শিশুমৃত্যু ভাবায়, বিচলিত করে, তাই এসেছি : বেকি হোর্সব্রাগ
২৫ জানুয়ারি ২০১৮ ১৭:৩৮
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা : এর আগে একনাগাড়ে ৯ কিলোমিটার সাঁতরেছিলাম, কিন্তু ১৬ কিলোমিটার সাঁতরাইনি। তবে এর জন্য আমি চারমাস ধরে প্রস্তুতি নিয়েছি, লন্ডনের অলিম্পিক পুলে সাঁতরিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করেছি। কারণ, পানিতে ডুবে কোনো শিশুর মৃত্যু হবে এটা মানা যায় না। বাকিটা নির্ভর করছে আবহাওয়ার ওপর। যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয়, তাহলে আমি সফল হবো বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ নাগরিক বেকি হোর্সব্রাগ। বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুরোধ এবং সে লক্ষ্যে তহবিল সংগ্রহ করতে বেকি এই বাংলা চ্যানেল সাঁতরাবেন।
টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন এই পুরো ১৬ কিলোমিটার যা কি না বাংলা চ্যানেল নামে পরিচিত; সেই বাংলা চ্যানেল সাঁতরাবেন বেকি।
বৃহস্পতিবার এ উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা জানান বেকি হোর্সব্রাগ। বেকি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)র এশিয়া এডিটর এবং একজন সাঁতারু।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এপির ঢাকা ব্যুরো প্রধান জুলহাস আলম, দেশের প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী মুসা ইব্রাহীম, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের সহযোগী পরিচালক ডা. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এবং বেইলি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওয়াহিদুজ্জামান।
সংবাদ সম্মেলনে বেকি বলেন, গত জুলাইয়ে একবার বাংলাদেশে এসে সিআইপিআরবির একটি প্রকল্পে শিশুদের সাঁতার শেখানো দেখে আমি অভিভূত হই। পরে জানতে পারি, বাংলাদেশে প্রতিদিন ৫০ শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়, যেখানে ইংল্যান্ডে প্রতিবছর মারা যায় ১৫ জন শিশু। এ বিষয়টি আমাকে ভাবায় তখনই সিদ্ধান্ত নিই, বাংলাদেশে সচেতনতামূলক কাজ করব, করব তহবিল সংগ্রহের কাজ।
আর সে লক্ষ্য নিয়েই আমার এবার বাংলাদেশে আসা মন্তব্য করে বেকি হর্সবাগ বলেন, বাংলাদেশে বাংলা চ্যানেল রয়েছে এটা আমি জানতাম না, জানে না ইংল্যান্ডের অনেক মানুষ। যখন ইন্টারনেট সার্চ করে পেয়ে গেলাম, তখন যোগাযোগ হলো মুসা ইব্রাহীমের সঙ্গে।
জানতে পারলাম, মুসার একটি গ্রুপ প্রতিবছর এখানে সাঁতারের আয়োজন করে থাকে নতুন সাঁতারু তৈরির জন্য। আমি এ সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইলাম না।
তবে এবারই শেষ নয়। বেকি জানালেন, তিনি তার এ কাজ অব্যাহত রাখতে চান। তিনি বলেন, পাশাপাশি এবারের যাত্রায় যদি সফল হই, তাহলে ইচ্ছে রয়েছে আগামী বছর আবার আসার। আমার সাঁতারের যে নেটওয়ার্ক রয়েছে তখন আমি তাদেরকেও নিয়ে আসব। পরিচিত করাব বাংলা চ্যানেলকে। এ টার্গেট নিয়ে এগুচ্ছি এবং পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে কাজ করব।
বেকি জানান, সাঁতরে কেবল তিনি সচেতনতাই তৈরি করবেন না, করবেন তহবিল সংগ্রহের কাজও। আর সেটা তিনি দেবেন সিআইপিআরবিকে-যারা দেশ জুড়ে শিশুদের সাঁতার শেখানোর কাজ করে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) এর সহযোগী পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রতিবছর দেশে প্রায় ১৮ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন সেক্টরে, যেমন ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া এসব রোগে শিশু মৃত্যুহার প্রায় শূন্যতে নেমে এলেও পানিতে ডুবে প্রতিদিন মৃত্যু হয় ৫০ জন শিশুর, যাদের বেশিরভাগেরই বয়স ১ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। তাই এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
বেকির এ পুরো সাঁতার কার্যক্রমে সব ধরনের টেকনিক্যাল সমর্থন দেবে দেশের প্রথম এভারেস্ট জয়ী মুসা ইব্রাহীম ও তার দল। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মুসা ইব্রাহীম বলেন, দেশে অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে যতো শিশু মারা যায়, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার তাতে সর্বোচ্চ। আর তাই এ বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা প্রয়োজন।
বেকির সাঁতারের প্রক্রিয়া কী হবে, কোথা থেকে শুরু হয়ে কোথায় শেষ হবে সে বিষয়েও জানান তিনি। মুসা বলেন, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ফিশারিজ জেটি থেকে এ সাঁতার শুরু হবে শেষ হবে সেন্টমার্টিনসে। বেকির জন্য দুইটি সার্পোট বোট থাকবে জানিয়ে মুসা বলেন, একটি গাইড বোট বেকিকে পথ দেখাবে আরেকটি থাকবে সার্পোট বোট। কারণ গাইড বোট না থাকায় এর আগে আমরা দিক হারিয়ে হয়ে কখনও মিয়ানমারের দিকে, নয়তো গভীর সমুদ্রে চলে গিয়েছি।
সাঁতারের পুরো আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে বেকি চ্যানেল পাড়ি দেবেন বলে জানান মুসা ইব্রাহীম। তিনি বলেন, এই ১৬ কিলোমিটার বা ১০ মাইল পার হতে বেকির তার সক্ষমতা অনুযায়ী খুব সম্ভবত ছয় থেকে সাড়ে ছয় ঘণ্টার মতো লাগবে।
বেকির এই সাঁতরানোর পুরোটা পথে একজন চিকিৎসক এবং একজন ফিজিওথেরাপিস্ট থাকবেন, থাকবেন মুসা ইব্রাহীমও।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনস পর্যন্ত এই ১৬ কিলোমিটার-পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুরোধে সচেতনতা এবং তহবিল সংগ্রহ করার জন্য বেকি হোর্সব্রাগসহ পুরো টিম রওনা হবেন আগামীকাল শুক্রবার। রোববার (২৮ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টায় বেকির সাঁতার শুরু হওয়ার কথা।
বেকির বাংলা চ্যানেল সাঁতরানোর পুরো কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বেইলি গ্রুপ। বেকিকে অর্থনৈতিকভাবেও সহযোগিতা করেছেন তারা।
গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আমরা খুব আনন্দিত বেকির সঙ্গে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুরোধে সচেতনতামূলক এই সাঁতার কার্যক্রমে যুক্ত থাকতে পেরে এবং ভবিষ্যতেও তারা বেকির তহবিল সংগ্রহ কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন বলে আশ্বাস দেন।
সারাবাংলা/জেএ/একে