্রতকর অবস্থা। এ কারণেই আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওই সাজার রায়টি বাতিল করেন।’’
একই সঙ্গে নারী শিশু নির্যাতন আইনের আপস অযোগ্য ১১(গ) ধারা ৬ মাসের মধ্যে সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছেন বলেও এই আইনজীবী জানান।
প্রসঙ্গত, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (গ) ধারায় উল্লেখ আছে, ‘যদি কোনো নারীর স্বামী অথবা স্বামীর পিতা, মাতা, অভিভাবক, আত্মীয় বা স্বামীর পক্ষের কোনো ব্যক্তি যৌতুকের জন্য কোনো নারীকে সাধারণ জখম করেন, তাহলে দায়ী ব্যক্তি অনধিক তিন বছর কিন্তু অন্যূন এক বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং উক্ত দণ্ডের অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন। এই ধারাটি জামিন অযোগ্য।’
সারাবাংলা/ এজেডকে/এমএনএইচ